প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

বার ঘরে যাই | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন /ছোটগল্প /৩য় বর্ষ/১ ৪ তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা / ২৩শে শ্রাবণ , ১৪৩২ মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছোটগল্প পারমিতা চ্যাটার্জি বার ঘ...

Wednesday, October 4, 2023

শারদ | প্রিয় বন্ধুর সাথে পুজোর আড্ডা | পিয়ালী সেন

বাতায়ন/শারদ/হলদে খাম/১ম বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১৯শে আশ্বিন, ১৪৩০

শারদ | হলদে খাম
পিয়ালী সেন

প্রিয় বন্ধুর সাথে পুজোর আড্ডা

প্রাণের বন্ধু সুচি,


বুদ্ধিটা কিন্তু দারুণ দিয়েছিস, হোয়াটসঅ্যাপের ওইটুকু স্ক্রিনে বা মেসেঞ্জারের ঘুপচি বক্সে আর যাই হোক আমাদের বিখ্যাত আড্ডাটা ভাল জমত না, তার উপর আছে কী-বোর্ডের অত্যাচার, কান শুনতে ধান শোনার মতো কাক লিখতে কাকতাড়ুয়া অটো কারেক্ট করে নেয়! তার চেয়ে স্কুলের এই পুরোনো পন্থাই ভাল- আদি অকৃত্রিম 'চিঠি।'

কুশল সংবাদ আর ফ্লোরিডার আবহাওয়া নিয়ে আজ আর কিছু জানতে চাইব না, ওসব রোজই জানছি ভার্চুয়ালি; বরং আজ একটা বিশেষ গল্প করব বলেই মেইল খুলে গুছিয়ে বসেছি। মাঝে মাঝেই নিম্নচাপের ঠেলায় প্রাণ ওষ্ঠাগত কিন্তু তার মাঝেও যখনই একটু-আধটু রোদ উঠছে, শরতের জানান দিচ্ছে আকাশ, নিউটাউনের রাস্তায় ডেইলি প্যাসেঞ্জারির সুবাদে কাশ ফুলটুলও দেখছি প্রায় রোজ। আর টিভিতে শুরু হয়ে গেছে দুর্গাপুজো স্পেশাল বিজ্ঞাপনগুলো। সেদিন এরকমই একটা বিজ্ঞাপন চোখে পড়ল- এক তরুণ তার এক বন্ধুকে নিয়ে এসেছে তাদের বাড়ির দুর্গাপুজোয়, সেই বন্ধুর সঙ্গে ছেলেটির বোনের বেশ একটি মিষ্টি মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠছে পুজোকে কেন্দ্র করে। এই বিজ্ঞাপন আগেরবারেও পুজোর সময় দেখেছি, নায়ক-নায়িকার নামও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল সবার কাছে- সুজয়দা আর পুচকি। এটা দেখেই আমাদের ছোটবেলার দুর্গাপুজোর প্যান্ডেল ভেসে উঠেছিল চোখের সামনে… সেই এক পাত্রপাত্রী যেন, শুধু এখানে বাড়ির পুজো আর ওখানে ছিল পাড়ার পুজো। তখন তো তোর সাথে দেখা হয়নি আর ফোনে এতকিছু বলার উপায়ও ছিল না, তাই এ’বছর সুযোগ পেয়েই লিখতে শুরু করেছি। অবশ্য লেখার আর একটা কারণও আছে, সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য…

