বাতায়ন/ধারাবাহিক
উপন্যাস/৩য় বর্ষ/৩৩তম সংখ্যা/১৯শে অগ্রহায়ণ,
১৪৩২
ধারাবাহিক উপন্যাস
অজয় দেবনাথ
মউ
[১২তম পর্ব]
"শাপগ্রস্ত এক রাজকন্যে, কাতরভাবে প্রার্থনা করছে, তার এই অভিশপ্ত বন্দিদশা ভেঙে মুক্তি দেবার জন্য। যেন বলছে বারবার “এসো মুক্ত করো… মুক্ত করো… মুক্ত করে তোমার সঙ্গে নিয়ে চলো।” মুহূর্তে ভেঙে গেল সব।"
পূর্বানুবৃত্তি সুখ তখন
ক্লাস টু। মায়ের বাঁ-হাতের তর্জনিতে সেলাই মেশিনের নিড্ল ঢুকে রক্তারক্তি কাণ্ড।
ডাক্তারের অনেক চেষ্টায় সেবার আঙুল রক্ষা হয়। এদিকে মউয়ের আচরণে সুখ ক্রমশই
সন্দিহান হয়ে পড়ে। তারপর…
মউ গানটা চালিয়ে দিয়ে বলল,
চোখ বন্ধ করে, কানে হেড-ফোন গুঁজে
গানটা একবার শুনেই গেয়ে ফেলল। সুখ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে চুপ করে শুনছিল। গান শেষ
হতেই তারিফ করে বলল,
-বাহ্ চমৎকার!
মউ লাজুক হেসে সুখকে বলল,
-থ্যাংক ইউ স্যার। গানটা নিয়ে
তোমাকে ভাবতে হবে না মশাই, সে আমি ঠিক চালিয়ে নেব। এখন বলো তো আমাকে দিয়ে নাটকটা
হবে কি? তুমি একটু গাইড করলে মনে হয় চালিয়ে নেব।
সুখ ওর কনফিডেন্স দেখে মনে মনে
খুশি হল। বলল,
-না হবার তো কোনও কারণ নেই, তুই
চাইলে, প্রয়োজনীয় সময় দিলে আর গাছে না উঠেই কাঁধি পাড়তে যদি শুরু না করিস অবশ্যই
হবে।
সুখ দ্বিধান্বিত ভাবে মউকে বলল,
-কিন্তু… এত চাপ নিয়ে পারবি তো!
আবার বলছিস মেসে চলে যাবি, নাটক করবি কখন তবে? রিহার্সাল আছে, শো আছে।
মউ অভয় দেবার ভঙ্গিতে বলল,
-সে আমি ঠিক সামলে নেব, তুমি একদম
চিন্তা কোরো না, শুধু যদি একটু আগে থেকে জানতে পারি, সুবিধা হয়।
-আগে থেকে অবশ্যই জানতে পারবি।
সেদিনের মতো মউকে বিদায় জানিয়ে
বলল,
-আমাকে একটু ভাবতে দে, তুই বরং আর
একদিন আয় তাছাড়া আজ একটু বেরোনোরও আছে।
-কবে আসব?
-তোর মোবাইল নাম্বরটা দিয়ে যা,
আমি তোকে ফোন করে ডেকে নেব।
১৬
পুরোনো কথা কিছুতেই আজ তাকে ছাড়ছে
না। সেদিন শেষপর্যন্ত ভেঙেই গিয়েছিল বাঁধ, রুখতে পারেনি। রুখতে পারেনি তার
বিশ্বাস, আদর্শ কিংবা তার মিড্ল-ক্লাস মেন্টালিটি। তিলমাত্র প্রতিরোধ ছাড়াই ভেঙে
গেল সব। শুভ্রা তো চাইছিলই। বাহাদুর আর কুক ছাড়া বাড়িতে কেউই ছিল না, অবশ্য থাকলেও
কেউ বিন্দুমাত্র ডিসটার্ব করত না।
সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত, নিরুদ্বিগ্ন
মাথায় উন্মুক্ত শরীরে তারা শৃঙ্গার করছিল। আদরে আদরে সে ভরিয়ে তুলেছিল শুভ্রাকে।
স্বর্গের পারিজাত বন থেকে যেন… যেন অনেক উঁচু পাহাড়ের চূড়া থেকে তার স্বপ্নের
রাজকন্যে দুহাত বাড়িয়ে আহ্বান করছে তাকে। সে উপেক্ষা করতে পারছে না। রাজকন্যে
স্বর্গের পরম সুখ লাভের জন্য, মুক্তিলাভের জন্য উন্মুখ। সে যেন কোনও ঋষির
শাপগ্রস্ত এক রাজকন্যে, কাতরভাবে প্রার্থনা করছে, তার এই অভিশপ্ত বন্দিদশা ভেঙে
মুক্তি দেবার জন্য। যেন বলছে বারবার “এসো মুক্ত করো… মুক্ত করো… মুক্ত করে তোমার
সঙ্গে নিয়ে চলো।” মুহূর্তে ভেঙে গেল সব। রাজকন্যের এই দুঃখ আর সে দেখতে পারছে না,
