বাতায়ন/শারদ/ছোটগল্প/৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন, ১৪৩২
শারদ | ছোটগল্প
রনসুদাস জিতু
শারদীর
ভালবাসা
শারদ | ছোটগল্প
রনসুদাস জিতু
"বিসর্জনে নদীর ঘাটে দাঁড়িয়ে দু’জনেই চোখ ভিজিয়ে ফেলল। কিন্তু এবার ভিড়ের মধ্যে অর্পিতা একা থাকল না, অয়ন তার হাত ধরে রইল। শারদীয় উৎসব শেষ হলেও অর্পিতা জানত এবার তার জীবন নতুন মোড় নিল।"
কলকাতার ব্যস্ত শহরে কাজের চাপে জর্জরিত অর্পিতা বছরভর বাড়ি ফিরতে পারে না। কিন্তু শরৎ এলেই মনটা কেমন করে ওঠে। ছোটবেলায় সে প্রতিটি পুজো কাটাত মফসস্ল শহরের বাড়িতে, মা-বাবার সঙ্গে। অঞ্জলি দেওয়া, প্রতিমা দর্শন, ভেলকি খেলা দেখা— সবকিছু এখনও তার চোখে ভাসে।
এবারও অফিস থেকে ছুটি নিয়ে পুজোর আগেই সে
ফিরল। স্টেশনে নামতেই শিউলির গন্ধে ভরে উঠল মন। বাড়ির উঠোনে এসে দেখল মা ব্যস্ত
নকশিকাঁথা মেলে ধরতে, বাবা আলো ঝোলানোর
খুঁটি ধরতে সাহায্য করছেন। ছোটভাই ঋত্বিক বন্ধুদের নিয়ে প্রতিমা মণ্ডপ সাজাতে
গেছে।
গ্রামে পৌঁছে অর্পিতা টের পেল এই উৎসব কেবল আনন্দ নয়, মানুষের সম্পর্কের বাঁধনও। প্রতিবেশী কাকিমারা সবাই তার খবর নিতে এলেন। কেউ বললেন, “দেখি অর্পি কেমন হয়েছে রে! পুরো শহুরে হয়ে গেছিস তো।” আবার কেউ গল্প করতে বসে গেলেন।
সপ্তমীর রাতে পাড়ার
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অর্পিতা পুরোনো বন্ধু অয়নকে দেখতে পেল। শৈশবের বন্ধু, কিন্তু সময়ের স্রোতে দূরে চলে গিয়েছিল। আবার হঠাৎ দেখা হয়ে
গেল পুজোর আলোয়। কথা বলতে বলতে পুরোনো স্মৃতি ফিরে এল— শিউলি কুড়োনো সকাল, ঢাকের তালে নাচ শেখা,
নদীর
ধারে গল্প।
অষ্টমীর দিন তারা একসাথে
অঞ্জলি দিল। দু’জনের চোখাচোখি হতেই এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করল। মনে হল এই উৎসব যেন
তাদের নতুন করে জুড়ে দিচ্ছে। পুজোর ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক আবার খুঁজে
পাওয়া গেল।
নবমীর রাতে অয়ন অর্পিতাকে নিয়ে গেল মণ্ডপের আলোয় ভরা পথে। চারদিকে আলো ঝলমল করছে, ঢাকের তালে তালে মানুষ নাচছে। অয়ন হঠাৎ বলল, “জানিস, এতদিন বাইরে ঘুরলাম, কিন্তু বুঝলাম, আসল আনন্দ এখানেই, শারদীর এই উৎসবেই।” অর্পিতার মনে হল সত্যিই তো, বছরভর যতই ব্যস্ততা থাকুক, এই কয়েকটা দিন সবকিছু ভুলে সবাই এক হয়ে যায়। এ যেন ভালবাসার উৎসব।
নবমীর রাতে অয়ন অর্পিতাকে নিয়ে গেল মণ্ডপের আলোয় ভরা পথে। চারদিকে আলো ঝলমল করছে, ঢাকের তালে তালে মানুষ নাচছে। অয়ন হঠাৎ বলল, “জানিস, এতদিন বাইরে ঘুরলাম, কিন্তু বুঝলাম, আসল আনন্দ এখানেই, শারদীর এই উৎসবেই।” অর্পিতার মনে হল সত্যিই তো, বছরভর যতই ব্যস্ততা থাকুক, এই কয়েকটা দিন সবকিছু ভুলে সবাই এক হয়ে যায়। এ যেন ভালবাসার উৎসব।
দশমীর সকালে সিঁদুর খেলায় অর্পিতা আর অয়নও যোগ দিল। হাসি-মজার মধ্যে একে অপরের গালে সিঁদুর মাখিয়ে দিল তারা। যেন সম্পর্কের নতুন বাঁধন বাঁধা হল। বিসর্জনে নদীর ঘাটে দাঁড়িয়ে দু’জনেই চোখ ভিজিয়ে ফেলল। কিন্তু এবার ভিড়ের মধ্যে অর্পিতা একা থাকল না, অয়ন তার হাত ধরে রইল। শারদীয় উৎসব শেষ হলেও অর্পিতা জানত এবার তার জীবন নতুন মোড় নিল। এই উৎসবেরই হাত ধরে ফিরল পুরোনো ভালবাসা, নতুন স্বপ্নের শুরু হল।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment