প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Saturday, December 30, 2023

রবীন্দ্রনাথকে মৃণালিনী | মহাদেব প্রামাণিক

বাতায়ন/হলদে খাম/১ম বর্ষ/২৭তম সংখ্যা/১৩ই পৌষ, ১৪৩০

হলদে খাম
মহাদেব প্রামাণিক

 

রবীন্দ্রনাথকে মৃণালিনী


প্রিয় রবি ঠাকুর,

আমি জানি এই চিঠি কোনোদিনও পৌঁছবে না তোমার কাছে, তাই এই স্পর্ধা দেখাচ্ছি। আমার একটা প্রশ্ন আছে জানি তার জুতসই উত্তর তোমার কাছে নেই। প্রশ্নটা হোলো, কেন বিয়ে করেছিলে আমায়? তোমার রক্ষণশীল এত বড় পরিবার, তাতে আমি তোমাদের কাজের লোকের মেয়ে, ভেবেছিলে সাত চড়ে রা-টি কাড়বে না তাই!

আমি জানি নতুন বৌঠানকে তুমি ভালবাসতে এখনো বাসো, তোমাদের পরিবারের অন্দরমহলের কত লাঞ্ছনা তাকে সহ্য করতে হয়েছে জানি, কত কষ্ট পেয়েছে দিনের পর দিন, তার কথা বলার সঙ্গী তুমি ছাড়া কেউই ছিল না। আমার বিয়ের তিন মাস পরেই তিনি আত্মহত্যা করলেন আমার বয়স তখন দশ কীই-বা বুঝব ওসব। আমি মানছি নতুন বৌঠানের অনেক দুঃখ অনেক কষ্ট, কখনো জানতে চেয়েছ আমার কষ্ট কীসে?


শুনেছি বিলেত যাওয়ার আগে তুমি নলিনীর প্রেমে পড়েছিলে তাকে নিয়ে লিখেছিলে "ভগ্নহৃদয়" আর "কবিকাহিনি"। বিদেশে তোমার বান্ধবীর অভাব ঘটেনি। তুমি কথায় কথায় বার বার প্রমাণ করেছ আমি গ্রামের মেয়ে, তেমন শিক্ষিত নই তোমার মনের কথা আমি বুঝব না, ঠিকই তো অনেক কবিতার মানে আমি বুঝি না, চিঠি গুছিয়ে লিখতেও পারি না। এই যে লিখেই চলেছি আবোলতাবোল।

আমার বিয়ের আট বছর কেটেছে এই আট বছরে ইন্দিরা তোমার ভাইঝি সে তোমার কাছে পেয়েছে দুশো বাহান্নটা চিঠি আর আমি পেয়েছি পনেরোটা চিঠি আর পাঁচটি সন্তান। ইন্দিরা তোমার সব কথাই বুঝত আর আমি বুঝতাম না আর বোঝাতেও চাওনি। আমার নাম তো ভবতারিণী বিয়ের পর তোমার বাড়িতে এসে হয়তো তোমার প্রেমিকার নাম নলিনী অনুকরণে আমার নাম হয় মৃণালিনী।

ভেবে নিও না এই চিঠি শুধু অভিযোগের! তোমার ব্যথা আমি একটু হলেও বুঝেছি। তোমার কাছে তোমার বিয়েটা সাধারণ, কারণ একটা অজপাড়াগাঁয়ের মেয়ের সাথে নিতান্ত নিয়মরক্ষা বা পিতৃ আদেশ! আমার কাছে বিয়েটা অনেকখানি দামি আমার বিয়ে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের সাথে সে কী কম কথা। কাদম্বরীর মৃত্যুর অনেক বছর পরেও সে তোমার পাশে পাশে থাকতে পেরেছে, "প্রকৃতির প্রতিশোধ" বইটা উৎসর্গ করে লিখলে, "তোমাকে দিলাম"। আবার "শৈশব সঙ্গীত" উৎসর্গ কলমে লিখলে, "তোমাকেই দিলাম" এই "তুমি" যে কে? তা বোঝার মতো বুদ্ধি আমার ছিল। এরপর আরও মানসী, ভানুসিংহের পদাবলী, সবই তো সেই তাকে উৎসর্গ করলে। কাদম্বরী মরে গিয়েও বেঁচেই রইল আর আমি...

জানো রবি আমি লজ্জার মাথা খেয়ে হয়তো ভালবেসে ফেলেছিলাম বলেন্দ্রনাথ, তোমাদের বলুকে। আমায় কাকিমা বলে ডাকত সেই ডাকে কী যে মাধুর্য ছিল আমি ঠিক জানি না। ওর মা মারা গেলো আর ছেলেটা রুগ্ন, সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারে না তাই অনেক মায়া হয়েছিল আমার। বয়সে বলু আমার থেকে চার বছরের বড় ওর কাছেই আমি সংস্কৃত পড়া শিখেছি। তার মতো ভাল আমায় আর কেউ বাসেনি ওই বাড়িতে। সামাজিক সম্পর্ক নিতান্তই মনগড়া বলু বলত আমাদের সম্পর্ক - আমি নারী আর সে পুরুষ এই আমাদের আদিম সম্পর্ক সমাজের পুতুল তো আমরা কেউ নই।

তুমি ওকে সহ্য করতে পারতে না, ছেলেটা অকালেই চলে গেলো আমাদের ছেড়ে।

জানো রবি তুমি এত কঠিন হতে চেয়েছিলে, কোনো মায়ায় জড়াওনি কারণ তোমায় অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে সে পথ তোমার একার তার কোনো শেষ নেই। তুমি রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠার যে স্কুল সেই স্কুল থেকে তুমি এক দিনও ছুটি নাওনি।

জানি এ চিঠি কোনোদিনও পৌঁছবে না তোমার কাছে, শুধু মনে রেখো আমারও কষ্ট ছিল, দুঃখ ছিল, আমারও ভাল লাগা ছিল। হয়তো ইতিহাস আমায় মনে রাখবে রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী হিসেবে তুমি অন্তত মনে রেখো তোমার সেই প্রিয় নামে, "ছুটকি বা ছুটি" হিসেবেই।

 

ইতি—

মৃণালিনী…


2 comments:

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)