সহ্য করতে পারছে না তার এই কষ্ট।
তখন তার শরীরে যেন মহাশক্তিধর কেউ
ভর করেছে। সে হতে পারে অসুর, দৈত্য কিংবা দেবতা। কে তা সে জানে না। তবু সে যেই
হোক-না-কেন সম্পূর্ণ তার সঙ্গেই মিশে গেছে, তাকে আর ভিন্ন করতে পারছে না সুখ।
এক পরম সুখে, তৃপ্তিতে, ভাল লাগায়
সুখ মুক্ত করল তার রাজকন্যাকে, শুভ্রাকে। শুভ্রা ভাল লাগার আবেশে, সুখে, চরম
তৃপ্তিতে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল। তার শীৎকার ধ্বনি ভেসে এল… সঙ্গে সে আঁতকে
উঠল যন্ত্রণায়। রক্ত গড়িয়ে এল গিরিপথ বেয়ে। মুক্তির রক্ত, শিকল ছেঁড়ার রক্ত, পরম
সুখের সতীত্ব বিসর্জনের রক্ত। সুখের পৌরুষদণ্ড তখনও অধীর, শাসনে নয় ভালবাসায়, পরম
ভালবাসায়।
শুভ্রা ছাড়তেই চাইছিল না তার
বেষ্টন থেকে। পরম আবেশে, সুখে সুখের মাথাটা নিজের বুকে নিয়ে আদর করছিল, আলতো আলতো
চুমু খাচ্ছিল তাকে। সুখও মাথা তুলে আলতো চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছিল তার বুক, গলা, ঘাড়,
মুখ।
তাকে আরও দুদিন থাকতে হয়েছিল
শুভ্রাদের বাড়ি। জল নামেনি বরং বেড়েছিল আরও। শুভ্রার বাবা-মা হসপিটালে এমারজেন্সি
ডিউটিতে আটকে পড়েছিলেন। দুজন দুজনকে ছাড়তে চাইছিল না মোটেই। সাপের জোড় লাগলে যেমন
হয় ঠিক তেমন করেই একে অন্যের শরীরের সঙ্গে, শ্বাসের সঙ্গেও যেন লেপ্টে ছিল। মনের
সঙ্গে মনের মিল তো ছিলই কিন্তু সেদিন যেন দুটো মন সম্পূর্ণই এক হয়ে গিয়েছিল, আলাদা
সত্তা বলে অবশিষ্ট ছিল না কিছু। ডিনারের পর শুতে গিয়ে শুভ্রা সুখকে আহ্লাদ করে
বলল, তারা যেন স্বামী-স্ত্রী হয়ে গেছে। বলেই সুখের কোল ঘেঁষে সুখকে চুমু খেতে খেতে,
আদর করতে করতে আবারও দুজনে উন্মুক্ত হল। সুখ জানতে চাইল তার ব্যথা লাগবে কিনা।
শুভ্রা বলল, লাগুক। এই ভাবে চকাচকির মতো, কপোতকপোতীর মতোই দুনিয়ার বাকি সবকিছুকে
ভুলে একটা ঘোরের মধ্যে কাটল ক-দিন।
ক্রমশ

অনাবিল আনন্দে বিভোর সুখ আর শুভ্রা, প্রশ্নের পর প্রশ্ন আসে মউ তাহলে কি শুস্ক প্রেমের ডালি সাজিয়ে প্রহর গুনবে? ক্রমশঃ জটিল হচ্ছে মন। অধীর অপেক্ষায়.....
ReplyDeleteঅপেক্ষার প্রতিটি পলে শক্ত হোক সম্পর্কের বন্ধন।
Deleteস্যার আমি মউ লেখাটির একজন ভক্ত পাঠক , লেখার গুনে এই মউ , সুখ সবাই কে বড় আপন মনে হয় । বৃষ্টির জলে আটকে পরে সুখ তো নিশ্চিন্ত হয়ে শুভ্রার কাছে থাকলো কিন্তু মউ এইবার কি করবে? সেটা জানতে আগ্রহী হলাম। আর মউ কেই বা সুখ কি করে নেয় সেটা আপনার লেখার জাদু তে পড়বো বলে অপেক্ষায় রইলাম ।
ReplyDeleteসুখ আর মউকে যে আপন করে নেওয়া অবশ্যই তোমার বিশেষ কৃতিত্ব। থাক থাক বেঁচে থাক অপেক্ষা, দীর্ঘজীবী হোক...
Deleteস্যার আমি মউ লেখাটির একজন ভক্ত পাঠক , লেখার গুনে এই মউ , সুখ সবাই কে বড় আপন মনে হয় । বৃষ্টির জলে আটকে পরে সুখ তো নিশ্চিন্ত হয়ে শুভ্রার কাছে থাকলো কিন্তু মউ এইবার কি করবে? সেটা জানতে আগ্রহী হলাম। আর মউ কেই বা সুখ কি করে নেয় সেটা আপনার লেখার জাদু তে পড়বো বলে অপেক্ষায় রইলাম ।
ReplyDelete