প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা ~ ~ ~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

তৈমুর খান সংখ্যা | মগজ ও অঙ্গ

বাতায়ন/ তৈমুর খান সংখ্যা/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/ ৩২তম সংখ্যা/১১ই অগ্রহায়ণ , ১৪৩২ তৈমুর খান সংখ্যা | সম্পাদকীয়   মগজ ও অঙ্গ "অপরিসীম মেধ...

Tuesday, November 25, 2025

দেবদূত | জয়নাল আবেদিন

বাতায়ন/তৈমুর খান সংখ্যা/ছোটগল্প/৩য় বর্ষ/৩তম সংখ্যা/১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
তৈমুর খান সংখ্যা | ছোটগল্প
জয়নাল আবেদিন
 
দেবদূত

"বেলা একটু গড়িয়েছে। মহিলা ঘরে ফেরার তাগিদে একটু ব্যস্ত হলেওপরের ব্যাগ ফেলে যেতে পারছে না। ব্যাগটা হাতে নিয়ে গাছের গোড়ায় গিয়ে বসল।"

 
বাজারের মুখটাতে মিষ্টি দোকানের সামনের গাছ তলায়, ছোট বাচ্চাকে নিয়ে হাত পেতে ভিক্ষা করছিল মহিলা। ব্যস্ত জীবনে মানুষ যাতায়াতের পথে, ভিক্ষুকদের হাতে দুই-একটা টাকা দিতেও তেমন সময় পায় না। অথচ যাদের জীবন চলে অসহায় ভাবে হাত পেতে, তাকিয়ে দেখা ছাড়া কোন উপায় থাকে না।
অপরদিকে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা একটা মানুষ মনে হল কোন নজর করছিল। আর পাঁচটা পথচলতি মানুষদের থেকে হয়তো বা একটু আলাদা। গাড়ির ভিড় এড়িয়ে গুটিগুটি পায়ে মহিলার কাছাকাছি এসে দাঁড়াল।
একটা কথা বলব তোমাকে,
-এভাবে সারাদিন দাঁড়িয়ে হাত পেতে কত টাকা পাও?
মহিলা একটু ইতস্তত হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে।
-দু-তিনশো টাকা পাওয়া যায়?
-না গো বাবু, চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকা হয়।
মহিলার স্বীকারোক্তি।
-এতে তোমার দিন চলে? স্বামী, ছেলেমেয়ে নেই?
-স্বামী অসুস্থ। তাই কাজে যেতে পারে না। সাত বছরের ছেলে, এই দুই বছরের মেয়ে। ছেলেটা একটা চায়ের দোকানে কাজ করে। পেট ভাতায়।
-কিন্তু এই কটা টাকায় কী হয়?
অবাক হয় মানুষটা। অসহায় মহিলা উদা তাকিয়ে থাকে পথ-চলা মানুষের দিকে।
-আমি ব্যাগটা রেখে ওপার থেকে আসছি। তুমি এখন আছ তো?
মহিলা মাথা নাড়লো। অর্থাৎ আছি। ব্যাগের মধ্যে দুটো বিস্কুটের প্যাকেট। এক বাক্স কেক। পলিথিনে মোড়া জলের বোতল। আরো একটা প্যাকেটে মোড়া কিছু। মহিলার পাশে ব্যাগটা রেখে রাস্তা পেরিয়ে চলে গেল সে।
 
বেলা একটু গড়িয়েছে। মহিলা ঘরে ফেরার তাগিদে একটু ব্যস্ত হলেও, পরের ব্যাগ ফেলে যেতে পারছে না। ব্যাগটা হাতে নিয়ে গাছের গোড়ায় গিয়ে বসল। বাচ্চাটা ব্যাগে কী আছে বারবার হাত দিয়ে দেখতে চায়। মা ছুঁতে দেয় না। এভাবেই চলছিল সময়টা।
 
একটু অন্তদন্ত হয়েই এল লোকটা। আমার বেশ দেরি হয়ে গেল। আমি তো ভাবলাম তুমি চলেই গেছ।
-তোমার ব্যাগ রেখে আমি কী করে চলে যাই বাবু।
-কেন, ব্যাগটা নিয়েই যেতে পারতে তো?
-না গো বাবু, আমার জিম্মায় রেখে যাওয়া তোমার সামান। আমি নিয়ে যাব কেমন করে।
-নিয়ে চলে গেলে তো তোমার। কে জানবে সেটা?
-মানুষ না জানুক। উপরের মালিক তো জানবে?
লোকটা বেশ মুগ্ধ হল মহিলার আচরণে। এমন মানুষদের নিঃশব্দে, নিঃশর্তে দান করা উচিত। ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললে,
-এতে কী আছে দেখনি তো। বিস্কুটের প্যাকেট। এক বাক্স কেক। জলের বোতল। এই প্যাকেটটা দেখো। দু-হাজার টাকা আছে এতে।
ব্যাগটা মেয়েটার হাতে দিয়ে পকেট থেকে আরও তিন হাজার টাকা বের করে হাতে দিতে গেল। মেয়েটা ইতস্তত বোধে হাতটা সরিয়ে নিলে।
-নাও-না, আমি তোমাকে দেবার জন্য বার করেছি।
-আমি অত টাকা নেব কেন। আমার লাগবে না।
লোকটা একটু আবেগে বললে,
-যদি আমি তোমার দাদা বা ভাই হতাম। তাহলে তো আমার দায়িত্ব হয়ে যেত এটা।
মেয়েটার চোখে টলটলে ভরা জল। কেমন যেন একটা ঘোর লাগল তার মনে। অবস হওয়া হাতটায় লোকটা টাকাটা বাড়িয়ে দিল।
-এই টাকাগুলো চাল, ডাল, খাবার-দাবার কিনে নেবে। স্বামীর জন্য ওষুধ লাগলে কিনবে। এখন আর বেরোনোর দরকার নেই। ফুরিয়ে গেলে আবার বেরোবে। আসছি আবার দেখা হবে।
লোকটা চলে গেল। মেয়েটার চোখ তার চলার পথে আটকে রইল।
 
সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

'ও মন তরে কে-বা পার করে...'


Popular Top 8 (Last 7 days)