প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা ~ ~ ~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

শারদ | উৎসবের অঙ্গীকার

  বাতায়ন/শারদ/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন , ১৪৩২ শারদ | সম্পাদকীয়   উৎসবের অঙ্গীকার "নারীতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে পুরুষতন্ত্...

Thursday, September 11, 2025

বাতাসে শরতের গন্ধ ও মন কেমনের টান [২য় পর্ব] | যাদব দাস

বাতায়ন/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/২তম সংখ্যা/৩রা আশ্বিন, ১৪৩২
ধারাবাহিক গল্প
যাদব দাস
 
বাতাসে শরতের গন্ধ ও মন কেমনের টান
[২য় পর্ব]

"ধান কাটার ব্যাপারটা অজুহাত। জামাটা কতবার পরবেকতবার খুলবে, একে বলবেওকে বলবে এই তো ওদের আনন্দ। শুধু ওদের কেনকার না আনন্দ হয়অঞ্জু যেন মুহূর্তকালের জন্যে ফিরে যায় আপন শৈশবে।"


পূর্বানুবৃত্তি মৃৎশিল্পী কানাই আর তার সঙ্গী ভোলার গ্রামের পূজামণ্ডপেই অতিথিবাস। কানাইয়ের পা পড়তেই আগমনির সুর ওঠে ফুলবাড়িতে। শুরু হয় পিকলুর পুজো। তার কল্পনার অবারিত দ্বার। দুটি কিশোর-কিশোরী গিয়েছিল অঞ্জনার তীরে। তাদের মনে কাশের দোলা। তারপর…
 

-মা, ও মা
ডাকল সে। মা উঠোনে। ওখানেই উনুন পাতা। নারকেল পাতা ও ছোট ছোট শুকনো ডালের আঁচে মাটির হাঁড়িতে ভাত চাপানো। জ্বাল দিতে দিতেই সাড়া দিল,

-কী রে ডাকছিস কেন?
-পুজো চলে এলো। আমার নতুন জামা কই?
পিকলুর চোখে নতুনের স্বপ্ন। মা জানায়,
-হবে রে হবে। তোর বাবার মনে আছে। কটা দিন সবুর কর।
-সবার নতুন জামা হয়ে গেছে
রাজা আর তিন্নি বলল।
-অমন বলে! এখনও ধান ওঠেনি।
 
মাঠের পর মাঠ হলুদ ধানের স্রোত। কদিনের মধ্যেই গৃহস্থের উঠোন পূর্ণ হবে সেই পীতাভ সোনায়। চাষির চোখে খুশির ঝিলিক। আবার কল্পনানদীতে অবগাহনের পালা। আমাদের পিকলুর মায়ের পরিচয় তো আগেই পেয়েছি। কিন্তু বাবা? ওই তো মাথায় গামছা জড়ানো, হাতে কাটারি, পরনে লুঙ্গি, উদলা গা, ওই যে এদিকে আসছে, ওই লোকটাই তো পিকলুর বাবা। কী যেন নাম? নামে কী যায় আসে? দেওয়াই যাক না একটা নাম। ধরা যাক নারায়ণ যাকে নারান বলেই সবাই ডাকে। নারাণের একটুকরো জমি। বিঘে পরিমাণও না। তাতেই ধান, সবজি এটা-ওটা যখন যা পারে রোয়। এখন আউশের চাষ। আউশ কাটার সময় হয়ে গেছে। মজুর নেয় না নারা। জমিতে একাই শ্রম দেয়। তাতে দুটো বেশি পয়সার মুখ দেখতে পারে। উঠোনে পা রাখতেই অঞ্জু বলল,
-শোনো তোমার ছেলের আবদার।
নারা জবাব দেয়,
-শোনো তুমি।
-কী রে এবার বল বাবার কাছে
অঞ্জু বাবার কাছে ভিড়িয়ে দিতে চায় পিকলুকে। পিকলু ছুটে পালায়। বাবার কাছে আবদার করার সাহস কই তার? যত আবদার মায়ের কাছে। তাই বলে কি বাবা জানে না? পাল এসে গেছে মণ্ডপে। আর পাল আসা মানেই ফুলবাড়ির দুর্গাপূজার সূচনা। পিকলুর মন নতুন জামার জন্যে আকুল। কিন্তু আসল কথাটা লুকিয়ে রেখেছে নারা। বলতেই পারে। বললে সমস্যা নেই। তবু সে চায় ওদের একটা চমক দিতে।
-তোমার কাছে বলবে না। ভয় পায়। বাবু নতুন জামা চায়। পুজো এসেই গেল। দিতে যখন হবেই তখন আগেভাগেই দাও
অঞ্জুর কথার জবাবে নারা বলে,
-ধান কাটা হোক।
ধান কাটার ব্যাপারটা অজুহাত। জামাটা কতবার পরবে, কতবার খুলবে, একে বলবে, ওকে বলবে এই তো ওদের আনন্দ। শুধু ওদের কেন, কার না আনন্দ হয়? অঞ্জু যেন মুহূর্তকালের জন্যে ফিরে যায় আপন শৈশবে। দিনগুলো কেমন ফুরিয়ে গেল। নারা কলপাড়ে গেল। হাত-পা-মুখ-চোখ পরিষ্কার করে ভিতরে ঢুকল।
 
কদিন পরের কথা। বিকেল পড়ার আগেই হাজির। ডাক পেয়ে বেরিয়ে আসে অঞ্জু,
-আপনি?
বিস্মিত চোখ অঞ্জুর। কতদিন পরে দেখল ওকে। সম্পর্কে ভাশুর।
-কেন নারা কিছু বলেনি? কেমন মানুষ?
বলেই আসল কথা পাড়ল ভূপেশ,
-বাড়িতে দুর্গাপূজা। নারাণকে তো বলেছিলাম। বলেনি? বলেছিলাম আসব একদিন। কতদিন দেখাসাক্ষাৎ নেই।    
নারাণের দূর সম্পর্কের ভাই। বাড়ি নৈহাটি। ফুলবাড়ি থেকে পথ বেশি না। বাসে চাকদা যেতে ঘন্টা থেকে সওয়া ঘণ্টা। তারপরে শেয়ালদাগামী যে কোন ট্রেন। মাত্র সাত স্টেশন। অথচ যাতায়াত কদাচিৎ। শেষ কবে এসেছিল মনে নেই অঞ্জুর। নারা তখনও মাঠে।
-পিকলু
ডাকতেই ও হাজির। অঞ্জু ভূপেশকে দেখিয়ে বলল,
-প্রণাম করো, তোমার কাকা।
পিকলু শুনেছে তার এক কাকা আছে দূরে কোন শহরে, কিন্তু দেখেনি। সে প্রণাম করে। আশীর্বাদ করে ভূপেশ,
-বড় হও। শোনো, আমাদের বাড়িতে দুর্গাপূজা। তুমি কিন্তু যাবে।
অঞ্জু ওকে পাঠায় বাবাকে ডাকতে। নারা ফিরল মাঠ থেকে। ভূপেশ বেশিক্ষণ থাকেনি। ফিরতে হবে। সন্ধের পরে বাস নেই। যাওয়ার সময় ওদের পুনরায় মনে করে দিল, সপ্তাখানেক আগে যেন অবশ্যই যায়। আর পুজোর নতুন পোশাক দেবে তারাই। কেনাকাটা করার দরকার নেই।
পিকলুর সে কী আনন্দ! বাঁধ ভাঙা ঢেউয়ের মতো মন। সে ছুটে যায় অঞ্জনার তীরে। নদীকে ডেকে বলে,
-কী আনন্দ, কী আনন্দ! আমি কাকার বাড়ি যাব।
নদী কুলকুল ধ্বনিতে বয়ে চলে আপনমনে। জবাব দেয় না। বটগাছের পাশে বড় খেলার মাঠ। ওখানে রোদের মধ্যে ছুটে বেড়ায় পিকলু,
-এবার পুজোয় আমি কাকার বাড়ি যাব। মস্ত বাড়ি। ওখানেই কাটবে পুজো। কী মজা! কাকা বলেছে নতুন জামা দেবে, প্যান্ট দেবে আর সাতদিন আগেই যেতে।
 
ক্রমশ

No comments:

Post a Comment

'ও মন তরে কে-বা পার করে...'


Popular Top 9 (Last 30 days)