বাতায়ন/দহন/ছোটগল্প/৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
দহন | ছোটগল্প
জগন্নাথ
মহারাজ
অব্যক্ত
যন্ত্রণা
"অসহায় পিতা ওদের মুখের দিকে তাকিয়েই থাকে। অব্যক্ত যন্ত্রণা। হাসপাতালে মৃত লাশের স্তুপ থেকে যেন ভেসে আসে— বাবা আমার চকলেট এনেছ..."
মোবাইল ফোনটা সুইচড অফ কেন? সন্ধে ৬টা বেজে গেল। মানুষটি এখনও অফিস থেকে ফিরল না! ছোট্টমেয়েটাও কাঁদে— বাবা চকলেট আনছে কই? ঘর থেকে শোনা যায় বোমার অবিরাম বর্ষণ। দূর থেকে অস্পষ্ট ভেসে আসে— ঘর থেকে কেউ... আতঙ্কবাদীরা সারাশহর ঘিরে...
হঠাৎ দরজায় কলিংবেলের শব্দ...! ভয়ে বুক
দুরুদুরু, তবু মন বলে সুমিতই হয়তো ফিরল। কিন্তু এ কী! প্রতিবেশী দুই যুবকের কন্ঠস্বর— বৌদি অচেনা কেউ
এলে দরজা খুলবে না! শুনেছ তো মাসতিনেক আগে অমরপুর শহরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা খুন হওয়াকে কেন্দ্র করে,
দুই
দলের দীর্ঘদিনের যে চাপা লড়াই সেটাই আজ দুপুর থেকে রূপ পরিবর্তিত হয়ে
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় পরিণত হয়েছে।
-কিন্তু তোমার
দাদা এখনো তো...
বলতে বলতেই পুলিশে ঘেরা শহর
থেকে বেরিয়ে আতঙ্কবাদীরা আক্রমণের নিশানা হিসেবে গ্রামের দিকে ছুটে আসে... মুহূর্তেই
রক্তবন্যা বয়ে যায়। ছোট্টগ্রাম মহনগঞ্জ দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুনে। বাঁচাও বাঁচাও... আর্তনাদ... আতঙ্কিত শহরে, বাস, গাড়ি প্রবেশ নিষিদ্ধ তাই সুমিত রাত্রে আর ফিরতে পারল না। অফিসেও
জরুরি মিটিংয়ের জন্য ফোনটাও সুইচ অফ
রাখতে হয়েছিল। বিপদের আশঙ্কায় মনটা বড়ো অস্থির। রাত্রি ৭টায়
সুমিত ফোন করে হ্যালো… হ্যালো... ওপার নিরুত্তর। সারারাত ঘুম নাই চোখে।
পরেরদিন... সুমিত এসে দেখে
চারিদিকে শুধু ছাই... মাটির পোড়াঘর খাঁ খাঁ করছে। রাস্তায় রক্তের ছাপ। পাগলের
মতো ছুটতে থাকে ছোট্টমেয়ে আর বৌয়ের খোঁজে পথে পথে...
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের
বলে,
-আমার মেয়ে, বৌ কোথায় আছে তোমরা জানো?
নীল পার্টির নেতা বলে,
-ওরা জানে।
সাদা পার্টির লোকেরা বলে,
-দাদা পাশবিক হত্যাকান্ডের
জন্য ওরাই দোষী।
অসহায় পিতা ওদের মুখের দিকে
তাকিয়েই থাকে। অব্যক্ত যন্ত্রণা। হাসপাতালে মৃত লাশের স্তুপ থেকে যেন ভেসে আসে— বাবা আমার
চকলেট এনেছ...
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment