বাতায়ন/তৈমুর
খান সংখ্যা/ছোটগল্প/৩য় বর্ষ/৩২তম
সংখ্যা/১১ই অগ্রহায়ণ,
১৪৩২
তৈমুর
খান সংখ্যা | ছোটগল্প
অদিতি চ্যাটার্জি
ভোগ
"মৈত্রেয়ী হালকা পায়ে ছুটলেন ফোন করতে, শুনলেন কাকিমা গাইছেন, মন রে কৃষিকাজ জানো না / এমন মানবজমিন রইল পতিত / আবাদ করলে ফলত সোনা..."
হেমন্তের দুপুরে আজ অন্নকূট
উত্সবের দিন চৈতন্যধামের আকাশ থেকে ঘি মিশ্রিত নানাস্বাদের সুখাদ্যের গন্ধ যখন ম-ম করে ওঠে মৈত্রেয়ীর তখন খুব ভাল লাগে। সেই ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে, কবে বাবা-মাকে হারিয়ে নিঃসন্তান কাকা-কাকিমার কাছে মানুষ
হওয়া মৈত্রেয়ীকে নিয়ে ওরা উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার অঞ্চলের কালীবাড়িতে যেতেন
অন্নকূটের দিন, কাকিমা বলতেন,
-দ্যাখ মিমি খাদ্যকে অবহেলা করিস না, যা পাবি চেটেপুটে খাস। অন্নকূট উৎসবের দিন
দ্যাখ যারাই আসছেন ধনী থেকে দরিদ্র সবাই কেমন তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছেন! আমার তো মনে
হয়, মা কালী নিজে হাতে তাঁর সব
সন্তানকে খাইয়ে দিচ্ছেন!
আজ এই ষাট ছুঁই ছুঁই বয়সে এসে
কাকিমার সব কথা সত্যি বলে মনে হয়।
এই শহরটি মৈত্রেয়ীর বড় প্রিয়, অবসরের পর এখানেই থাকবেন, বাড়িও করেছেন একটা, তবে বিয়ে করেননি।
ঘুরতে ভালবাসেন, কিন্তু কালীপুজোর সময়
নিজের শহর ছেড়ে কোথাও যেতে চান না। কাকু চলে যাওয়ার পর কাকিমা থাকেন এই
চৈতন্যধামেই, তাঁর মিমির সাথে। বিরাশি বছরে এসেও
গঙ্গার ঘাটে, বৈষ্ণবমন্দিরগুলোতে
একটা টোটো নিয়ে মাঝেমধ্যেই যান, এখন মিমিকে তাড়া
দিচ্ছেন,
-তুই বড্ড দেরি করিস রে...
মৈত্রেয়ীর মনে আজ একটু
অস্থিরতা এসেছে, আসলে মৈত্রেয়ীর
প্রতিবেশী হাসানবাবুর সতেরো বছরের মেয়ে জেসমিনকে অন্নকূট উৎসবের গল্প
করেছেন কাকিমা, জেসমিন বাবার চাকরির
বদলি সূত্রে চৈতন্যধামে এসেছে, একেবারেই শহুরে মা
নাফিসা আর মেয়ে জেসমিন।
স্বাভাবিকভাবেই ওদের
কাছে অন্নকূট উৎসবের ধারণা নেই, নাফিসা একটু প্রসাদ খেতে চেয়েছে কিন্তু জেসমিন একবার বলে
ফেলেছিল,
-আমরা মন্দিরগুলোতে যেতে পারি না না?
আসলে দুধ-সাদা অন্ন
পাহাড়ের মতো সাজানো, শাক দিয়ে চোখ, পটল ভাজার নাক দেখার ভারী ইচ্ছে মেয়েটির।
মৈত্রেয়ী বলে ফেলেছিলেন,
-ভোগ নিবেদন করা হয় মাটির পাত্রে যার সংখ্যা কোথাও পাঁচশো বা
হাজার। আসলে অন্নকূটের দিন দেবতা বিরাজ করেন খাবার রূপে।
জেসমিন-নাফিসা অবাক হয়ে
গিয়েছিল । মিমিকে গোপালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু হাসেন মিমির কাকিমা
তনুশ্রী,
-মিমি তোকে আমি ছোটবেলায় কী বলেছিলাম, এই মা কালী আমাদের নিজে হাতে খাইয়ে দেন, খাবার অবহেলা করিস না,
তাই তো!
মৈত্রেয়ী বুঝতে পারেন না
কাকিমা কী বলতে চাইছেন, একটু বিরক্তি লাগে এই
হেঁয়ালিতে।
-দেরি হয়ে যাচ্ছে কাকিমা, ঠিক করে বলো।
তনুশ্রী আবারও হাসেন,
-পাগল মেয়ে, সবটাই তো ঈশ্বরের, সেখানে তোর-আমার বলে কিছুই নেই রে মা, তৈরি হতে বল ওদের,
আজ আমরা
একসাথে প্রসাদ গ্রহণ করে, গোটা চৈতন্যধাম ঘুরে
দেখব সবাই কেমন দূর-দূরান্ত থেকে এসে তৃপ্তি সহকারে প্রসাদ গ্রহণ করছে।
মৈত্রেয়ী হালকা পায়ে ছুটলেন
ফোন করতে, শুনলেন কাকিমা গাইছেন,
মন রে কৃষিকাজ জানো না / এমন
মানবজমিন রইল পতিত / আবাদ করলে ফলত সোনা...
সমাপ্ত

বেশ হয়েছে গল্পটা। কলম শুভেচ্ছা ❤️
ReplyDeleteখুব সুন্দর। ভালো লাগছে তোর লেখা পড়তে
ReplyDelete