বাতায়ন/মাসিক/প্রবন্ধ/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক, ১৪৩১
চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | প্রবন্ধ
সংঘমিত্রা ব্যানার্জি
সম্পর্ক
"আমরা জানি না আমাদের জীবনে খুব কাছের সম্পর্ক ছাড়াও বাইরের জগতে বিভিন্ন মানুষের সাথে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বিভিন্নভাবে সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। কোন সম্পর্ক ঠিক কতদূর হতে পারে তা নিয়ে মানুষ অজ্ঞাত তবুও মানুষ বাজি রেখে সম্পর্ক তৈরি করে।"
সম্পর্ক হল
এমন কিছু চার অক্ষরের মিলিত শব্দ যেই শব্দের অর্থ খুঁজতে খুঁজতে মানুষের গোটা
জীবনটাই চলে যায় তাও মানুষ সঠিক অর্থ খুঁজে পায় না। সম্পর্ক হল এমন এক বিরল অনুভূতি যে অনুভূতির বশবর্তী হয়ে আমরা সবাই
পৃথিবীতে আসি। আমরা সেই মানুষটিকে ভুলে যাই যার সুসম্পর্কের
বশবর্তী হয়ে আমরা পৃথিবীতে এসেছিলাম পৃথিবীটা উপভোগ
করছি,
পৃথিবীতে এই সবরকম অনুভূতি আমরা ভোগ করছি সে হলো আমাদের মা। মাঝে মাঝে আমরা সেই মা
শব্দটার অর্থ ভুলে যাই। সম্পর্কগুলো
সেটাই যেটা হৃদয় থেকে অর্থাৎ মন থেকে গ্রহণ করতে হয় শুধু মুখ থেকে নয়। সম্পর্ক শুধু সুখে-দুখে পাশে থাকা নয়, সম্পর্ক হল
এমন এক অনুভূতি যা অনেক সময় কাছে না থেকেও অনুভূত হয়। যে-কোনো সম্পর্কেই থাকে দায়বদ্ধতা। আর সেই দায়বদ্ধতা সঠিকভাবে পালন করতে পারলেই যে কোন সম্পর্ক সুসম্পর্কে
পরিণত হতে পারে। বর্তমানে কর্মব্যস্ত জীবনে ছোটখাটো বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে জটিল সমস্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এই নিজে থেকে
তৈরি করার সমস্যাগুলি অনেক সম্পর্ককে নিয়মিত আঘাত করে চলেছে। সম্পর্কগুলো এমন
স্বাধীন মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ যা জোর করে কারো সাথে করা যায় না। সম্পর্ক তখনই কারো সঙ্গে সম্ভব যখন দুজন মানুষ একই
চিন্তার বশবর্তী হয় অর্থাৎ তাদের দুজনের মধ্যে মনের মিল থাকে। সম্পর্কের ভিত হল
বিশ্বাস ও ভালবাসা। এই দুই অনুভূতি না থাকলে সম্পর্ক কখনো সঠিকভাবে তৈরি হয় না।
যে সম্পর্কে মনের মিল থাকে না শুধু লোক দেখানোর জন্য তৈরি হয়। সেই সম্পর্ক বেশি
দূর বেশি দিন চলতে পারে না। আবার যে সম্পর্কে বিশ্বাস, ভালবাসা, দায়বদ্ধতা থাকে সেই সম্পর্ক মৃত্যুর আগের
দিন পর্যন্ত ও টিকে থাকে কারণ এই সম্পর্কের ভিত ছিল ভালবাসা।
যে সম্পর্কের মূলে বিশ্বাস ও ভালবাসা থাকবে সেই সম্পর্ক টিকে থাকতে বাধ্য কারণ
বিশ্বাস ও ভালবাসা হলো সম্পর্কে একে অপরের পরিপূরক। নইলে যে
কোন সম্পর্ক তাসের ঘরের মতো যে কোন মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। এখন বর্তমান সমাজে মানুষের ধৈর্য কমে যাচ্ছে যা যে-কোনো
সম্পর্কের বাঁধনটাকে সক্রিয় করে না।
ইগো অহংকার এবং অবিশ্বাস যা কিনা একটি সম্পর্কের ভিতকে নষ্ট করে দেয় কোন নতুন
সম্পর্কের শুরুর আগেই বিনাশ করে দিচ্ছে। তাই প্রত্যেকটি
মানুষ যদি জীবনে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা যথা— আত্মমর্যাদা সততা সম্মান যোগাযোগ ও স্পেস এগুলো বিপরীত মানুষটিকে দিতে
পারে তবে সেই সম্পর্কে কখনো চির ধরে না দীর্ঘদিন ধরে তার সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে। সম্পর্ক হল সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ যা বিশ্বাস ও ভালবাসার উপর দাঁড়িয়ে
থাকে যেখানে একটা শব্দের অভাব ঘটলেই অন্য কোন উত্তাল ঢেউ এসে
অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু মানুষের এত কিছু সমস্যার
মধ্যেও সম্পর্ক ছাড়া মানুষ বাঁচতে অক্ষম তাই মানুষ সম্পর্ক
তৈরি করতেই পারে। যেমন জল ছাড়া মাছ বাঁচতে পারে না, বাঁচা সম্ভব
নয়। তেমনি মানুষও প্রতিনিয়ত সম্পর্ক তৈরি করে চলেছে আঘাত খেয়েও। সে সম্পর্ক মাতৃত্ব ব্যক্তি হতে পারে বা বন্ধুত্ব, প্রেমের সম্পর্ক হতে পারে। সবকটি বিভিন্ন দিক থেকে
দেখা সম্পর্কের উদাহরণ যা প্রত্যেকটা মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক
জীবনের মধ্যে আছে। আমরা জানি না আমাদের জীবনে খুব কাছের
সম্পর্ক ছাড়াও বাইরের জগতে বিভিন্ন মানুষের সাথে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে
বিভিন্নভাবে সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। কোন সম্পর্ক ঠিক কতদূর
হতে পারে তা নিয়ে মানুষ অজ্ঞাত তবুও মানুষ বাজি রেখে সম্পর্ক তৈরি করে। একটা বাগানে যখন একটা ফুল ফোটে তখন সে ফুলটিকে আরো সুন্দর বড় করার জন্য
নিয়মিত জল দিতে হয় তখন সে ফুল দেওয়ার মানুষটির সাথেও ফুলটির একটা সুন্দর
সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এটাও একটা সম্পর্কের উদাহরণ। একটা পশুকেও যখন একটা নির্দিষ্ট
সময় খেতে দেওয়া হয় তখন সেই পশুটির সঙ্গেও যে খেতে দিচ্ছে তার একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে নাই-বা হোক সেটা আত্মিক। আজকের পৃথিবীতে সব আত্মিক
সম্পর্কগুলো মিথ্যা সম্পর্কে পরিণত যেটা সমাজের ওপর খুব বাজে প্রভাব ফেলছে। তাই সম্পর্ক যে-কোনো সময় যে-কোনো
বিষয়ে যে-কোনো মানুষ পশুর ক্ষেত্রে হতে পারে। কোন মানুষকে আপনি না চিনলে তার সাথে দুটো
ভাল করে কথা বললেও একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে এই পৃথিবীতে এমন অনেক অনাথ
ছেলে-মেয়ে আছে। যাদের সত্যিই নিজের বলে কেউ নেই তবুও আজকের দুনিয়ায় তারা কিন্তু
একা নয়। এই পৃথিবীতে এমন কিছু সুরিরা সম্পন্ন ব্যক্তি আছেন যাঁরা এইসব অনাথ দুস্থ মানুষের কাছে বন্ধুত্বপূর্ণ
সম্পর্কের হাত বাড়িয়ে দেন।
[সংগৃহীত]
No comments:
Post a Comment