প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

নাম নয় মানই বিবেচ্য

শারদ | উৎসবের অঙ্গীকার

  বাতায়ন/শারদ/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন , ১৪৩২ শারদ | সম্পাদকীয়   উৎসবের অঙ্গীকার "নারীতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে পুরুষতন্ত্...

Thursday, August 28, 2025

শ্রাবণের ধারার মতন পড়ুক ঝরে [১ম পর্ব] | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/মাসিক/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/১৯তম সংখ্যা/১৩ই ভাদ্র, ১৪৩২
ধারাবাহিক গল্প
পারমিতা চ্যাটার্জি
 
শ্রাবণের ধারার মতন পড়ুক ঝরে
[১ম পর্ব]

"উদিশা অপূর্ব সুন্দরী, কালো মেঘের মতন একঢাল চুল, গায়ের রং পাকা গমের মতন, চোখ দুটি তো অসাধারণ সুন্দর। রঙ্গন মুগ্ধ হয়ে গেল।"


বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেঘ দেখতে-দেখতে রঙ্গন বারবার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছিল, এরকম মেঘলা দিনে সে আর তৃষা কাজ করতে-করতে হঠাৎ উদাস হয়ে যেতরঙ্গন বলত,

-বৃষ্টি এলে বেশ ভাল হয় বল
তৃষার নিরুত্তাপ উত্তরে রঙ্গনের রঙিন মনটা কোথায় যেন ধাক্কা খেত সে বলত,
-আকাশ যেরকম কালো করে এসেছে বৃষ্টি এলো বলে কী করে যে বাড়ি ফিরব থাক এখন এই পর্যন্ত আবার কাল দেখা যাবে, আজ বাড়ির পথ ধরি
-হোক-না বৃষ্টি আমরা একটু ভিজব
-তোর মতন আমি তো পাগল নই, বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর এলে কাজ অনেক পিছিয়ে যাবে
-চল তোকে তাহলে বাসস্ট্যান্ড অবধি এগিয়ে দিই।
-হ্যাঁ চল।
তৃষা একবারও বলত না যে তোর বাসস্ট্যান্ড তো উলটো দিকে, দেরি হয়ে গেলে তুইও ভিজে যাবি না তা কোনদিন বলেনি ওর কাছে ওর কাজ আর কেরিয়ারের চেয়ে আর কোন আবেগ কাজ করত না কিন্তু অবুঝ রঙ্গনের তা বুঝতে যে কেন এত দেরি হল, তা সে আজও বুঝতে পারে না ধাক্কাটা খেল যেদিন জানল তৃষা তার অজান্তে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশের পথে পারি দিচ্ছেসে অবাক হয়ে বলল,
-আমাকে একবার জানালি না?
-জানাবার কী আছে? কাজটা কাজই, সেটা যে যেভাবে সুযোগ পাবে আমি সুযোগ পেয়েছি তাই যাচ্ছি
-তাহলে আমাদের এতদিনের বন্ধুত্ব ভালবাসার কি কোন মূল্যই ছিল না তোর কাছে?
-দেখ সত্যি কথা বলতে ভাল আমি তোকে কোনদিন বাসিনি আর যদি বলিস বন্ধুত্ব? সেটা কাজ করতে গেলে এমন অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হয় তবে সেটা সাময়িক আবার যে যার পথে সুযোগ মতন এগিয়ে যায়
-আমি কিন্তু অন্যরকম ভেবেছিলাম
-সেটা তোর প্রবলেম, আমি কী করতে পারি তার জন্য।
এরপর রঙ্গন খুব আঘাত পেয়েছিল মনে হয়েছিল আর কোনদিন সে কাউকে ভালবাসতে পারবে না তার কাজ থেকে মন চলে গিয়েছিল, অর্ধ সমাপ্ত এত যত্নের রিসার্চ ওয়ার্কও মাঝপথে এসে থেমে যাওয়ার মুখে। বাবা-মা প্রফেসর অনেক বুঝিয়ে শেষপর্যন্ত সে কাজে মন দিতে পারল তার নিজের অনেক মূল্যবান তথ্য তৃষাকে দিয়েছিল আজ রঙ্গনের মনে হল সে সত্যি খুব বোকা, কিন্তু কী করবে? সে যে ভীষণ রোমান্টিক আবেগপ্রবণ।
কিন্তু ভগবানের আশীর্বাদই হোক বা তার বাবা-মায়ের পুণ্যেই হোক সে রিসার্চ সম্পূর্ণ করল অত্যন্ত সফলতার সাথে। এখন সে কলকাতা ইউনিভার্সিটির ফিলোজফির এইচওডি। হ্যাঁ সে শিকাগো ইউনিভার্সিটির ডাকে, ইউকেতে নটিংহার্ম ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে বহুবার বিদেশে গেছে সে আজ একজন সফল প্রফেসর। তৃষাকে তার জীবন থেকে মুছে ফেলতে পেরেছে, হয়তো খুব কষ্ট হয়েছিল কিন্তু সময় তো সবকিছুকে ভুলিয়ে দেয় তার অজান্তেই তৃষার অস্তিত্ব কখন তার জীবন থেকে সরে গেছে আজ আর তা মনে নেইতার বাবা-মায়ের ইচ্ছায় সে বিয়েতে মত দেয় নিজেরও মনে হয় তার এবার একজন সত্যিকারের জীবনসঙ্গিনী দরকার যে তাকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলবে, যে হবে তার ভালবাসা, আর জীবনের প্রেরণা সেও যেন তার ভালবাসার মানুষটাকে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে পারে, আর তারও এগিয়ে চলার পথকে সে দেখিয়ে দিতে পারে।
সে মেয়ে দেখতে যাওয়ায় আপত্তি করে বলে,
-মেয়েরা কী আলু-পটল নাকি যে তাকে দেখতে যেতে হবে?
তার সাথে যার বিয়ের কথা এগচ্ছে তার নাম উদিশা নামটা শুনেই মনে হল এ প্রতিদিন তার জীবনে ভোরে ওঠা নতুন সূর্যকে তার কাছে এনে দেবে।
উদিশার বাবা-মায়ের আমন্ত্রণে সে গেল শেষপর্যন্ত উদিশার বাড়িতে। উদিশার বাবা বলেছিলেন,
-মেয়ে দেখার কথা কেন ভাবছ? দুজনে একটু কথা বলে দেখে নাও তোমাদের মানসিকতায় মিলবে কি না?
উদিশা সামনে এসে বসতেই তার মন ভরে গেল মেয়ে দেখার উপলক্ষে সে কোনরকম সাজগোজ করেনি, অবশ্য করার দরকারও হয়নি উদিশা অপূর্ব সুন্দরী, কালো মেঘের মতন একঢাল চুল, গায়ের রং পাকা গমের মতন, চোখ দুটি তো অসাধারণ সুন্দর। রঙ্গন মুগ্ধ হয়ে গেল সে তার থেকে বয়সে বেশ অনেকটাই ছোট সবে ইতিহাসে এমএ দিয়েছে, আর খুব ভাল রবীন্দ্রসংগীত গায় শান্তিনিকেতন সংগীত ভবন থেকে সে গান শিখেছে, অনেক নামকরা শিক্ষাগুরুর কাছেও আলাদা ভাবে তালিম নিয়েছে।
ওদের দুজনকে কথা বলার সুযোগ দিয়ে বড়রা একটু আলাদা হয়ে গেল। কী কথা বলবে, কীভাবে এগবে রঙ্গন বুঝতে পারছিলা না। তারপর বহুকষ্টে নিজের জড়তা কাটিয়ে রঙ্গন বলল,
-কী বলব বলুন তো? ঠিক এভাবে মেয়ে দেখতে আসাটা আমার নীতির বাইরে আপনার যদি আমার বিষয়ে কিছু জানার থাকে আপনি স্বচ্ছন্দে প্রশ্ন করতে পারেন
-আমি আর কী জানতে চাইব আমি তো আপনার তুলনায় অনেক সাধারণ
-একটা কথা বলি?
-হ্যাঁ
-নিজেকে কখনও সাধারণ ভাবার কোন কারণ নেই তোমার সরি মানে আপনার বয়স অনেক কম সামনের পথ তো পুরো বাকি?
-সংসার আর পড়াশোনা একসাথে কি চালাতে পারব? আর আপনি আমাকে তুমিই বলতে পারেন
রঙ্গন হেসে বলল,
-ঠিকই এত ছোট মেয়েকে আপনি বলতে ভাল লাগে না হ্যাঁ তুমি যেটা জানতে চাইলে আমার কাছে, তার সম্বন্ধে বলি, সাধারণত বাঙালি পরিবারে যেটা হয়ে থাকে বিয়ের পর মেয়েদের সব ইচ্ছা জলাঞ্জলি দিতে হয়, কিন্তু আমি আমার বাবা-মাকে যেটা বলেছিলাম তা কি শুনেছ?
-হ্যাঁ
-তবে তো জানোই আমার মনের কথা আমি চাই জীবনসঙ্গিনী এবং আমিও যেন তার যোগ্য সঙ্গী হয়ে তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে পারিঅর্থাৎ দুজনে হাত ধরে চলে একে অপরের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতে পারি, তার মধ্যে দুজনেরই বাবা-মায়ের দায়িত্ব যেন দুজনেই ভাগ করে নিতে পারি
-এরপর তো আর আমার বলার কিছু থাকতে পারে না
-মন থেকে বলছ তো?
-হ্যাঁ একদম মন থেকেই বলছি।
-তাহলে?
-তাহলে আর কী?
দুজনেই হেসে ফেললরঙ্গন মুগ্ধ হয়ে গেল ওর হাসিতে, রঙ্গনের চোখের সেই মুগ্ধতার ছায়ায় উদিশার চোখেও নেমে এল একরাশ মুগ্ধতা। রঙ্গন অনেকবার ভাবল তৃষার কথাটা তাকে বলবে নাকি? দুজনে যখন এক হয়ে মিলতে যাচ্ছে তখন তো কোন সত্য গোপন রাখা উচিৎ নয়, কিন্তু বলব-বলব করেও কেন যেন বলতে পারল না।
তারপর তো দুজনের মালাবদল হল, বিয়ে হল উদিশার চোখেও খুশি আর আনন্দ মিশ্রিত হাসি রঙ্গনের চোখ এড়িয়ে গেল না ওদের অনেকবার সবার অলক্ষ্যে পরস্পরের দৃষ্টি বিনিময় ও হাসির বিনিময় হয়ে গেল। খুশিতে আর তৃপ্তিতে রঙ্গনের মন আজ কানায়-কানায় পূর্ণ। তবু খচখচ করতে লাগল মনে, উদিশাকে সে জীবনের একটা পরম সত্য লুকিয়ে গেল সে তো এরকম নয়, সে সত্যকেই যে সবার ওপরে চিরকাল জায়গা দিয়েছে আজ কী ভয়ে বলতে পারল না, যদি উদিশা সব জেনে রাজি না হয়? নিজের প্রশ্নের উত্তর নিজেই খুঁজে বেড়াতে লাগল।
ফুলশয্যার রাত, সানাই বাজছে শ্রাবণ মাসে বিয়ে তাই বেশ বৃষ্টি পড়ছে। চারিদিকে ফুলের গন্ধ আর বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ দুইয়ে মিলে এক সুন্দর মোহময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
 
ক্রমশ

No comments:

Post a Comment

'ও মন তরে কে-বা পার করে...'


Popular Top 10 (Last 7 days)