বাতায়ন/শারদ/রম্যরচনা/৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন, ১৪৩২
শারদ | রম্যরচনা
প্রদীপ
কুমার দে
প্যান্ডেলে
আমি, অসুর
আর ইনহেলার
ওরে বাপ-রে বাপ!
মোরে করে দে মাফ্!
পাঁই পাঁই করে ছুট
দৌড়াচ্ছি ফটাফট
কোথায় ভাই লুকাই
প্রাণে যে মরে
যাই!
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রতিমা
নিরীক্ষণ করছি, প্রতিমা আর তাদের বাহনদের
দেখছি আর মন ভরে যাচ্ছে। অসুরের দিকে দৃষ্টি যেতেই চক্ষু চরকগাছ। ওরে বাবা, এ যেন কেমন করে আমার দিকে ঢ্যাবঢ্যাব চোখে চেয়ে আছে না? আমার তো তাই-ই মনে হচ্ছে। চোখ দুটি মিটমিট করে খুলছে আর
বন্ধ করছে, তাই না? হ্যাঁ, ঠিক তাই! আমাকেই
গিলছে… ভাগ শালা তোকে কে দেখে? আমি কি তোকে দেখেছি? আমি তো মাকে… মাকেই...
ওরে বাপস! এ-যে মাকে ছেড়ে
আমার দিকে লাফিয়ে আসল… আমি এককালে দৌড়তাম খুব। সবাই দৌড়বীর
বলে ডাকত। আমার এখন বয়স হয়েছে হয়তো একটু ভারী হয়েছি তাবলে আমার সাথে দৌড়
প্রতিযোগিতায় নামা? অটো, টোটো, রিক্সা গাড়িকে কাটিয়ে ডচ্ করে ছুটছি। আমি শহুরে
লোক। কায়দা-ফায়দা সব গুলে খেয়ে হজম করে ফেলেছি। আর ও যদিও অসুর কিন্তু মা-র সুপারিশে ও স্বর্গের জীব। ও কী করে আমার সাথে
পারবে?
আমি ঘেমে-নেয়ে একশেষ! আর
ও তো হাঁপাচ্ছে...
অসুর হাঁপাচ্ছে? কোনদিন শুনেছেন?
কিন্তু
এখন সব্বাই দেখছে। মায়ের আদরে থেকে থেকে শক্তিধর অসুর এখন দেখি বাঁদর হয়ে গেছে। হবে
না কেন শহরে যে দূষিত পরিবেশ। অক্সিজেন সিলিন্ডারে ভরে ভরে রাখা... আর স্বর্গে? তুলনাবিহীন।
আমি এবার উল্টোপথে দৌড়ে এসে
ওকে ধরে ফেলি। ওর চোখে-মুখে জল দিই। খানিকটা থাকার পর ও নিজে একটু শান্ত হয়। তবুও হাঁপায়, তবে অনেকটাই কম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
-ইনহেলার দেবো?
-হইলে তো হয়!
-এই তুমি কি বাঙাল নাকি?
-লোকে তো তাই কয়?
-সে কী?
আমি তো অবাক!
-তুমি তাহলে
বাঙাল জাত?
-কেনে জাতে কী আসে যায়? তুমাদের লালন ফকিরে কয় নাই, জাতে কী আসে যায়?
-আমি কি তাই বলেছি ভাই?
আমি
জানতাম না তাই।
-ভাই না ছাই? দ্যাকোনি তুমি কী আরাইমে দামি স্যুট-বুটে নিজেরে মুইরা ছাড়সো? আর আমার লগে জুটেছে ফ্যালা একডা ন্যাকড়া?
-ও হো! তাই তুমি আমায় দেখছিলে?
-নয়ডো কি তুর পোলাপানের মুইখান দ্যাখতাছিলাম?
-তা তোমার আর কী অভাব? তুমি তো একেবারে দুনিয়ার শক্তিকে ধরে রেখেছ।
-তা যা আর বলোনি—
-কেন?
-তাতে আমার কী হইল? আমি যে তিইমিরে ছিলাম সেই তিইমিরেই রইয়েসি।
-আর কীই চাও?
-না না মোর চাওনের আর কী থাকুম? মোর ঘরে পোলাপান নাই ঠিকই, মা-বাপ তো মরে নাই। শাদি তো এখনো হইলোই নাই। আর কী
চাউমের রইল? সবই তো হইল। শালা
গুলামি কাইকে বইল্লে? দিন তারিখ এক হই গেইলো। অন্যের
পরিবারে আমি এক পোলা মিনসে যার হাতে পিইচবোইর্ডের ঢাইল-তলোয়ার।
আমি শালার! বাচ্চা শুয়ার!
-ও হো! ওইসব তা বন্ধন। তুমি তো মায়ের সাথেই
থাকো…
কথা শেষ করতে দিল না। তার
আগেই রুখে দিল আমায়,
-শালা পিহচবোইর্ডের তলোয়ার?
বুঝলাম ওর মনে একটা ক্ষোভ
জন্মেছে। আমি দেখলাম উলটো কেস। ভেবেছিলাম অসুর অসি নিয়ে আমায় তেড়ে আসবে, তা না এ আবার কী হল? দৌড়ে গিয়ে একটা ওষুধের দোকান থেকে পকেটমানি খরচ করে একটা ইনহেলার কিনে আনলাম।
-এই নাও, টানো—
-ভাল করছিস। দ্যা দ্যা...
হু হু করে ইনহেলার টেনে টেনে
চলল, মনে হল সবটুকু একেবারেই টেনে
নিল... হুঃ হুঃ করেই বিরাটাকার অসুর চিৎপটাং... আমিও ছঠফঠাং… পাক্কা চল্লিশ মিনিট
কেটে গেল। ঠায় বসে রইলাম।
যখন উঠে বসল তখন আমি ওকে ধরতে
গেলাম, দেখি ও কাঁদতে শুরু করে দিল। আমি
তো অবাক,
-আরে এক জোয়ান মরদ তুমি, কাঁদো কেন?
-কাঁদব নি তো কী করুম?
আমি শুনতেই চাই। ও আমায় দেখে,
-মুই আর থাকুম না। চইলে যাইব।
-কোথায় যাবে?
-যাইবা? যাইবে আরবিতে
-আরবে?
-টিক কয়েচো।
-কী করবে?
-কাম করুম। অসি ফ্যাইলা দিমু। কামই চাই-ই। ধনী হইব। স্যুট-বুট পইরে বিয়া
করুম।
-ও হো! তাই বলো! না না আমি যাবো না, তুমিই যাও...
আমি পিছুটান মারলাম। অসুর
ব্যাটা সামনের দিকে এগিয়ে চললে… ভাবছি ও কি সত্যিই চলে গেল? ভেবে আর লাভ নেই। প্যান্ডেলে গেলেই সব বোঝা যাবে!
সমাপ্ত
খুব আনন্দ পেলাম। শুভেচ্ছা সম্পাদক মহাশয়ের জন্য সকলের কাছে এই পাঠের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
ReplyDelete