পুজোয় বন্ধুদের সাথে ঠাকুর দেখার শুরু সেই ইলেভেন-টুয়েলভে পড়তে, তার আগে অবধি বাড়ির লোকের সাথেই টুকটাক ঠাকুর দেখা আর প্রায় সারাটা দিন পাড়ার প্যান্ডেলে বসেই কেটে যেত- এসব গল্প তোর সাথে আগেও হয়েছে, কিন্তু নানান তালেগোলে তোকে আমাদের পাড়ার 'সুজয়দা আর পুচকির' গল্প বলা হয়নি কোনোদিন। পাড়ার পুজোয় সবাই অংশ নিলেও দু-চারজন দাদার ঘাড়ে দায়িত্ব থাকত একটু বেশিই, অবশ্য জানি না তাদের মধ্যে কেউ কেউ যেচে এই দায়িত্ব ঘাড়ে নিত কিনা! আমাদের সিনিয়র দু-একজন দিদিও পুজোর জিনিসপত্র গোছানোতে সাহায্য করত। দেবরায় বাড়ির জেঠিমা বা অন্য কোনো কাকিমা দায়িত্ব নিতেন ভোগ রাঁধার। বেনুদা বরাবরই ঠাকুরমশাইয়ের পাশে ওনার সহযোগী হিসেবে সেই ষষ্ঠী থেকে নবমীর আরতি অবধি ডিউটি দিয়ে যেত। প্রথম প্রথম ভাবতাম দাদার কী দায়িত্ব বোধ- কেমন একহাতে নৈবেদ্য গোছানো, অঞ্জলির ফুলের জোগাড়, সন্ধিপুজোর প্রদীপ সাজানো, পদ্ম ফোটানো স-অ-অ-অ-ব করে! একটু বড় হতেই প্যান্ডেলের কোণার দিকে বেনুদার ঠিক পাশেই ওর সকল কাজের অনুপ্রেরণাকে আবিষ্কার করলাম- পিঙ্কির জেঠতুতো দিদি, আমাদের সকলের চৈতীদিদি ওরফে চৈতালি দি! বুঝতেই পারছিস এসব খুদেদের মাথায় একবার ঢুকলেই প্যান্ডেলে সিসিটিভি বসে যাবে। বেনুদা আর চৈতালিদি যতই ফিশফিশ করে, আমাদেরও ঠাকুর মঞ্চের কাছে ঘুরঘুর ততই বেড়ে যায়। আমার থেকে এক ক্লাস সিনিয়র পাপড়ি ছিল সেই সময় আমার খুব কাছের বন্ধু, সে মোটামুটি ধারাবিবরণীর দায়িত্ব সানন্দে নিজ স্কন্ধে তুলে নিয়েছিল। নানান রকম মজার ঘটনার মধ্যে একটা ঘটনা খুব মনে আছে, সেই ঘটনা নিয়ে অনেকদিন পর্যন্ত আমরা খুব ইয়ার্কি করতাম। একবার অষ্টমীর অঞ্জলি হচ্ছে- প্যান্ডেলে ভিড় করে মা, জেঠিমা, কাকুদের সাথে আমরা কচিকাঁচারাও সব অপেক্ষারত, বেনুদাও যথারীতি ফুলের ঝুড়ি হাতে তৎপর। ঠাকুর মঞ্চ ছেড়ে চৈতালিদি তখন প্রথমের সারিতে ভক্তজনের সাথে অঞ্জলির অপেক্ষায়। পাপড়ি টানাটানি করে আমাদেরও সামনে নিয়ে গেছে- ফুল দেওয়া শুরু হল, আমাদের হাতে আসছে দোপাটির কুচি নয়তো গাঁদার ছিটে, ছেঁড়া বেলপাতা, একটু তুলসী, কেউ কেউ জবা বা গোটা বেলপাতা চেয়ে নিচ্ছেন, অথচ চৈতালিদির হাতে প্রতিবার একটা-দুটো গোলাপ পাপড়ি আসছে কোত্থেকে! বেণুদার দিকে স্বাভাবিকভাবেই দৃষ্টি চলে গেল, নাহ্ হাতে তো সেই দোপাটি-গাঁদা বোঝাই ঝুড়ি; তাহলে গোলাপ আসছে কোথা থেকে! তারপর ভাল করে লক্ষ্য করে দেখি উনি সর্বসমক্ষে ধরেছেন ফুলের ঝুড়ি আর নিভৃতে, ফুলের ঝুড়ির নীচে ধরে আছেন দু’টি টাটকা লাল গোলাপ। বলাই বাহুল্য সে বছর অঞ্জলিতে আমরা কেমন মন দিয়েছিলাম। যাই হোক, ঘটনার ঘনঘটা কিছু কম ছিল না, সে-সব গল্প নাহয় আর কোনো দিন হবে।

