বাতায়ন/দহন/ছোটগল্প/৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
দহন | ছোটগল্প
অরূপ কুমার
দেব
অবুঝ
মন
"এটা হচ্ছে প্রায় একমাস ধরে। আমার ছাড়াছাড়ির পর থেকেই। আমার প্রাক্তন আমায় ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকেই আমি এমন হয়ে গেছি।"
-পেশেন্ট নম্বর ১৩ মিস বৈশাখী শর্মা।
রিসেপশনে নিজের নাম শুনে উঠে
দাঁড়ায় বৈশাখী।
-হ্যাঁ আমিই
বৈশাখী।
-যান ভেতরে যান, ওই রুমে।
রিসেপশনিস্টের দেখানো রুমের দিকে পা বাড়ায় বৈশাখী।
-আমি কি ভিতরে আসতে পারি ডক্টর?
-আসুন মিস
বৈশাখী। চেয়ারে বসুন-না।
-হুম্।
খানিকটা চিন্তিত মুখেই বসে বৈশাখী। আর ওর মুখ দেখেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর আদিত্য ঘোষ বুঝতে
পারে ও কতটা চিন্তিত।
-মিস শর্মা মনে হচ্ছে ভীষণই চিন্তিত। আরে সব ঠিক হয়ে যাবে মিস শর্মা। এতটাও
চিন্তা করবার কিছু নেই। আমি আছি তো। এবার বলুন কী সমস্যা আপনার।
-আসলে ডক্টর আমি কিছুতেই খুশি থাকতে
পারছি
না। অনেক চেষ্টা করি কিন্তু পারছি না। যদিও আমার সাথে ভালো কিছু ঘটলেও আমি সুখী হতে পারছি না। আর এটা
হচ্ছে প্রায় একমাস ধরে। আমার ছাড়াছাড়ির পর থেকেই। আমার প্রাক্তন আমায় ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকেই আমি এমন হয়ে গেছি। হ্যাঁ আমি
জানি ও আমার জীবন থেকে চলে গিয়ে আমারই উপকার করেছে কিন্তু তাও আমি সুখী হতেই পারছি না। কিচ্ছু ভালো লাগে না। চুপচাপ বসে থাকি সারাদিন। দয়া করে কিছু একটা করুণ ডক্টর, প্লিস। আমি এভাবে সারাটাজীবন বাঁচতে চাই না।
-ঠিক আছে ঠিক আছে, শান্ত হোন মিস শর্মা। এই নিন জলটা খান আগে।
টেবিলে রাখা
জলটা এক নিঃশ্বাসে ঢকঢক করে খেয়ে নেয় বৈশাখী।
-হুম্, এবার বলুন মিস শর্মা আপনি কী করেন মানে স্টুডেন্ট নাকি কোন কাজ করেন।
-চাকরি করি, কিন্তু গত কয়েকদিন
অফিসে যাচ্ছি না। আসলে কিছুই ভালো লাগছে না। একা থাকতেই খালি ভালো লাগছে। কিন্তু তাতেও আমি সুখী নই।
-দেখুন মিস
শর্মা! খুশি নই, খুশি হতে পারছি না। এই চিন্তাগুলোই অর্থহীন, বুঝলেন তো। আসলে আমাদের মানুষের চিন্তার ওপরেই আমাদের এই
সুখ, অসুখ এসব নির্ভর করে। এখন
আমি যদি মনে করি আমার এই কাজটা একঘেঁয়ে।
এই কাজ আমার ভালো লাগছে না। তাহলে তো আমিও নিজের এই পেশাকে ভালোবাসতেই পারব না। আমিও তখন এরকম আপনার মতোই অসুখী অনু্ভব করব। তাই না? তার চেয়ে যদি আপনি একটু বসে
