বাতায়ন/শারদ/ছোটগল্প/৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন, ১৪৩২
শারদ | ছোটগল্প
দেবদাস কুণ্ডু
গুড
মর্নিং
শারদ | ছোটগল্প
দেবদাস কুণ্ডু
"এবার আসি চতুর্থ মেয়েটির কথায়। ওর নাম রাই। ওকে তুমি অসাধারণ একটা কথা বলেছিলে। অনেকে ভাববে অশ্লীল কথা। কিন্তু না। তুমি কোনও অশ্লীল কথা বলনি। তুমি বলেছিলে, রাই তোমার বুক দুটো বড় সুন্দর। যখন কোনও শিশু স্তন্যপান করবে, তখন তোমার বুক দুটো হয় উঠবে অপার্থিব সুন্দর। ওই স্তনে আমার ঠোঁট শোভা পাবে না।"
-তোমাকে ছাড়া কিছু ভাল লাগে না দেবযানী।
-সত্যি বলছ?
-সে আমি বলতে পারব না। তবে সেদিন বাইক চালাতে চালাতে তুমি আমাকে পুলিশের মতো জেরা করছিলে। তোমার নাম কী? কোন স্কুলে পড়? তোমার বাড়িতে কে কে আছেন? পড়াশোনা ছাড়া আর কী কর? রবীন্দ্রসংগীত ভাল লাগে, না জীবনমুখী গান। আরো কত কী!
-বাহ্ রে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে উওর না দেওয়াটা অভদ্রতা। আর বিরক্ত হব কেন? তুমি তো খারাপ কিছু জিজ্ঞেস করনি। এই সব প্রশ্ন আমিও তোমাকে করতে পারতাম। তাতে কি তুমি বিরক্ত হতে?
-তাহলে আমি কেন বিরক্ত হব? বরং আমার সেদিন ভাল লাগছিল একজন আমার সম্পর্কে উৎসাহ দেখাচ্ছে।
-তাই তো বলছিলাম তুমি আলাদা দেবযানী। তুমি সম্পূর্ণ আলাদা।
-সেটা আমি নিজে বলতে পারব না।
-সৈদিন কিন্তু আমি বাইক খুব জোরে চালাছিলাম না। তবু বাতাসে তোমার সুগন্ধি চুল এসে আমার মুখে আদর করছিল।
-আমি তো চুলে কোন গন্ধ তেল মাখি না। তুমি কী করে গন্ধ পেলে?
-এমা তুমি এর মধ্যে চান করনি?
-তাহলে গন্ধটা থাকে কী করে?
-বেশ সুন্দর কথা বলতে পারো তো তুমি। অথচ তুমি কিনা বাংলায় ফেলে করেছ।
-কে বলল কথাটা?
-হঠাৎ কেন শিবুদা আমার কথা বলতে গেলেন?
এখন ফোনে নিস্তদ্ধতা। বাইরে চিরাচরিত কালো রাত। একটা রাত জাগা পাঠিও ডেকে উঠল। আবার বাক্যালাপ শুরু।
-আচ্ছা তুমি চুলটাকে অমন করেছ কেন? আজকাল দেখছি অনেকেই এমন অদ্ভুত হেয়ার স্টাইল করছে। তোমরা কেন কর? আয়নায় নিজেকে দেখ না?
-তাহলে কোথায় দাঁড়ায়?
-ভারি সুন্দর কথা তো। কিন্তু আমার এসব হেয়ার স্টাইল এতটুকু ভাল লাগে না।
-কাল সব চুল মেঘের মতো কালো হয়ে যাবে দেখে নিও তুমি।
-বাংলাটা তো ভালই বলতে পারো। কী সুন্দর উপমা দিলে। কী করে যে বাংলায় ফেলে করলে! নাকি মেয়েদের মন ভোলানোর জন্য এসব কথা বল?
-আচ্ছা তুমি সত্যি আমাকে ভালবাস?
-মানে?
-ভয় হয়? এ আবার কী রকম কথা? আমার চোখ দু’টো কি কাপালিকের মতো লাল নাকি?
-কী হল কথা বলছ না কেন?
-যাহ্ তা হয় নাকি? আমি তো কবিতা ভাল বুঝি।
-তাই তো বলেছি তুমি আলাদা। আর পাঁচটা মেয়ের মতো নও।
-আচ্ছা তুমি একটা সত্যি কথা বলবে? আমাকে ছাড়া আর কাউকে তুমি ভালবাস না?
-কাকে?
-আর কাকে ভালবাস?
-আর কে আছে?
-এছাড়া? আর কেউ?
-আর কেউ আছে?
-আর কেউ নেই তো?
-তোমার ভালবাসার তালিকায় আর কেউ বাকি নেই তো?
-এখন নেই। কোনও কালে কি ছিল? মানে আগে তুমি কি কোন মেয়েকে ভালবেসে ছিলে?
-অংকিতাকে কী বলেছিলে মনে আছে?
-আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি। তুমি অংকিতাকে বলেছিলে তোমার ঠোঁটদুটো আমার ভীষণ ভাল লাগে। মনে হয় ফুলের মতো নরম হালকা আর পবিত্র। এই ঠোঁটে চুম্বন করা যায় না। পুজো করা যায়।
একটু থেমে দেবযানী বলল,
অনির্বাণ সহজ গলায় বলে।
-ওকে কী বলেছিলে তুমি?
-তাহলে আমি বলি। ওকে তুমি বলেছিলে দীপিকা তোমার কোমর অবধি ঘন কালো চুল আমাকে মেঘের দেশে নিয়ে যায়। আমি কত গল্প করি মেঘেদের সঙ্গে। মেঘেরা শুধু ভালবাসার কথা বলে। ওদের দুঃখ হলে ওরা হালকা হতে পৃথিবীর বুকে অশ্রু বিসর্জন করে। আমি তখন তোমাকে ভুলে যাই। এই কথাই তো বলেছিলে?
অনির্বাণ ছোট্ট জবাব দেয়।
-তৃতীয় মেয়েটি হল শ্বেতা। তাই তো?
-তাকে কী বলেছিলে নিশ্চয়ই এখন মনে করতে পারছ না?
-শ্বেতাকে বলেছিলে তোমার মুখটা সরস্বতীর মতো শুভ্র, অমলিন। তোমার কাছে বিদ্যা প্রার্থনা করতে ইচ্ছে করে। যৌনতা নয়। তাই তো? আমি কি ভুল বললাম?
অনির্বাণ হালকা স্বরে বলল।
-এবার আসি চতুর্থ মেয়েটির কথায়। ওর নাম রাই। ওকে তুমি অসাধারণ একটা কথা বলেছিলে। অনেকে ভাববে অশ্লীল কথা। কিন্তু না। তুমি কোনও অশ্লীল কথা বলনি। তুমি বলেছিলে, রাই তোমার বুক দুটো বড় সুন্দর। যখন কোনও শিশু স্তন্যপান করবে, তখন তোমার বুক দুটো হয় উঠবে অপার্থিব সুন্দর। ওই স্তনে আমার ঠোঁট শোভা পাবে না। অনধিকার প্রবেশ হবে। তুমি কিন্তু রাইকে অনাবৃত করে এই কথা বলনি। তোমার অন্তরের চোখ এই কথা বলেছিল সেদিন।
-তাই তো আমি বলছিলাম আমি বাজে ছেলে, আমি নষ্ট ছেলে।
-না, তুমি মোটেও নষ্ট ছেলে নও। ভিজে ছেলেও নও। আসলে তোমার ভালবাসা কোনও একটা নারীর ভিতর পূর্ণতা পায় না। তুমি বহু মেয়ের ভিতর তোমার প্রেম খুঁজে বেড়াও। ওরা বলেছে তুমি ওদের শরীর চাওনি। ওরা দেখেছে তুমি এক অস্থির চঞ্চল ছেলে। ওদের মনে হয়েছে তুমি একটা অসুস্থ যুবক। তুমি ঠিক ভালবাসা জানো না। বোঝ না। তাই ওরা সরে গেছে। তুমি বললে না যে তুমি কবিতা বোঝ না। তুমি কবিতা কী করে বুঝবে? তুমি নিজেই তো একটা কবিতা। কেউ কি নিজেকে নিজে চিনতে পারে? তাই তো আমরা সারাজীবন ধরে নিজেকে খুঁজে চলেছি।
-আচ্ছা দেবযানী তুমি এত কথা জানলে কী করে?
-এই ছোট্ট জীবনে তুমি এত বই পড়ে ফেলেছ? আচ্ছা তোমার কী মনে হয় আমি অসুস্থ?
-তাহলে তুমি আমায় ভালবাসবে তো?
-তার মানে তুমি ভালবাসবে না?
-এ কথার মানে কী দেবযানী?
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment