প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

শেষ থেকে শুরু [৫ম পর্ব] | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক/২য় বর্ষ/১ ৯ তম সংখ্যা/ ৩০শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ ধারাবাহিক উপন্যাস পারমিতা চ্যাটার্জি শেষ থেকে শুরু [৫ম পর্ব...

Saturday, August 5, 2023

বর্ষা | মাল | কৌশিক চট্টোপাধ্যায়

 

বাতায়ন/গদ্য/রম্যরচনা/বর্ষা/১ম বর্ষ/১৫তম সংখ্যা/১৯শে শ্রাবণ, ১৪৩০

বর্ষা | রম্যরচনা
কৌশিক চট্টোপাধ্যায়

মাল

ব্যাপারটা এতই বহুমুখী যে কোথা থেকে শুরু করব ভেবেই পাচ্ছি না৷ শেষমেষ মহাগুরু শিবরাম (নাকি শিব্রাম) চক্রবর্তীর পদধূলি মাথায় নিয়ে শুরু করেই দিলাম৷

বছর কয়েক আগে চন্ডীদাস বাজারের মোড় দিয়ে আসছি৷ সন্ধেবেলা। দুর্গা পুজো সবে শেষ হয়েছে৷ এখন চর্তুদশী৷ আগামীকাল লক্ষ্মী পুজো৷ বেশ কিছু পসারি প্রতিমা নিয়ে হাঁকাহাঁকি করছে৷ এমন সময় চমকে উঠলাম৷ শুনি এক পসারি আরেকজনকে বলছে, "তোর ক’টা মাল বিক্রি হল?" ওই প্রতিমা বিক্রি হয়ে গেলেই ঠাকুর, নয়তো "মাল"৷

এমনিতে জিনিসপত্র বোঝাতে মাল বলা হয়৷ বলা হয় মালপত্র৷ দোকানদারেরা হামেশাই বলে, "বাবুর মালগুলো ঠিকঠাক দিবি৷ আগেকার দিনে রেলওয়েতে মালবাবু বলে একটা পোস্ট ছিল। তার কাজ ছিল মালপত্রের হিসেব রাখা। কিন্তু কখনো কখনো মেয়েদেরও মাল বলে৷ বিশেষ করে কলেজে বা তার কিছুটা পরেও সুন্দরী, ভাল মেয়ে দেখলে ছেলেরা বলে, "দ্যাখ দারুণ মাল আসছে৷" "গুরু, কী মাল পটিয়েছ!" মানে এটাই চলে আসছে, কেন জানি না৷ আবার কোনো ধুরন্ধর ছেলে বা ঝানু লোককেও মাল বলা হয়৷ "বাব্বা, উনি তো মাল লোক৷" অতএব মাল কথাটি পুংলিঙ্গ নাকি স্ত্রীলিঙ্গ বলা মুশকিল৷

আবার খুব বড়লোক মানে পয়সাওয়ালা লোক হলেও তাকে মালদার লোক বলা হয়৷ সে জীবনে মালদা না গেলেও৷ ওই জন্য লটারি সেন্টারের নাম হয় মালামাল উইকলি৷

খুব মাল কামিয়েছে মানে পয়সা কামিয়েছে৷ আবার মাল মানে বোঝা৷ বড়বাজারে কুলিরা মাল নামায় ঘাড়ে করে আর শেঠজীরা মাল কামায় গদিতে বসে৷

সর্ব শেষ আরেকরকম মালের কথা বলতেই হয়৷ তা হল মাল৷ মানে মাল খাওয়া৷ "চল আজ একটু মাল খাই৷" বললে আর বোঝাতে হবে না যে কী বলতে চাইছে৷ এ মালের ভাগ নেয়নি এমন লোক খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর৷ ব্যাপারটা এমন যে, কিছু মালদার লোক (মালদাবাসী নয়) প্লেটে কিছু মাল নিয়ে গ্লাসে করে মাল খাচ্ছে৷ তবে যারা এই কম্মটি করছে তাদের মাল আছে আর যারা এই পরিসেবা দিচ্ছে তারা মাল কামাচ্ছে৷

আজকের পৃথিবীতে সবই চলছে এই মাল কামানোর খেলা৷ মার্কস বলে গেছিলেন যে পুঁজিপতিরা মাল কামানোর নেশায় এত মত্ত থাকবে যে নিজের ফাঁসির দড়িটাও বিক্রি করতে পিছপা হবে না৷ তিনি কোনো জ্যোতিষী ছিলেন না৷ সমাজবিজ্ঞানীর দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করেছিলেন৷ আজ দেখুন লক্ষাধিক লোক মারা যাওয়া সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউন তুলে দেওয়া হয়েছে৷ ভাববেন না এ মেহনতী মানুষকে বাঁচানোর জন্য৷ শুধু এখানে নয় পৃথিবীর সর্বত্র লকডাউন তোলা হচ্ছে যাতে লোকের পকেটে মাল আসে৷ এই যে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুঃখে নেতারা চোখের জলে নদী তৈরি করে লোকগুলোকে মালের মতোই গাদাগাদি করে বিদায় করে দিচ্ছেন যেমন ভাবে লোকে আপদ বিদায় করে তা সে না করে সেই পরিমাণ মাল যদি ওদের পকেটে দিতেন তবে ওদের হয়রানি করে এভাবে আসতে হত না৷ মাল কামানোর নেশায় টলমল সবাই৷ পুঁজিপতি, সরকার, জনগণ সবাই৷ তবু তার মধ্যেই কিছু শুভবুদ্ধি সম্পন্ন লোকের দেখা মেলে যারা অকাতরে মাল বিলিয়ে যায় গরিবদের জন্য৷ তাদের লাখো সেলাম৷

মাল নিয়ে অনেক কথাই বলা যায় তবে আজ এই পর্যন্তই থাক৷ মাল কামান৷ ভাল থাকুন৷

 

সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)