প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

দহন | মানুষকে মানুষের মূল্য দিন

বাতায়ন/দহন / কবিতা / ৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ ,   ১৪৩২ দহন   | সম্পাদকীয় "এর মধ্যেই আছে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা, সে-কোন সন্ত্রাসবাদীই হ...

Wednesday, April 9, 2025

মোবাইল রিল | ঝিঙাফুল সিরিজ— ১৪ | প্রদীপ কুমার দে

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/রম্যরচনা/য় বর্ষ/২য় সংখ্যা/০৫ই বৈশাখ, ১৪৩
রম্যরচনা
প্রদীপ কুমার দে
 
মোবাইল রিল
 
ঝিঙাফুল সিরিজ— ১৪

"এ তো একেবারে চকাচক মডেল নারীদের রিল নৃতত্ত! স্বল্প পরিধানে নারীর নারীত্ব। ঝিকঝাক আলোয়উত্তাল চটুল সঙ্গীতের মূর্ছনায় উদ্দাম দেহতত্ত্ব!"

 

এই নিয়ে দ্বিতীয় দিন এরকম হল, ভুল করে স্টুডিওতে ঢুকে পড়েই লজ্জায় মাখামাখি হয়ে লজ্জাবতী লতার ন্যায় লতিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি, অবাক করে দিয়ে এক স্বল্পবেশী যুবতী আমার হাত ধরে এক টান এমনভাবে মারল যে তার সুবাসিত শরীরের উপর আমি এমন পড়লাম যে আমার আমিত্বে আমি আর রইলাম না, ঝিঙাফুলের গন্ধ ভুলে ওই যুবতীর ছোঁয়ায় আমার শরীর কেঁপে উঠল, মনে তখন কালবৈশাখীর তুফান উঠেছে।

 
আরো অবাক করে দিয়ে যুবতী, লজ্জাহীনা উচ্চনিনাদে জানিয়ে দিল,
-এখানে চুপটি করে বসে বাচ্চা ছেলের মতো মন নিয়ে সবকিছু দেখো। ঘর ছেড়ে যেতে হবে না।
 
বাচ্চা ছেলে? এ কথার কী ইঙ্গিত হয়?
 
ততক্ষণে আরো কয়েকজন মহিলা হোহো করে হেসে কী একটা মজায় লুটোপুটি খাচ্ছে দেখলেই বোঝা যায় আমার নিজের কোথাও ভুল আছে। তাই মন ঠান্ডা করে চোখ কচলে ভালো করে দেখেই চক্ষু চড়কগাছ! একী রে? এ কাকে দেখছি? ভুল নয়তো? না, তা তো নয়, ও তো ঝিঙাফুলই! দ্যাখো কেলোরকীর্তি? নিজের বউয়ের চেহারায় আমার কোন আন্দাজই নেই অথচ বউ আমাকেই দোষী বানিয়ে রেখেছে ওর ওই আকর্ষণীয় শরীর নাকি আমার বদমাশ অভ্যাসের কুফলেই উল্লসিত। ভাবা যায় এ তো একেবারে চকাচক মডেল নারীদের রিল নৃতত্ত! স্বল্প পরিধানে নারীর নারীত্ব। ঝিকঝাক আলোয়, উত্তাল চটুল সঙ্গীতের মূর্ছনায় উদ্দাম দেহতত্ত্ব! আশেপাশের উৎসাহী অভ্যস্ত সাহসী গৃহবধূ যুবতীরাই ওর উৎসাহদাত্রী। মোবাইল, রিলের গোলাকার আলো, ঝিকিমিকি ব্যাকগ্রাউন্ড, ঝলমলে আলোয় আমার ঝিঙাফুল আজ এক কামরূপী নৃত্য পটিয়সী। আমি এক পুরুষ কামনায় আসক্তির দর্শক আর চার চারটি যুবতী তাদের নৃত্যে অবিরত অভিনেত্রী, যার অনতিদূরে দূরে এক সেটিং মোবাইলের চোখ ক্যামেরায় ওদের কর্মকাণ্ডের লাইভ ধরছে। আমার দৃষ্টিতে নাচ নয়, চোখ খোঁজে খাঁজখোঁজ।
 
                            যা হবার হোক। যা পাই তাই খাই।
                            এ যুগ এমনই ভাই বাছবিচারে কাজ নাই।
                            সুযোগ এলে লুফে নাও! মন মান কিছুই নাই
                            শরীর যে শরীরই চায়, শরম, লাজ আপদ বালাই!
 
