প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা ~ ~ ~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

শারদ | উৎসবের অঙ্গীকার

  বাতায়ন/শারদ/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন , ১৪৩২ শারদ | সম্পাদকীয়   উৎসবের অঙ্গীকার "নারীতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে পুরুষতন্ত্...

Monday, September 15, 2025

অপেক্ষা | কবিতা পোদ্দার

বাতায়ন/শারদ/ছোটগল্প/৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন, ১৪৩২
শারদ | ছোটগল্প
কবিতা পোদ্দার
 
অপেক্ষা

"নবমীর পুজো। মা শূচিস্নান সেরে শিউলি তলে ফুল কুড়াতে কুড়াতে কইন্যার কথা ভাবতে ভাবতে কোথায় যে হারিয়ে গেলেন— এমন সময় ফোন বেজে উঠল। কইন্যার গলা।"


পেঁজা তুলো মেঘের বুক চিরে কালো কাকের পাখায় ভর করে সন্ধ্যা নামে। শ্বেত-শুভ্র বকের সারি রক্তিম মেঘ সাঁতরে উড়ে যায় নীড়ের পানে। শীতল শান্ত শিশির মেখে আশ্বিন আসে বাঙলার ঘরে ঘরে। পুজোর ম-ম গন্ধে দীর্ঘ অপেক্ষমান বাঙালি মন হয়ে ওঠে অস্থির, চঞ্চল। বঙ্গভূমি কাশ, শিউলি, পদ্ম, শালুক প্রভৃতি ফুলের জলসায় রঙিন উৎসবমুখর জীবন মেতে ওঠে দুর্গাপূজা পার্বণে। এমন সময় পৃথিবীর শ্রীময়ী আয়োজনের মাঝে মায়ের মনে পড়ে একমাত্র হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে।

 
বুকের পাঁজর ভেদ করে সে যন্ত্রণার কান্নার কাছে ঢাকের বাদ্য, রঙিন উৎসব ম্লান হয়ে যায়। আলমারিতে পূজার নতুন শাড়ি সাজানো। অষ্টমীর সকালে মা নতুন বস্ত্রে অঞ্জলি দেবেন দেবী দুর্গার চরণে। কোথায় যে সে চলে গেল? আজ একবছর হয়ে গেল, কোন খবর নেই। অঞ্জলি দেওয়ার ঠিক আগের মূহূর্তেই খোঁজ খোঁজ রব উঠল চারিদিকে। কোথাও পাওয়া গেল না কইন্যাকে। পুজোর নৈবেদ্য সব রইল পড়ে।
 
মানুষ মারা গেলে হয়তো তার শোক ধীরে ধীরে ক্লান্ত হয়ে আসে কিন্তু যে হারিয়ে যায় তাকে কি কখন ভোলা যায়? দীর্ঘ অপেক্ষার একটি বছর পর— মণ্ডপে মণ্ডপে অষ্টমীর সন্ধিপুজো চলছে সঙ্গে মন্ত্র ঢাক-উলু-শঙ্খ, এমন সময় বাইরে কে যেন ডাক দিলো মা নতুন শাড়ি পরে আমাকে নিয়ে চলো সন্ধিপুজো দেখতে। মা ঘরের চতুর্দিকে খুঁজলেন। কোথায়? কেউ কোত্থাও নেই। মা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছেন কইন্যার গলার স্বর। মা চিৎকার করে বললেন,
-কোথায় তুই? আয় আমার কাছে।
চতুর্দিকে নিস্তব্ধতার মাঝে একটাই কন্নার সুর ভেসে বেড়াচ্ছে,
-ফিরে আয় আমার বুকে—
শরতের আঙিনায় তখন শারদীয়া উৎসবের ঢাকের বাদ্য সঙ্গে কাঁসর-ঘন্টা মঙ্গল-আরতির ধুপের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন বঙ্গদেশ।
 
নবমীর পুজো। মা শূচিস্নান সেরে শিউলি তলে ফুল কুড়াতে কুড়াতে কইন্যার কথা ভাবতে ভাবতে কোথায় যে হারিয়ে গেলেন— এমন সময় ফোন বেজে উঠল। কইন্যার গলা।
-মা আমি হারিয়ে গেছি, তুমি আমায় ভুলে যেও।
ফোন কেটে গেল। হারানো প্রাপ্তি নিরুদ্দেশ বিষয়ে বিঞ্জাপন দেওয়া হলো।
 
এমনিভাবেই পৃথিবীর কত মায়ের সন্তান থেকেও হারিয়ে যায় পৃথিবীর কোথাও তারা হয়তো থাকে। দেখাও মেলে না, খোঁজও পাওয়া যায় না। মায়ের জীবন আজ অসম্পূর্ণ-অসহায় নিঃসঙ্গ-নিস্তব্ধ
 
সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

'ও মন তরে কে-বা পার করে...'


Popular Top 9 (Last 30 days)