
বাতায়ন/শারদ/ছোটগল্প/৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন, ১৪৩২
শারদ | ছোটগল্প
কাঞ্চন
চক্রবর্তী
বিধিলিপি
"কিছুক্ষণ পরে ট্যাক্সি তার যাত্রীকে নিয়ে ফিরে যায়। সেদিকে তাকিয়ে তিথি বুকের ভিতরে একটা অন্যরকম কান্না অনুভব করে। সেটা কী না পাওয়ার বেদনা নাকি মন থেকে চিরতরে হৃদয়কে মুক্তি দেবার হাহাকার! তা বুঝে উঠতে পারে না তিথি।"
লকডাউন কালে গৃহবন্দি দশায়
ভার্চুয়াল জগতের দৌলতে তিথি ও হৃদয়ের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের আদানপ্রদানে প্রথম
পরিচয়। সেখান থেকে ম্যাসেঞ্জার হয়ে কয়েক মাসের মধ্যে সম্পর্কটা গাঢ় হতে হতে এক সময়
হোয়াটসঅ্যাপে এসে আরও দানা বাঁধতে থাকে। প্রেমের কবিতায় রবি ঠাকুরের কোটেশনে
পরস্পরের চ্যাট বক্সের গ্রাফ ক্রমেই উঁচুর দিকে উঠতে থাকে।
একদিন তিথি সাহস করে হৃদয়কে ফোন করে,
ফলে যা
হবার তাই হল। তিথির প্রতি হৃদয় আরও দুর্বল হয়ে উঠল। ধীরে ধীরে ওদের প্রেমালাপ gaseous পর্যায় থেকে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার
মাধ্যমে Crystal form নিল। হৃদয়ের কন্ঠস্বর
ও শব্দ চয়ন তিথিকে যেমন মুগ্ধ করেছে তেমনি হৃদয় মুগ্ধ হয়েছে তিথির কথার মাধুর্যে।
এই গৃহবন্দি দশায় ওরা এইভাবেই মুক্তির আনন্দ খুঁজে পেয়েছিল। ধীরে ধীরে তিথির মন
ব্যাকুল হয়ে ওঠে ছেলেটির সাথে দেখা করার জন্য। একদিন হোয়াটসঅ্যাপে তার
ইচ্ছের কথা জানায় হৃদয়কে। হৃদয় বলে,
-বেশ তো আছি, আমার প্রতি তোমার যে
আকর্ষণ বা তোমার প্রতি আমার, দেখা হলে তাতে চিড়
ধরার সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় কি?
-এ কথা বলছ কেন?
তোমার
কি আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে না?
-অবশ্যই করে। তবে কী জানো, আরাধ্য জিনিস যত দূরে থাকে তার প্রতি আকর্ষণ ততই বাড়ে। আমি
এই আকর্ষণ নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই।
হৃদয়ের কথাগুলো তিথির কাছে
কেমন হেঁয়ালির মতো লাগে। সেপ্টেম্বরে লকডাউন কিছুটা শিথিল হতে তিথির রিকোয়েস্টে কোন এক শনিবার ভিক্টোরিয়ার গেটে বেলা তিনটেয় ওদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক হয়। তিথি ওর দাদাকে নিয়ে ভিক্টোরিয়ার গেটে সময় মতো পৌঁছে যায়।
একটু পরেই তিথির মোবাইলটা বেজে ওঠে। ওপাশ থেকে সেই মন পাগল করা কন্ঠস্বর।
-আমি ট্যাক্সিতে আসছি গায়ে নীল শার্ট ট্যাক্সির নম্বর WBT 02 8465.
তিথির বুকের ভেতর ধুকপুক করতে
থাকে। কী করবে বুঝে উঠতে পারে না। ঠিক সেইসময় ওই একই নম্বরের
একটা ট্যাক্সি ভিক্টোরিয়ার গেট থেকে একটু দূরে এসে দাঁড়ায়। ট্যাক্সির দরজায় তিথির
কৌতূহলী অপলক দৃষ্টি ক্রমশ ঝাপসা হতে
থাকে নীল শার্ট পড়া এক ভদ্রলোক ক্র্যাচে ভর দিয়ে ট্যাক্সি থেকে নেমে চারদিকে তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে থাকে। তিথি
দাদার বুকে মাথা রেখে ডুকরে কাঁদতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে ট্যাক্সি তার যাত্রীকে নিয়ে
ফিরে যায়। সেদিকে তাকিয়ে তিথি বুকের ভিতরে একটা অন্যরকম কান্না অনুভব করে। সেটা কী না পাওয়ার বেদনা নাকি মন থেকে চিরতরে হৃদয়কে মুক্তি দেবার হাহাকার! তা
বুঝে উঠতে পারে না তিথি।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment