প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা ~ ~ ~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

শারদ | উৎসবের অঙ্গীকার

  বাতায়ন/শারদ/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন , ১৪৩২ শারদ | সম্পাদকীয়   উৎসবের অঙ্গীকার "নারীতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে পুরুষতন্ত্...

Saturday, September 13, 2025

মউ [৩য় পর্ব] | অজয় দেবনাথ

বাতায়ন/ধারাবাহিক উপন্যাস/সাপ্তাহিক/৩য় বর্ষ/২তম সংখ্যা/১০ই আশ্বিন, ১৪৩২
ধারাবাহিক উপন্যাস
অজয় দেবনাথ
 
মউ
[৩য় পর্ব]


Statutory warning.
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। Smoking is harmful to your health.
অ্যালকোহল সেবন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। Alcohol consumption is harmful to your health.

"মান্তাদির গায়ের গন্ধ, নরম নরম হাত সুখের বেশ ভাল লাগছিল। কেমন একটা অদ্ভুত মাদকতা আছে, সম্মোহন করে রাখে। ইচ্ছে করে চোখ বুজে শুধু গন্ধ শোঁকে। অনেকক্ষণ লুডো খেলে চলে গেল, যাবার আগে বলে গেল পরেরদিন ঘোষালদের পুকুরে স্নান করতে যাবে, সুখও যেন সঙ্গে যায়।"


পূর্বানুবৃত্তি আনন্দবাজারে তার গল্প মনোনীত হয়েছে। জানতে চাইছে প্রয়োজনীয় এডিটিং-এ তার আপত্তি আছে কিনা। আনন্দে কী করবে বুঝতে পারছে না। চিৎকার করে সবাইকে এখুনি জানাতে ইচ্ছে করছে। তার স্বপ্ন, তার প্রেম, তার প্রেরণা শুভ্রাকেই জানাবে সবার আগে। তারপর…
 

কলেজ… কলেজ স্ট্রিট… কলেজ হস্টেল… কলেজের সেরা সুন্দরীদের অন্যতম, বড়লোকের একমাত্র মেয়ে স্বভাবে নাকউঁচু শুভ্রার পিছনে ছেলেদের লাইন পড়ে যেত। কিন্তু শুভ্রা তার পিছন ছাড়ত না। সুখ অনেক চেষ্টা করেও এড়িয়ে যেতে পারেনি। শুভ্রার মতো সুন্দরীকে এড়িয়ে চলাই মুশকিল। ঠিক যেন স্বপ্নের পরি, যেন পৃথিবীর কারোর সঙ্গেই মেলানো যায় না। কোন্‌ পুরুষ না চায় এমন স্বপ্নের মেয়ের সঙ্গ পেতে, ঘর বাঁধতে।

 
উপায়ান্তর না পেয়ে সুখ অনেক বলেছে, বোঝানোর চেষ্টা করেছে শুভ্রাকে। তার সঙ্গে শুভ্রাদের মেলে না কোনো দিক থেকেই। শুভ্রার বাবা-মা দুজনেই নাম করা ডাক্তার। সে গ্রামের গরিব ঘরের ছেলে, বাড়িতে বিধবা বৃদ্ধা মা ছাড়া কেউ নেই। থাকার মধ্যে শুধু টিনের চাল দেওয়া দু-কামরার একচালা ঘর। ছোটবেলায় বাবা মারা যাবার পর মা সারাজীবন ধরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অনেক কষ্ট করে তাকে মানুষ করেছেন, লেখাপড়া শিখিয়েছেন। তার মাথার ওপর অনেক দায়িত্ব। তাকে অযথা প্রলোভন না দেখাতে। সে আলেয়ার হাতছানিতে দৌড়োতে রাজি নয়। বালিগঞ্জে শুভ্রাদের প্রাসাদোপম অট্টালিকা, ঠাকুর, চাকর, দারোয়ান, গাড়ি, তাছাড়া আরামবাগে বাগানবাড়িও আছে। কিন্তু শুভ্রা নাছোড়বান্দা। অনেক অনুরোধে সুখ একদিন গিয়েছিল ওদের বাড়ি।
 
ওর বাবা-মা দুজনে দুটো হসপিটালে, হসপিটাল-চেম্বার শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত্রি। কাজের লোক ছাড়া বাড়ি ফাঁকা। স্টাডিরুম পার করে শুভ্রা সরাসরি বসিয়েছিল বেডরুমে। শুভ্রাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছিল, এমনিতেই শুভ্রা সুন্দরী। আজ পরেছে হালকা পিঙ্ক-রঙা গোল-গলা শর্ট ঝুলের ফুল-হাতা একটা গেঞ্জি, সঙ্গে একটা শর্ট্‌স, বুকের ওপর কায়দা করে লেখা ‘টাচ-মি ইফ ইউ ক্যান’। ফরসা নির্লোম উন্মুক্ত পা, নির্মেদ পেট, নাভি দেখা যাচ্ছে। স্তনযুগল প্রকট। এটা-ওটা কথার মাঝে হঠাৎই জড়িয়ে ধরে সুখের ঠোঁটে আলতো চুমু খেল শুভ্রা। হতভম্বের মতো আড়ষ্ট হয়ে কী করা উচিত বুঝতে পারছিল না সুখ। শুভ্রা ওকে ছেড়ে দিয়ে বলেছিল, “বুদ্ধু, গাঁইয়া একটা।” তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে বলেছিল, “আই লাভ ইউ সুখ, রিয়েলি আই লাভ ইউ। তুমি আমাকে ভালবাস না?”
 
হয়তো শুভ্রা বুঝে নিতে চাইছিল তার প্রতি এই অনাগ্রহের কারণ কী। এখনও ওকে পছন্দ করে না সুখ, না কি প্রথমদিনেই এতটা… বাড়াবাড়ি হিসেবে নিল। কিন্তু কলেজে, ক্যান্টিনে বা পার্কে যথেষ্ট চটুল আড্ডা-ইয়ার্কি দিয়েছে তারা। এমনকি কোনও কারণ ছাড়াই টুকটুকে লাল গোলাপ দিয়ে বলেছিল,
-হ্যাপি রোজ-ডে ইন অ্যাডভান্স, দিস ইজ অনলি ফর ইউ।
 
সে কী কিছুই বোঝে না, ন্যাকা নাকি! না কি গ্রামে অন্য কাউকে কথা দেওয়া আছে, অন্য কাউকে ভালবাসে! মানুষ বোঝা অত সহজ নয়। পরমুহূর্তেই নিজেকে প্রবোধ দেয়, না না, সুখ তার সঙ্গে এমন করবে না। তাছাড়া প্রেম করা ছেলে দেখলেই বোঝা যায়। চাউনিটাই অন্যরকম, সবসময় খালি ছোঁকছোঁক। সুখ তেমন ছেলে নয়।
 
সে কী ছোট হয়ে গেল, ঘৃণ্য হয়ে গেল সুখের চোখে! অথবা যা কিছু সে ভাবছে তার কোনটাই নয়। মেয়েদের ব্যাপারে, প্রেমের ব্যাপারে নেহাতই অনভিজ্ঞ, নিতান্তই আনাড়ি দুগ্ধপোষ্য শিশু। কিন্তু স্বপ্ন… ছোটবেলা থেকেই তো মানুষ স্বপ্ন দেখে ছেলে কিংবা মেয়ে। বাবা-মায়ের কাছে শুনেছে, সে নিজেও জানে। আচ্ছা গ্রামের ছেলেমেয়েরা কী প্রেম করে না! তার ধারণা গ্রামের মানুষ অনেক বেশি খোলামেলা। শহরে নিউক্লিয়াস-ফ্যামিলির মানুষই বরং ঘেরাটোপের মধ্যে বদ্ধ জীবন কাটাতে বাধ্য হয়। না, আজ এ প্রশ্নের ফয়সালা সে করবেই।
 
গ্রামের জ্যৈষ্ঠ দুপুর। সুখ তখন ক্লাস সিক্সে পড়ে। স্কুলে গরমের ছুটি চলছে। গরমে হাঁসফাঁস করছে চারদিক। বর্ষা আসতে দেরি আছে। একটুও হাওয়া নেই, গাছের পাতা নড়ছে না। বাঁশ গাছগুলো নিঝুম দুপুরে কেমন ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে। নিস্তব্ধ দুপুরে কুবো পাখি, ছাতার, হাঁড়িচাচা, ফিঙে, দোয়েল, ঘুঘু, আরও কত পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত তথ্য অনুযায়ী, পক্ষীবিশারদদের কথা থেকে জানা যায়, ঘুঘু পাখির জীবনে একটাই সঙ্গী। যার সঙ্গে জোড় বাঁধে তার সঙ্গেই আজীবন কাটায়। কোনও কারণে একজন মারা গেলে অন্য জন বিরহে একাই কাটিয়ে দেয়। সেই তথ্য যদি সত্য হয়, জীবজগতে ঘুঘু পাখিই বোধহয় একমাত্র ব্যতিক্রম।
 
কমলামাসির দিদির মেয়ে মান্তাদি, পাশের গ্রামে বিয়ে হয়েছে বছরখানিক। মায়ের সঙ্গে নেমন্তন্ন খেতে গিয়েছিল সুখ, কন্যাযাত্রীও গিয়েছিল। বেশ বড় করে প্যান্ডেল হয়েছিল। টিউবলাইট দিয়ে সাজানো আলোর বন্যা দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল। কাছে গিয়ে দেখেছে টুনিলাইটেরও লম্বা চেন ছিল কিন্তু টিউবলাইটের আলোয় বোঝা যাচ্ছিল না। প্যান্ডেলের মাঝখানে ইয়া বড় একটা ঝাড়বাতি। মান্তাদি একটা সিংহাসনে বসেছিল, পুজোর সময় কোনও কোনও ঠাকুর যেমন বসে থাকে। বরটাকে বেশ দেখতে, লম্বা, শ্যামলা গায়ের রং, মুখটা উজ্জ্বল, হালকা গোঁফ আছে, কিন্তু চোখদুটো বেমানান, কেমন ছোট ছোট। ওরা বেশ বড়লোক।
 
মান্তাদি ক-দিনের জন্য বেড়াতে এসেছে। সেদিন দুপুরে ঘুরতে ঘুরতে তাদের বাড়ি এল। মায়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ এটা-সেটা গল্প করল, মা কাজে ব্যস্ত ছিল বলে সুখের কাছে এসে বলল লুডো খেলতে। লুডো খেলতে খেলতে মান্তাদি খুব হাসছিল আর গায়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছিল। মান্তাদির গায়ের গন্ধ, নরম নরম হাত সুখের বেশ ভাল লাগছিল। কেমন একটা অদ্ভুত মাদকতা আছে, সম্মোহন করে রাখে। ইচ্ছে করে চোখ বুজে শুধু গন্ধ শোঁকে। অনেকক্ষণ লুডো খেলে চলে গেল, যাবার আগে বলে গেল পরেরদিন ঘোষালদের পুকুরে স্নান করতে যাবে, সুখও যেন সঙ্গে যায়।
 
ক্রমশ

6 comments:

  1. দীপক বেরাSeptember 27, 2025 at 1:52 PM

    গল্পে একটা twist হল। বেশ ভালো এগোচ্ছে। চলুক...

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ ধন্যবাদ দীপকদা।

      Delete
  2. উপন্যাসটির ধারাবাহিকতায় এক বাস্তব প্রতিবেদন আছে। যতটুকু পড়লাম তাতে আমার মনে হচ্ছে মরুভূমির মরীচিকা যেমন ছোটায় আলেয়া যেমন মায়াবী আলো ছড়ায় এখানেও সেইজাতীয় কিছু বিষয় থাকতে পারে, জানার জন্য পুরো উপন্যাসের দিকে অধীর প্রতিক্ষায় নজর রাখলাম। 🙏

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার প্রতীক্ষার উত্তর নিশ্চয়ই দেবে মউ।

      Delete
  3. উপন্যাসটির ধারাবাহিকতায় এক বাস্তব প্রতিবেদন আছে। যতটুকু পড়লাম তাতে আমার মনে হচ্ছে মরুভূমির মরীচিকা যেমন ছোটায় আলেয়া যেমন মায়াবী আলো ছড়ায় এখানেও সেইজাতীয় কিছু বিষয় থাকতে পারে, জানার জন্য পুরো উপন্যাসের দিকে অধীর প্রতিক্ষায় নজর রাখলাম। 🙏

    ReplyDelete

'ও মন তরে কে-বা পার করে...'


Popular Top 9 (Last 30 days)