নিজেই ভাবেন যে আমি কেন এত অসুখী? আমার তো
ভালো না
হওয়ার কোনো কারণই নেই। আমি তো সুখী হতেই পারি। আমার কাছে যা আছে সেগুলো তো এই পৃথিবীর অনেক মানুষের কাছেও নেই। তাহলে
আমার তো অসুখী হওয়ার কোনো
কারণই নেই। এইগুলো
একটু বাড়ি গিয়ে ভাবুন। নিজেকে নিজে বোঝার চেষ্টা করুন যে আপনি কী চান? যদি মনে হয় আপনি কাজের
মধ্যে ব্যস্ত থাকলে আপনার প্রাক্তনকে আর মনে পড়ছে না তাহলে যতটা
সম্ভব নিজের কাজেই মনোনিবেশ করুন। নিজের মায়ের সাথে সময় কাটান। দেখবেন এক নিমেষে
আপনার সব দুঃখ, কষ্ট উধাও হয়ে যাবে। আর আমি
এটা গ্যারেন্টি দিচ্ছি, মায়ের সাথে গল্প করায় যে কতটা ভালো লাগে একবার নিজেই চেষ্টা করে দেখুন।
আসলে কী বলুন তো, আমরা বড় হয়ে গেলে
আর নিজের মা-বাবার সাথে দু’মিনিট বসে মন খুলে ছোটবেলার মতো গল্প
করতেই পারি না। আর এটাই সবথেকে বড় সমস্যা আমাদের। তাই বলছি কৌশলটা আজই বাড়ি গিয়ে
চেষ্টা
করুন। মাসিমা বা মেসোমসাইয়ের সাথে সময় কাটান। সম্ভব হলে বাইরে কয়েকদিনের জন্য আপনারা পুরো পরিবার ঘুরে আসুন। দেখবেন কতটা
নিজেকে সতেজ লাগছে। আর হ্যাঁ আমি সবাইকেই মেডিসিন দিয়ে থাকি। কিন্তু আপনাকে আমি কিছুই দেব না। আমার বলা কথাগুলো শুধু অনুসরণ করুন। দেখবেন খুব তাড়াতাড়িই আপনি নিজেকে সবথেকে সুখী ব্যাক্তি মনে করবেন। আর
হ্যাঁ, এক মাস পর অবশ্যই যোগাযোগ করবেন। এইটা আমার কার্ড। চাইলে আপনি এখানে নাও আসতে পারেন। আমাকে
ফোন করে নিজের মানসিক বিকাশটা
জানালেও ক্ষতি নেই। আপনার ফোনের জন্য অপেক্ষা করব আমি।
বেশ মন দিয়ে ডক্টরের কথাগুলো
শোনার পর কিছুটা প্রশান্তির ছাপ পড়ে বৈশাখীর মুখে।
-অনেক ধন্যবাদ ডক্টর ঘোষ। আমি
অবশ্যই আপনার সবকটা উপদেশ পালন করব আর অবশ্যই জানাবো আপনাকে। আজ তাহলে আসি? ভালো থাকবেন।
-হ্যাঁ আপনিও।
এর প্রায় ২০ দিন পরেই বৈশাখী ডক্টর ঘোষকে ফোন করে জানায় ওনার বলা সবকটা উপদেশই কাজ করেছে। এখন বৈশাখী আগের খেকে অনেক
উন্নতি
করেছে।
আসলে সত্যিই বৈশাখীর এই সমস্যা এখনকার অনেকের মধ্যেই আছে। কিন্তু আমাদের একটা জিনিস সবসময়
মাথায় রাখতে হবে, আমাদের ‘মন’ জিনিসটাকে সবসময় আগলে রাখা খুব দরকার। সবসময় ‘মন’কে
বোঝাতে হবে আমরা সুখী। আমরা হার মানব না শত
বাধা সত্ত্বেও। তাহলেই আমাদের এই অবুঝ মনটাও একসময় অনেকটা বুঝে হয়ে যাবে। আর এটাই সব সমস্যার সমাধান নিমেষেই করে দেবে।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment