প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা ~ ~ ~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

শারদ | উৎসবের অঙ্গীকার

  বাতায়ন/শারদ/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন , ১৪৩২ শারদ | সম্পাদকীয়   উৎসবের অঙ্গীকার "নারীতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে পুরুষতন্ত্...

Monday, September 15, 2025

শিল্পী | ডরোথী ভট্টাচার্য

বাতায়ন/শারদ/গল্পাণু/৩য় বর্ষ/২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন, ১৪৩২
শারদ | গল্পাণু
ডরোথী ভট্টাচার্য
 
শিল্পী

"সুদাম অনুভব করে সব দিক দিয়ে এক নীরব শিল্পীকে সে হারিয়েছে যার হাতের ছোঁয়ায় সংসার ছিল সুন্দরভালবাসা ছিল গভীরপ্রতিটি হাতের কাজের মধ্যে লুকিয়ে থাকত নীরব সাধনা। রাতের অন্ধকারে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে চোখের জলে ভাসে সুদাম। সে জল মুছিয়ে দেবারও কেউ নেই।"


কুমোরপাড়ায় সুদাম পটুয়ার নাম মুখে মুখে ফেরে। তার পটে আঁকা ঠাকুরের মুখাবয়ব অতীব সুন্দর, তার সাথে চোখ। ওর স্ত্রী পরমা সমস্ত পটের চোখ আঁকত। সারাদিন পরিশ্রমের পর সংসারের যাবতীয় কাজ সেরে ছেলেমেয়েদের ঘুম পাড়িয়ে


 মাঝরাতে নিরালা নির্জনে এক এক করে নিপুণ হাতে পটের ছবিতে আঁকত। কেউ তা জানতেও পারত না। সময়মতো পট শুকিয়ে অনেক জায়গা থেকে আসা লোকজনের হাতে তুলে দিত সেই অনিন্দ্য সুন্দর পট। ভাল রোজগারও হত।

এ বছরের শুরুতেই পরমা তার সাজানো সংসার, স্বামী-ছেলেমেয়ে সব রেখে সামান্য কয়েকদিনের জ্বরেই চলে গেছে না ফেরার দেশে। সারাদিন খাটাখাটনির পর দরমার ঘরে আসন পেতে ভাতের থালা সাজিয়ে পাখার বাতাস করতে করতে সুদানকে খেতে দেবার মানুষ নেই। ছেলেমেয়েদের পরম যত্নে স্নান করিয়ে, ভাত খাইয়ে স্কুলে পাঠাবার লোক নেই, এত এত পটের অর্ডার সামাল দেবার লোক নেই। বুকের ভিতরটা খাঁ খাঁ করে ওঠে সুদামের। রাত জেগে সারাদিন বাদে সুদাম নিজেই পটের ছবিগুলোর চোখ আঁকতে বসে। কিন্তু কোথায় সেই নিপুণ চোখ? কোথায় সেই নিভৃত শিল্পীর মনপ্রাণ উজাড় করা শৈল্পিক দক্ষতা? সুদাম অনুভব করে সব দিক দিয়ে এক নীরব শিল্পীকে সে হারিয়েছে যার হাতের ছোঁয়ায় সংসার ছিল সুন্দর, ভালবাসা ছিল গভীর, প্রতিটি হাতের কাজের মধ্যে লুকিয়ে থাকত নীরব সাধনা। রাতের অন্ধকারে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে চোখের জলে ভাসে সুদাম। সে জল মুছিয়ে দেবারও কেউ নেই।
 
সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

'ও মন তরে কে-বা পার করে...'


Popular Top 9 (Last 30 days)