প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

দহন | মানুষকে মানুষের মূল্য দিন

বাতায়ন/দহন / কবিতা / ৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ ,   ১৪৩২ দহন   | সম্পাদকীয় "এর মধ্যেই আছে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা, সে-কোন সন্ত্রাসবাদীই হ...

Friday, May 16, 2025

মৌন মিছিল [১ম পর্ব] | অভীক মুখোপাধ্যায়

বাতায়ন/দহন/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
দহন | ধারাবাহিক গল্প
অভীক মুখোপাধ্যায়
 
মৌন মিছিল
[১ম পর্ব]

"হুইলচেয়ার ঠেলছেন বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগের শেষদিকের এক তাবড় অভিনেত্রীযিনি নিজেই এখন পরিচালক। দেশের দারিদ্র ও করুণ অর্থনৈতিক অবস্থার স্বরূপ তুলে ধরা তাঁর সিনেমা সাধারণ দর্শকের মাথার অনেক ওপর দিয়ে চলে গেলেও বিদেশি চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে ওনার প্রচুর কদর।"


মৌন মিছিলটা রাস্তার মাঝ বরাবর চলেছে ধীর গতিতে। সামনে পেছনে দুপাশে পুলিশের বেষ্টনী। মিছিলের পেছনেই পুলিশের ভ্যান, জিপ, অ্যাম্বুলেন্স আর টিভি চ্যানেলের ওবি ভ্যানের ভিড়। আর হবে নাই বা কেন? এই যে এক অভূতপূর্ব ক্রান্তিকালের মধ্যে রয়েছে পুরো রাজ্য তাতে তো চুপ করে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা যায় না। সমাজের প্রতি তো একটা নৈতিক দায়বদ্ধতা আছে এই বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের। শাসক যখন দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে ওঠে তখন তার স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য তো এগিয়ে আসতে হবেই। যারা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কোপে রুটি রুজি হারিয়ে ধর্নায় বসেছে, রিলে অনশন করছে তাদের সমর্থনে এই মিছিল। শহরের তাবৎ মুক্তমনা প্রগতিশীল সমাজ যারা এখনও শাসকের পদলেহি হয়নি তারা সবাই আজ পথে নেমেছে।

 
কে নেই এই মিছিলে? সবার সামনে মুখে কালোকাপড় বেঁধে হুইলচেয়ারে বসে যে পক্ককেশ প্রায় অশীতিপর বৃদ্ধ, পরনে বাউলদের মতো আলখাল্লা, তিনি এককালের স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী। এককালে তাঁর বহু কাজ লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি হত। তাঁর হুইলচেয়ার ঠেলছেন বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগের শেষদিকের এক তাবড় অভিনেত্রী, যিনি নিজেই এখন পরিচালক। দেশের দারিদ্র ও করুণ অর্থনৈতিক অবস্থার স্বরূপ তুলে ধরা তাঁর সিনেমা সাধারণ দর্শকের মাথার অনেক ওপর দিয়ে চলে গেলেও বিদেশি চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে ওনার প্রচুর কদর। তাঁর পাশেই রয়েছেন সেই বিখ্যাত কবি। তাঁর জ্বালাময়ী কবিতায় তিনি শাসকের উলঙ্গ মূর্তিটাকে বারবার বেআবরু করেন তাঁর ফেসবুকের দেওয়ালে, লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় প্রতিবার।
 
শুধুই কি ওঁরা? আরও কতজন রয়েছেন মিছিলে, সাহিত্যিক, পরিচালক, অভিনেতা, মডেল, অভিনেত্রী, শহরের সব থেকে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা, একাধিক মহাবিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। সবার হাতে হাতে প্ল্যাকার্ড, তাতে তীব্র ভাষায় ধিক্কার শাসকের বিরুদ্ধে। কারোর হাতে ছবি – ধর্নার, প্রতিবাদের।
 
মিডিয়া হাউসের প্রতিবেদকরাও মিশে গেছে মিছিলের ভিড়ে, চারিদিকে তাদের চাঁদের হাট, একটা ছোট্ট বাইট মানেও ব্রেকিং নিউজ, হাই টিআরপি...
 
এই মিছিল শুরু হয়েছে শহরের দক্ষিণাংশ থেকে, গন্তব্য শহরের একদম প্রাণকেন্দ্র যেখানে চলছে ধর্না আর রিলে অনশন। মিছিলের বিশিষ্টরা দেখা করবেন সেইসব রুটি রুজি হারা মানুষগুলোর সঙ্গে, সহমর্মিতা জানাবেন, মনোবল বাড়াবেন তারপর সেখান থেকে সোজা প্রেস ক্লাবে। এক অভূতপূর্ব সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন হয়েছে সেখানে। এই মিছিলের প্রধান প্রধান মুখরা সেখানে নিজেদের বক্তব্য রাখবেন, ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার একটা রূপরেখা উপস্থাপন করবেন। ব্যক্তিগত পরিচয়সূত্রে অনেক বিদেশি মিডিয়াহাউসের প্রতিবেদকরাও আসছেন সেখানে। সমাজের বিশিষ্ট অংশের এই কর্মকাণ্ডের কথা ছড়িয়ে পড়বে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও।
 
ওই যে হুইলচেয়ারে বসা শিল্পী, তিনিই এই মিছিলের প্রধান মুখ। সমগ্র সম-মনস্ক বুদ্ধিজীবী সমাজকে এক ছাতার তলায় আনার শ্রেয়টা ওনারই প্রাপ্য। তাঁর বয়স হয়েছে, দুর্বল ক্ষয়িষ্ণু স্বাস্থ্যে যদি খোলা আকাশের ধুলো-ধোঁয়া আর পলিউসান সহ্য না হয় তাই মিছিলের পেছনে পেছনে আসছে তাঁর কাস্টমাইসড ল্যান্ডরোভার, ক্লান্তি লাগলে একটু জিরিয়ে নেবেন, ক্লান্তি অপনোদনের সমস্ত আয়োজনই আছে সেখানে। তাছাড়া ধর্নামঞ্চে ওঠার আগে একটু ফ্রেশ হয়ে নিতেও হবে। ওনারা ধর্নামঞ্চে পৌঁছলে গাড়ি চলে যাবে শহরের এক নামকরা পাঁচতারা হোটেলে, সেখানে উঠেছেন শিল্পীর ব্যক্তিগত অনুরোধে এই সাংবাদিক সম্মেলন কভার করতে আসা এক বিদেশি চ্যানেলের বিদেশি প্রতিনিধি। এই আন্দোলনকে সমগ্র বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে শিল্পী এখন মরিয়া। জীবনের শেষবেলায় পাবলিসিটির এমন সুযোগ তিনি কিছুতেই হাতছাড়া করবেন না।
 
ক্রমশ…

1 comment:

  1. I enjoyed reading it and I hope I can read the next issues.

    ReplyDelete

জাল— মাছ কাটতে না জানলেও কিছু মানুষ জানে


Popular Top 10 (Last 7 days)