পাক্কা দুইঘন্টা ধরে কসরত করে ঘাম ঝরিয়ে পাঁচ-পাঁচটি আধপাকা মহিলা বেশভূষায় সাজসজ্জায় খোলামেলা, খুল্লামখুল্লা নেচেনেচে মোবাইলে ভিডিও লোড করে হাঁপাতে থাকল।
 
আমিও হাঁপিয়ে উঠলাম এবার। একঘেঁয়েমি ব্যাপারস্যাপার! মহিলারা কী কিছু বুঝল? বউদিরা ভিডিও দেখে খুশিমনে বিদায় নিল। রিল এখন আর হল না। আমার উসখুস অবস্থান তাদের খোঁচাচ্ছে। ঝিঙাফুল বোঝে, মজা হয়ে যেতেই খেলা ভেঙে দিল। কিন্তু আমায় টিপ্পনী দিতে পেছপা হল না,
-আজ আবার এত তাড়াতাড়ি ফিরলে যে...?
-হয়ে গেল। কী করে জানব যে...?
-যাক সব দেখে নিয়েছ তো?
 
আমি একমিনিট সময় নিলাম। তারপর ঝেড়ে কাশলাম,
-মহিলারা কি জানে তাদের উন্মোচিত শরীর পুরুষদের কাছে এক মিনিটের নেশা, বাদবাকিটা ঘৃণার?
-বাবা-রে! ডায়ালগের জাত!
শাড়ি আর ম্যাচিং ব্লাউজ পরে সেজেগুজে ডাইনিং টেবিলে আমার পাশে এসে বসল। ফ্লাস্ক থেকে চা ঢেলে আমায় দিল, নিজে নিল।
-করেই রেখে দিয়েছিলাম। আর তুমি যাই ভাবো আমি তোমাকে জানি বলেই বসিয়ে রেখেছিলাম।
-আর ওদেরও তো লাজলজ্জা বলে কিছু নেই।
-টা তো পাবলিকের জন্যই? আর কী খারাপ আছে? ছোট্ট টাইট-টপ পড়ে এখন মেয়েবউরা রাস্তাতেও বের হয়। তোমরা ছেলেরা বেশি বেশি ভাবো তাই।
-তুমিও রিল বানাবে? এইসবে মন গেল? কী ভাইরাল হবে নিজে?
ঝিঙাফুল আমার চোখের দিকে একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। আমি বিব্রতবোধ করলাম। ও জানতে চাইল,
-আমি যদি করি ভালোবেসে তুমি কি বাধা দেবে? ব্যাপারখানা ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়? খুব কি স্বাচ্ছন্দ্যের? স্বামীর ইচ্ছে আর স্ত্রীর ইচ্ছে কি এক লাইনেই চলে? দুটি মন দুটি শরীর কি এক হতে পারে? একবার ভাবো? খারাপ ভালো ভাববার অধিকার কি একতরফাই?
 
আমি হতবাক। উত্তর ছিল। মান্যতা পাবে তার গ্যারান্টি কে দেবে? আমার চোখে নারীকে দেখা আর তার মন নিয়ে বলা এককথা নয়। উল্টে তাদের চোখে আমাদের এই পুরুষদের দৃকপাত অভিভাবকত্ব একপ্রকারের কায়েমি স্বার্থের জ্যাঠামি!
 
রাতেই বউ আমার বিড়ালটাকে মারল। এক্কেবারে আমার কাছে সরে এসে জানতে চাইল,
-রাগ করলে? সবকিছুর মধ্যে একটা আনন্দ আছে, জানার আছে আর আমি সেটা মজা হিসাবেই নিই। সত্যি সত্যি রিল বানাচ্ছি না। দেখছিলাম ওটার মধ্যে কী আছে!
ওকে টেনে নিলাম,
-কৌতুহল ভাল। জানাও ভাল। পিছলে যাওয়ার আগে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনার নিয়মটাও জানতে হয়।
 
ঝিঙাফুল ভয় পেল? সত্যিটা জানি না। কিন্তু ও আমাকে আঁকড়ে ধরতে চাইল। আমি তাতেও বাধা দিলাম না।
 
সমাপ্ত
 

3 comments:

  1. অনেক ভালবাসা রইল সম্পাদক মহাশয়ের জন্য। অপরিসীম ধৈর্য আর কর্মদক্ষতার সাধুবাদ জানাই আপনাকে। সকল লেখক কবি আর পাঠকদের জন্য রইল সারস্বত শুভেচ্ছা।

    ReplyDelete
  2. বড়ো জটিল সমীকরণ এ-ই লেখা জুড়ে
    শুভকামনা অহর্নিশ দাদাই

    ReplyDelete
  3. অনন্য প্রয়াস রম্য রোমান্টিক সিরিজ
    💖💖💖

    ReplyDelete

জাল— মাছ কাটতে না জানলেও কিছু মানুষ জানে


Popular Top 10 (Last 7 days)