প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা ~ ~ ~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

শারদ | উৎসবের অঙ্গীকার

  বাতায়ন/শারদ/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন , ১৪৩২ শারদ | সম্পাদকীয়   উৎসবের অঙ্গীকার "নারীতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে পুরুষতন্ত্...

Saturday, September 13, 2025

প্রবাসে পুজোর সাজে | বন্দনা সেনগুপ্ত

বাতায়ন/শারদ/হলদে খাম/৩য় বর্ষ/২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন, ১৪৩২
শারদ | হলদে খাম
বন্দনা সেনগুপ্ত
 
প্রবাসে পুজোর সাজে

"অনেক অনেক ভালবাসা পাঠালাম। এত্ত এত্ত চুমু পাঠালামরোজ একটু করে খরচ কোরো। চুমু দিয়ে অবশ্য কোন কাজ করা যায় না। তাই তোমার অ্যাকাউন্টে টাকাও পাঠিয়ে রেখেছি। যা দরকার তুলে খরচ কোরো।"


প্রিয়তমাসু কলি,

প্রথমেই তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসা জানাই। মা ও বাপিকে আমার প্রণাম জানিও। আমার আদরের ফুলকলি শিউলি ভাল আছে নিশ্চয়ই। যতদিনে তুমি এই চিঠি পাবে, ততদিনে বোধহয় ওর স্কুলে পুজোর ছুটি পড়ে যাবে। আর, আমার শালাবাবু অনি কবে কলেজ-হোস্টেল থেকে ফিরবে? গত বার ও জয়ন্তী বলে একটি মেয়ের কথা বলেছিল। ব্যাপারটা কোন দিকে এগোচ্ছে জেনো এবং আমাকে জানিও। আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছি।

 
তুমি কেমন আছ? এতদিনে কুট্টুস নিশ্চয় তোমাকে লাথি মারতে শিখেছে। গত চিঠিতে তুমি বলেছিলে যে ওর নড়াচড়া তুমি বেশ বুঝতে পারছ। এখানে আমার ডাক্তারবন্ধু চারুমতির কথা তোমার মনে আছে নিশ্চয়। ও তোমাকে বলতে বলেছে যে বেবির নড়াচড়ার দিকে তীক্ষ্ণ লক্ষ্য রাখতে হবে। একটুও এদিক-ওদিক মনে হলেই সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যাবে। একদম দেরি করবে না। কথাটা মনে রেখ কিন্তু। ভুলো না। আর, নিজের দিকে ডবল লক্ষ্য রেখ। কুট্টুসের ভালমন্দ তো তোমারই হাতে।
 
এবার আসি দুঃখের কথায়। আমি ছুটি পাইনি গো! খুব চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু, মেশিনটা আমাদের দেওয়ালির পরেই কমিশনিং করতে হবে। কাজেই, এখন একমাত্র যমে ডাকলেই ছুটি পাব। না না। রাগ কর-না প্লিজ। তোমাকে ছাড়া কোথাও গিয়ে সুখ পাব না গো। যেতেও চাই না। তাছাড়া কুট্টুস আসছে! তাই বসকে বলেই রেখেছি যে ও যখন পৃথিবীতে আসবে তখন পাক্কা পনেরো দিন মেটারনিটি লিভ নেব। আর, পনেরো দিন নেব যখন তুমি চেন্নাই আসবে। তার পরেও আর ছুটি বাকি থাকবে, যা আমি আমাদের দরকার মতো নেব। খুশি?
 
চেন্নাইতে লোকে ঘরে ঘরে দুর্গাপুজো পালন করে। নবরাত্রির প্রথম দিন নানানরকম মূর্তি পুতুল ইত্যাদি সাজিয়ে সামনে ঘট বসায়। এখানে বলে “বোম্মাই গোলু”। অনেকে আবার শস্যপূর্ণা বসুন্ধরার প্রতীকরূপে নানানরকম অঙ্কুরিত শস্য রাখে। দিনে দুবার করে ভোগ দেয়। একবার নোনতা, নানারকম শুকনো সুন্ডল দেয়। একবার নানানরকম মিষ্টি পায়সম। এসব সৌমিত্র বলল। ও তো এখানে দু বছর আছে। কিছু কিছু জানে। আমাকে কেউ খাওয়ালে তবে বুঝব এগুলো কী জিনিস! তাছাড়া প্রায় সবাই এয়োস্ত্রীদের বাড়িতে ডেকে জল মিষ্টি খাইয়ে হলুদ, সিঁদুর, পান, কলা, নারকেল, আয়না, চুড়ি, কাপড় ইত্যাদি যে যা পারে উপহার দেয়। তুমি এখানে থাকলে কেউ না কেউ তোমাকেও ডাকত।
 
তবে, শুনলাম এখানে বাঙালি দুর্গা পূজাও হয়। দুটো বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন আছে, তারাই করে। একটা নাকি বেশ জাঁকজমক করেই হয়। রোজ দুপুরে ভোগ খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। সকাল-সন্ধ্যায় বেশ কয়েকটা খাবার দোকান বসে। জমিয়ে সকাল-সন্ধ্যার টিফিন এবং রাতের খাওয়া পাওয়া যায়। কালী বাড়িতেও পুজো এবং ভোগ প্রসাদ বিলি হয়। আর, বিহারী ও ওড়িয়া অ্যাসোসিয়েশন আছে। তারাও পুজো করে। তাছাড়া এয়ার ফোর্সের অফিসাররা একটা পুজো করেন। অবশ্য এটা দেখতে যাওয়া যায় কিনা জানি না!
 
আমি আদৌ কিছু দেখতে পাব কিনা তাও জানি না। এখন ভীষ কাজের চাপ চলছে। সকালে ধর নটা নাগাদ বেরোই। ফিরতে ফিরতে নটা-দশটা-এগারোটাও হতে পারে। একদিন তো একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল বলে ফিরতে রাত দুটো হয়ে গেছিল। এত ক্লান্ত লাগে মাঝে মাঝে! তবুও, ভাগ্য ভাল যে তুমি এখন এখানে নেই। থাকলে তুমি একলা একলা পাগল হয়ে যেতে। আর, তোমাকে একলা রেখে শরীর খারাপ হলে কী করে সামলাব ভেবে ভেবে আমি পাগল হয়ে যেতাম। তাহলে কুট্টুস এসে দুই পাগল দেখে হেসে হেসে কুটিপাটি হত। কী বল? তুমিও একটু হাসো এবার।
 
একদম মন খারাপ করবে না। সবসময় হাসিখুশি থাকবে। তবে পুজোর সময় খুব বেশি ঘোরাঘুরি কোরো না। ক্লান্ত হয়ে পড়বে। ফুচকা ইত্যাদি বুঝে খেয়ো। কোন ভাবেই শরীর খারাপ হয় না যেন!
 
মেশিনটা কমিশনিং হয়ে গেলেই আমি আসব। পাক্কা। প্রমিস। লক কর দিয়া যায়! হা হা করে হাসো একবার প্লিজ! এত্ত এত্ত মিস করি তোমাকে। বলে বোঝাতে পারব না জানো! কাজ করতে করতেও তোমাকে ভেবে ফেলি। এই জন্য সৌমিত্র মাঝে মাঝে আমার পিছনে লাগে। কী করি বল! বউ ছেড়ে থাকা এত কঠিন কে জানত?
 
অনেক অনেক ভালবাসা পাঠালাম। এত্ত এত্ত চুমু পাঠালাম, রোজ একটু করে খরচ কোরো। চুমু দিয়ে অবশ্য কোন কাজ করা যায় না। তাই তোমার অ্যাকাউন্টে টাকাও পাঠিয়ে রেখেছি। যা দরকার তুলে খরচ কোরো। মা, বাপি, শিউলি ও অনির জন্য যা যা জামাকাপড় কিনতে চাও, মন খুলে কিনো। আর, নিজের জন্য অন্তত দুটো পছন্দসই ভাল শাড়ি কিনবে। একটা পরে অষ্টমীর অঞ্জলী দেবে। আর, অন্যটা পরে কুট্টুসকে‌ কোলে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি আসবে।
 
এবার রাখি। ভাল থেকো। আমার জন্য। কুট্টুসের জন্য। আমিও তোমাদের জন্য ভাল থাকব।
 
একমাত্র তোমারই
ঋত্বিক
 

No comments:

Post a Comment

'ও মন তরে কে-বা পার করে...'


Popular Top 9 (Last 30 days)