এবার বলি আজ এই ঘটনা লেখার আর একটা কারণ। এইসব ছোটবেলার ঘটনার পরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে- যে যার নিজস্ব জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি, বেনুদা আর চৈতালিদির সম্পর্কও গেছে ভেসে (শুনেছিলাম চৈতালিদির বাড়ি থেকে বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক করা হয়েছিল, আর দিদিও পড়াশোনা নিয়ে বেশিদিন ব্যতিব্যস্ত থাকতে চায়নি, দিব্যি বিয়ে-থা করে সকলকে টা-টা করে পাড়ি দিয়েছিল শ্বশুরবাড়ি)। বেনুদা প্রথম প্রথম খুব দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়াত, মানে উশকোখুশকো চুলে, এক মুখ দাড়ি নিয়ে, তারপর শুনলাম সেও নাকি কনস্ট্রাকশন বিজনেস শুরু করেছে কারোর সাথে পার্টনারশিপে। অচিরেই তিনিও সংসারী হয়ে গুছিয়ে বসলেন। কয়েক বছর যেতে না যেতে শুনলাম ব্যবসায় টাকাপয়সা চোট হয়ে বেনুদা আবার কাতর হয়েছেন। তারপর কিছুদিন পরে দেখি দাদা পাড়ার মোড়ে এক চায়ের দোকান খুলে বসেছে। তরুণ বয়সে বেনুদার চুলগুলো ছিল ঠিক কার্তিক ঠাকুরের মতো, অফিসে আসতে যেতে একসময় দেখলাম কার্তিক-কেশ ক্রমশ ইডেন গার্ডেনের আকার নিচ্ছে। তারপর ভুঁড়িটুড়ি সমারোহে দাদা ক্রমশ কাকা হয়ে গেলেন কবে মনে নেই। চৈতালিদির কথা আমরা প্রায় ভুলতেই বসেছিলাম। পিঙ্কির মুখে দু-একবার শুনেছি দিদি নাকি কর্তা মশাইয়ের সাথে ব্যাঙ্গালোরে শিফট করে গেছেন আর তার নাকি গ্ল্যামার হয়েছে খুব খোলতাই। ব্যস ওটুকুই, তাকে চোখের দেখা হয়নি অনেকদিন। সেদিন সন্ধেবেলা একটু দোকানে বেরিয়েছি টুকিটাকি কিনতে- বেনুদাও দেখি এসেছে দোকানের জন্য চিনি নিতে। প্রচুর ভিড় দোকানে, এদিকে দাদার খদ্দেরের তাড়া রয়েছে। তাই সামনে দাঁড়ানো কিঞ্চিৎ স্থূল মহিলাকে বলে বসলেন "মাসিমা একটু সাইড দেবেন?" মাসিমা ভ্রূ কুঁচকে ঘাড় ঘোরাতেই দেখি- হরিবোল নাকি হরিবল কী বলব বুঝে পাচ্ছি না! এ যে আমাদের চৈতালিদি! প্রাক্তন প্রেমিক বুঝি এমনিই হয়, প্রথমে দেয় গোলাপের ছোঁওয়া আর পরে দেয় কাঁটার খোঁচা! কোনো ক্রমে হাসি চেপে সেদিন বাড়ি ফিরেছি আর তোকে লিখতে লিখতে এখনো হেসে চলেছি।

ভাল থাকিস। সময় পেলে লিখিস আমায়।

পিয়ালী


11 comments:

  1. কি দারুন লিখেছিস রে! আমার তো খুব ভালো লেগেছে। বেশ মজার!

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ

      Delete
  2. আমিও খুব হাসছি। দারুণ উপভোগ করলাম। সুন্দর ঝরঝরে লেখা

    ReplyDelete
  3. অনেক ধন্যবাদ

    ReplyDelete
  4. Akdom cinema ❣️

    ReplyDelete
  5. মাসিমা !!!!!

    ReplyDelete
  6. Replies
    1. অনেকটা ভালোবাসা

      Delete
  7. Darunnn 😄😄😄

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ ও ভালোবাসা জানাই

      Delete
  8. Khub valo laglo pore,

    ReplyDelete

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)