বাতায়ন/প্রেমের
Rush-লীলা/ছোটগল্প/২য় বর্ষ/২৫তম সংখ্যা/০৬ই মাঘ, ১৪৩১
প্রেমের Rush-লীলা | ছোটগল্প
তপতী রায়
কলির কেষ্ট
"ঠাকুমা গোপালকে স্নান করাত; ভাবতাম আমাকে কে কবে এইভাবে পুজো করবে। কৃষ্ণ মগডালে বসে সখীদের জলক্রীড়া দেখত। ঠাকুমার মতে আমিই কলির কেষ্টঠাকুর। আমার চলাফেরা কোন বিধিনিষেধ নেই।"
এখনো
অন্ধকার হয়নি। সূর্যদেব মনে হয় ভাবনায় পড়েছে, রক্তিম ছটা সারা আকাশ জুড়ে। সবটুকু
নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে যেতে মন খারাপ হচ্ছে। এঁরাই তো যুগযুগান্তরের সাথী। প্রকৃতির
সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তাঁর।
তাপসী
জানলাটা খুলে দিল। মৃদু হাওয়া ভেসে এলো। সামনের বাড়ির রকটা আজ ফাঁকা। দরজা বন্ধ। ছেলেগুলোর জন্য জানলা খোলা যায় না। বিশেষ করে নাড়ুর
জন্য। সেই স্কুল থেকে কলেজ শেষ হতে চলল। মুখে কিছু আটকায় না। এক নম্বর ফাজিল।
এক এক সময়
দাঁড়িয়ে ঝগড়া করতাম। আমার বাবা-মা, ওর বাবা-মা হাসত। রাগে গজগজ করতে
করতে এগিয়ে যেতাম। আজ প্রথম রক ফাঁকা। শুনশান। নিঃশব্দ! তাপসী অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। অন্ধকার ঘনিয়ে এলো। রাস্তার আলো জ্বলে উঠল। ঘুগনিওলা, আইসক্রিমওলা যে যার নিজের সময় মতো চলে গেল। মা’র ঘরে গিয়ে
মাকে দেখতে পেলাম না। বাবাও নেই। সদর দরজা বন্ধ। অতসী ভেতর থেকে দরজা খুলতে চেষ্টা
করল, মনে
হলো বাইরে থেকে বন্ধ। খুব জোরে ধাক্কা দিল, দরজাটা খুলে গেল। সামনেই নাড়ু
দাঁড়িয়ে।
-তোমার মা আমাকে পাহারা দেবার জন্য রেখে গেছেন। তোমার বাবা-মা, আমার বাবা-মা, ঠাকুমাকে নিয়ে নার্সিংহোমে গেছে। দুপুরবেলা হঠাৎ শরীর খারাপ হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যায় বাথরুমে। মনে হয় আর ফিরে আসবে না। আমার সব হারিয়ে গেল। নিজের বলতে কেউ রইল না। চিলেকোঠার ঘরে ওই মানুষটি আমার একান্তই আপন ছিল। আমার জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আছে তাপসী। ঠাকুমা ভুল করে কদম গাছের নীচে ফুলের সাথে গোপল ঠাকুরকে ফেলে দিয়েছিল। ছোট্ট পিতলের গোপাল। খুঁজতে গিয়ে আমাকে খুঁজে পায়। যাকে বাবা বলি, ঠাকুমার ভাইয়ের ছেলে। ছেলেবেলা থেকেই বাবা বলি, বাবার বন্ধু ছিল রেবামাসি। বাবা রেবামাসিকে বিয়ে করলে ঠাকুমা রেবামাসিকে মা বলতে বলেছিল। প্রথম যেদিন মা বলেছিলাম, প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিল। ঠাকুমা বলেছিল, তুই ওকে কোনদিন মা বলে ডাকবি না। এই আমাদের সম্পর্ক। শেষ খবরের অপেক্ষায় আছি। তোমার পিসির ছেলে রঞ্জন বলেছে দেরাদুন চলে যেতে। তোমার পিসেমশাই আর্মিতে কাজ করেন। আমাকে আর্মি স্কুলে ভর্তি করে দেবেন।
