রম্যরচনা
প্রদীপ কুমার দে
মোবাইল রিল
ঝিঙাফুল সিরিজ— ১৪
প্রদীপ কুমার দে
মোবাইল রিল
ঝিঙাফুল সিরিজ— ১৪
"এ তো একেবারে চকাচক মডেল নারীদের রিল নৃতত্ত! স্বল্প পরিধানে নারীর নারীত্ব। ঝিকঝাক আলোয়, উত্তাল চটুল সঙ্গীতের মূর্ছনায় উদ্দাম দেহতত্ত্ব!"
এই নিয়ে
দ্বিতীয় দিন এরকম হল,
ভুল করে স্টুডিওতে ঢুকে পড়েই লজ্জায় মাখামাখি হয়ে লজ্জাবতী লতার ন্যায় লতিয়ে
বেরিয়ে যাচ্ছি, অবাক
করে দিয়ে এক স্বল্পবেশী যুবতী আমার হাত ধরে এক টান এমনভাবে মারল যে তার সুবাসিত
শরীরের উপর আমি এমন পড়লাম যে আমার আমিত্বে আমি আর রইলাম না, ঝিঙাফুলের
গন্ধ ভুলে ওই যুবতীর ছোঁয়ায় আমার শরীর কেঁপে উঠল, মনে তখন কালবৈশাখীর তুফান উঠেছে।
আরো অবাক করে দিয়ে যুবতী, লজ্জাহীনা উচ্চনিনাদে জানিয়ে দিল,
বাচ্চা ছেলে? এ কথার কী ইঙ্গিত হয়?
ততক্ষণে আরো কয়েকজন মহিলা হোহো করে হেসে কী একটা মজায় লুটোপুটি খাচ্ছে দেখলেই বোঝা যায় আমার নিজের কোথাও ভুল আছে। তাই মন ঠান্ডা করে চোখ কচলে ভালো করে দেখেই চক্ষু চড়কগাছ! একী রে? এ কাকে দেখছি? ভুল নয়তো? না, তা তো নয়, ও তো ঝিঙাফুলই! দ্যাখো কেলোরকীর্তি? নিজের বউয়ের চেহারায় আমার কোন আন্দাজই নেই অথচ বউ আমাকেই দোষী বানিয়ে রেখেছে ওর ওই আকর্ষণীয় শরীর নাকি আমার বদমাশ অভ্যাসের কুফলেই উল্লসিত। ভাবা যায় এ তো একেবারে চকাচক মডেল নারীদের রিল নৃতত্ত! স্বল্প পরিধানে নারীর নারীত্ব। ঝিকঝাক আলোয়, উত্তাল চটুল সঙ্গীতের মূর্ছনায় উদ্দাম দেহতত্ত্ব! আশেপাশের উৎসাহী অভ্যস্ত সাহসী গৃহবধূ যুবতীরাই ওর উৎসাহদাত্রী। মোবাইল, রিলের গোলাকার আলো, ঝিকিমিকি ব্যাকগ্রাউন্ড, ঝলমলে আলোয় আমার ঝিঙাফুল আজ এক কামরূপী নৃত্য পটিয়সী। আমি এক পুরুষ কামনায় আসক্তির দর্শক আর চার চারটি যুবতী তাদের নৃত্যে অবিরত অভিনেত্রী, যার অনতিদূরে দূরে এক সেটিং মোবাইলের চোখ ক্যামেরায় ওদের কর্মকাণ্ডের লাইভ ধরছে। আমার দৃষ্টিতে নাচ নয়, চোখ খোঁজে খাঁজখোঁজ।
যা হবার
হোক। যা পাই তাই খাই।
এ যুগ এমনই ভাই বাছবিচারে কাজ নাই।
সুযোগ এলে
লুফে নাও! মন মান কিছুই নাই
শরীর যে
শরীরই চায়, শরম, লাজ আপদ
বালাই!
আমিও হাঁপিয়ে উঠলাম এবার। একঘেঁয়েমি ব্যাপারস্যাপার! মহিলারা কী কিছু বুঝল? বউদিরা ভিডিও দেখে খুশিমনে বিদায় নিল। রিল এখন আর হল না। আমার উসখুস অবস্থান তাদের খোঁচাচ্ছে। ঝিঙাফুল বোঝে, মজা হয়ে যেতেই খেলা ভেঙে দিল। কিন্তু আমায় টিপ্পনী দিতে পেছপা হল না,
আমি একমিনিট সময় নিলাম। তারপর ঝেড়ে কাশলাম,
শাড়ি আর ম্যাচিং ব্লাউজ পরে সেজেগুজে ডাইনিং টেবিলে আমার পাশে এসে বসল। ফ্লাস্ক থেকে চা ঢেলে আমায় দিল, নিজে নিল।
-করেই রেখে দিয়েছিলাম। আর তুমি যাই ভাবো আমি তোমাকে জানি বলেই বসিয়ে রেখেছিলাম।
-আর ওদেরও তো লাজলজ্জা বলে কিছু নেই।
-এটা তো পাবলিকের জন্যই? আর কী খারাপ আছে? ছোট্ট টাইট-টপ পড়ে এখন মেয়েবউরা রাস্তাতেও বের হয়। তোমরা ছেলেরা বেশি বেশি ভাবো তাই।
-তুমিও রিল বানাবে? এইসবে মন গেল? কী ভাইরাল হবে নিজে?
আমি হতবাক। উত্তর ছিল। মান্যতা পাবে তার গ্যারান্টি কে দেবে? আমার চোখে নারীকে দেখা আর তার মন নিয়ে বলা এককথা নয়। উল্টে তাদের চোখে আমাদের এই পুরুষদের দৃকপাত অভিভাবকত্ব একপ্রকারের কায়েমি স্বার্থের জ্যাঠামি!
রাতেই বউ আমার বিড়ালটাকে মারল। এক্কেবারে আমার কাছে সরে এসে জানতে চাইল,
ওকে টেনে নিলাম,
ঝিঙাফুল ভয় পেল? সত্যিটা জানি না। কিন্তু ও আমাকে আঁকড়ে ধরতে চাইল। আমি তাতেও বাধা দিলাম না।
সমাপ্ত
অনেক ভালবাসা রইল সম্পাদক মহাশয়ের জন্য। অপরিসীম ধৈর্য আর কর্মদক্ষতার সাধুবাদ জানাই আপনাকে। সকল লেখক কবি আর পাঠকদের জন্য রইল সারস্বত শুভেচ্ছা।
ReplyDeleteবড়ো জটিল সমীকরণ এ-ই লেখা জুড়ে
ReplyDeleteশুভকামনা অহর্নিশ দাদাই
অনন্য প্রয়াস রম্য রোমান্টিক সিরিজ
ReplyDelete💖💖💖