-তোমার মা আমাকে পাহারা দেবার জন্য রেখে গেছেন। তোমার বাবা-মা, আমার বাবা-মা, ঠাকুমাকে নিয়ে নার্সিংহোমে গেছে। দুপুরবেলা হঠাৎ শরীর খারাপ হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যায় বাথরুমে। মনে হয় আর ফিরে আসবে না। আমার সব হারিয়ে গেল। নিজের বলতে কেউ রইল না। চিলেকোঠার ঘরে ওই মানুষটি আমার একান্তই আপন ছিল। আমার জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আছে তাপসী। ঠাকুমা ভুল করে কদম গাছের নীচে ফুলের সাথে গোপল ঠাকুরকে ফেলে দিয়েছিল। ছোট্ট পিতলের গোপাল। খুঁজতে গিয়ে আমাকে খুঁজে পায়। যাকে বাবা বলি, ঠাকুমার ভাইয়ের ছেলে। ছেলেবেলা থেকেই বাবা বলি, বাবার বন্ধু ছিল রেবামাসি। বাবা রেবামাসিকে বিয়ে করলে ঠাকুমা রেবামাসিকে মা বলতে বলেছিল। প্রথম যেদিন মা বলেছিলাম, প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিল। ঠাকুমা বলেছিল, তুই ওকে কোনদিন মা বলে ডাকবি না। এই আমাদের সম্পর্ক। শেষ খবরের অপেক্ষায় আছি। তোমার পিসির ছেলে রঞ্জন বলেছে দেরাদুন চলে যেতে। তোমার পিসেমশাই আর্মিতে কাজ করেন। আমাকে আর্মি স্কুলে ভর্তি করে দেবেন।
সন্ধ্যাবেলা খবর এলো ঠাকুমা কাল বাড়ি ফিরে আসছে। অনেকটা ভালর দিকে। খুশিতে আমি
আনন্দে হাতের ওপর হাত রেখে বন্ধু হয়ে গেলাম। শুরু হলো প্রেম, লুকিয়ে
লুকিয়ে। এক সঙ্গে গ্র্যাজুয়েট হলাম। দারুণ রেজাল্ট! যেহেতু দুজনের মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া ছিল কেউ
আমাদের নিয়ে কোন সন্দেহ করত না। দুজনেই দেরাদুন কলেজে ভর্তি হয়ে গেলাম।
আমার মা বলল, “নাড়ু আছে কোন ভয় নেই, কড়া নজরদারি করবে”। ওখানেই পড়ুক।
তাপসী বলল, “মা জানে না আমরা চুটিয়ে প্রেম করছি। তবে নাড়ু বলতে ইচ্ছে করে না গো! এবার থেকে স্কুলের নাম কৃষ্ণ বলব।”
-তাপসী, তুমি তো
নতুন প্রেমে হাবুডুবু;
এমনিতে বাঙালি মেয়েরা গোপাল বলতে পাগল। ঘরে ঘরে আদরের গোপাল। তোমার মনের মতো
করে প্রেম করো। ছেলেবেলায় দেখতাম
ঠাকুমা, ঘি, মধু, চন্দন, ফুল দিয়ে গোপালকে স্নান করাত। ছোট ছিলাম বড় ইচ্ছে করত আমাকে কেউ এইভাবে
যত্ন করুক। আমার মনে বদ্ধ ধারণা হয়ে গিয়েছিল আমিই কৃষ্ণঠাকুর। ঠাকুমা, পাড়ার
অনেকেই কেষ্টঠাকুর বলত। নাড়ু, মালপোয়া হলেই ডেকে খাওয়াত। একটু বড় হতেই মনে হলো তুমি
আমার রাধা। সেই কবে থাকতে তোমার প্রেমে বিভোর। ঠাকুমা গোপালকে স্নান করাত; ভাবতাম
আমাকে কে কবে এইভাবে পুজো করবে। কৃষ্ণ মগডালে বসে সখীদের জলক্রীড়া দেখত। ঠাকুমার মতে আমিই কলির কেষ্টঠাকুর। আমার চলাফেরা কোন বিধিনিষেধ নেই।
-কৃষ্ণ, তুমি এত অসভ্য! এত পাকা। আগে জানলে প্রেম করতাম না তোমার সাথে।
-কৃষ্ণ কবে কাঁচা ছিল? জন্ম পাকা গাছ পাকা! আমি তো কলির কেষ্ট। তুমি আমার রাধারানী! বল, হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ।
আমার মা বলল, “নাড়ু আছে কোন ভয় নেই, কড়া নজরদারি করবে”। ওখানেই পড়ুক।
তাপসী বলল, “মা জানে না আমরা চুটিয়ে প্রেম করছি। তবে নাড়ু বলতে ইচ্ছে করে না গো! এবার থেকে স্কুলের নাম কৃষ্ণ বলব।”
-কৃষ্ণ, তুমি এত অসভ্য! এত পাকা। আগে জানলে প্রেম করতাম না তোমার সাথে।
-কৃষ্ণ কবে কাঁচা ছিল? জন্ম পাকা গাছ পাকা! আমি তো কলির কেষ্ট। তুমি আমার রাধারানী! বল, হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment