প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ভিক্ষুক গাছ | তৈমুর খান

বাতায়ন/মাসিক/কবিতা/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | কবিতা তৈমুর খান ভিক্ষুক গাছ দু - একটি ভিক্...

Saturday, April 15, 2023

স্বপ্ন-জাহাজের যাত্রী । সাগরিকা রায়



প্রথম বর্ষ/প্রথম সংখ্যা/১লা বৈশাখ, ১৪৩০

ধারাবাহিক গল্প
পর্ব ১
সাগরিকা রায়
স্বপ্ন-জাহাজের যাত্রী


শেষ রাতে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছিল সোমনাথ। লাল রঙের ড্রাগনের মুখওয়ালা একটা জাহাজে চড়ে সমুদ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও। কোমরে বাঁকা তলোয়ার। টুপিটা কপালের সামনে থেকে ঘুরে গিয়ে পেছনে ডানা ছড়িয়ে রেখেছে। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের ওপর জাহাজখানা উথালপাথাল হয়ে পড়ছিল। শীত করছিল সোমনাথের। শীতলতায় হিম হয়ে যাচ্ছিল শরীরের সব রক্ত। সমুদ্রের জল এত ঠান্ডা হয়! অতল থেকে উঠে আসছিল হিরহিরে ঠান্ডা হাঙরের লেজের ঝাপটার মতো।

নিজে থেকেই ঘুমটা ভেঙে গেল। মশারির ভেতরে রাতের সমুদ্রের মতো গাঢ় অন্ধকার। সোমনাথ নোনা বাতাসের আঁশটে গন্ধ খুঁজছিল। একটা গন্ধ আছে অবশ্য। কেরোসিনের স্টোভের গন্ধ। সঙ্গে আদার গন্ধ ডাঙার খবর দিচ্ছিল। মা চায়ের জল চাপিয়েছে। আদা চা। বরাবরের অভ্যেস মতো মা শেষ রাতে উঠে চা খায়। আগে বাবাও খেত। এখন মা একা-একা...। কাপটাকে পরম মমতায় দু’ হাতে জড়িয়ে ধরে কুঁকড়ে বসে চা খায়। এইসব মিলেমিশে একটা অবসাদের অনুভূতি তৈরি হচ্ছিল ফের। আবার সেই একঘেয়ে জীবন! চারপাশে একঘেয়ে মানুষের মুখ। এখানে কোথায় সেই সমুদ্র? কোথায় সেই জাহাজ? এত ঠান্ডা পড়েছে এবার! ঠান্ডায় ঘুমটা ভেঙে গেল। স্বপ্নটাও। স্বপ্ন ভেঙে যাবার শব্দ এত মর্মান্তিক হয় বুঝতে পারেনি সোমনাথ। কী দ্রুত গতিতে জাহাজটা চলছিল, ভাবা যায়! অকূল সাগরে ভেসে যাওয়ার মজাই আলাদা। 
অকূল দরিয়ায় বুঝি কূল নাই-রে। না থাকুক, কূল চাই না।
“চা খাবি?” সোমনাথের জেগে ওঠা মা বুঝতে পেরেছে।
“দাও” কম্বলটা জড়িয়ে উঠে বসে সোমনাথ।
“আজ একটু বের হব মা।”
“কোথায়? খেয়ে যাবি তো?”
“ফিরে আসব তাড়াতাড়ি।”
মা চুপচাপ চা খাচ্ছিল, একটু অন্যমনষ্ক ভাব। কিছু ভাবছে।
“অজয়ের কাছে যা একবার। ছেলেটার কত জানাশোনা! একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারে। কতদিন আর টিউশুনি করবি?”
অনেক ক্ষমতা অজয়দার। একটার পর একটা প্রোমোটিং করে চলেছে। আজ তো অজয়দার সঙ্গেই বের হবার কথা। অনুরোধ করলে নিশ্চয়ই একটা কিছু ব্যবস্থা হয়ে যাবে। সেদিন ওরা  গড়িয়াহাটে কী একটা কাজে গিয়েছিল। সুরেন একটা জমির খবর দিয়েছিল। অজয়দা কত সহজে একটা একশো টাকার নোট সুরেনকে দিয়েছিল, “চা খাস।” অথচ ওই রকম একটা নোট সোমনাথের পকেটে থাকে না। স্বপ্নের ভেতরেও কখনও অমন মোটা ভারি মানিব্যাগ দেখে না সোমনাথ। একশো টাকা কথার কথা। অজয়দা যখনতখন পাঁচশো টাকা বের করতে জানে। দু’ হাজারের নোট গজগজ করে ওয়ালেটের ভেতরে আটকে থাকতে থাকতে। তখন অজয়দা অবহেলায় ওদের বাইরে বের করে দেয়। আসলে মুক্তি দেয়। বোঝে সোমনাথ। এমন কত কত নোট আছে অজয়দার? মাঝে মাঝে ভাবে সোমনাথ। সত্যি সাকসেস বুঝি একেই বলে!
মিতুকে একদিন অজয়দার কথা বলেছিল সোমনাথ। মিতুর হিংসে ভরা চোখ দেখতে দেখতে হেসেছে ও। কোনও ক্ষমতা না থাকলে তখন হিংসের ক্ষমতা আসে। সোমনাথ বুঝতে পারে অজয়দার সাফল্যে হিংসে হয়েছিল মিতুর!
তাড়াতাড়ি করে চা শেষ করে সোমনাথ। অজয়দা বলেছে, বাইপাসে গাড়ি চলে আসবে সকাল সাতটা নাগাদ। সোমনাথ যেন দেরি না করে। দেরি না করে আজই অজয়দাকে একটা ব্যবস্থা করে দিতে বলবে ওর জন্য। বোবা হয়ে থাকলে বয়স কি বোবা হয়ে থাকবে? একদিন স্বপ্নের জাহাজে উঠবে সোমনাথ। আজ থেকেই না হয় জাহাজটার খোঁজ নেওয়া শুরু হোক।

বাইপাসে দাঁড়িয়ে মলিদির সঙ্গে গল্প করছিল অজয়দা। মলিদি রাণার দিদি। একটা নার্সিং হোমে ফ্রন্ট ডেস্কে কাজ করে। হাতে একটা বড় শাড়ির প্যাকেট ঝুলিয়ে খুব হাসছিল মলিদি। অজয়দা খুব উদাস ভঙ্গিতে সেই হাসি দেখছিল। বোধহয় তাই সোমনাথকে দেখতে পায়নি। এত সকালে মলিদি কোথায় যাচ্ছে? মলিদির কি মর্নিং ডিউটি? মলিদি কেমন রহস্যময় হাসি হাসছে! হাসিতে একটা অদ্ভুত ব্যাপার ছিল। সোমনাথের মনে হল অন্য রকম গন্ধ আসছে মলিদির হাসি থেকে। এখন সামনে যাওয়া ঠিক হবে না। এসব কথা কেউ কাউকে বলে দেয় না। কী করে, কেমন করে বুঝে যায় মানুষ! এই অনুভূতির ব্যাপারটাও যথেষ্ট আশ্চর্যজনক। মানে আশ্চর্যের বাবা।
সোমনাথ সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হাসল, অজয়দা—
“সোম, আজ যদি যাওয়া না হয়, রাগ করবে?”
“ধ্যাত্!” মেয়েদের মতো লজ্জা পায় সোমনাথ।
“তাহলে কাল? এখানেই এ’-সময়? ঠিক আছে? আমি একটা মিটিঙের কথা ভুলে গিয়েছিলাম।”
ঘাড় নাড়ে সোমনাথ। আজ বরং এন এস রোডে যাবে ও। কত দোকান, কত গলিঘুঁজি। ওসব জায়গায় যাওয়া হয় না সচরাচর। আজ ঘুরে বেড়াবে কলম্বাসের মতো। পেছন ফিরে চলে আসতে আসতে মলিদির জলতরঙ্গের আওয়াজ পেল ও। অজয়দা বলছিল, “সাবধানে ওঠো। তোমার সিল্ক শাড়ি পছন্দ, আগে বললেই হত! আরে, আমি তো...!”
চলে যাওয়া গাড়ির শব্দ পাচ্ছিল সোমনাথ। কত বাড়ি বানাল অজয়দা। যেন বিশ্বকর্মা। একের পর এক অ্যাপার্টমেন্ট। সুরেনের দেওয়া খবর অনুযায়ী মুকুন্দপুরে গিয়েছিল সোমনাথ অজয়দার সঙ্গে। জমির মালিকের সঙ্গে নেগোশিয়েশন হল। টোটাল জমির ফিফটি পার্সেন্ট পাবে জমির মালিক প্লাস পাঁচলাখ টাকা ক্যাশ। বাকিটা প্রোমোটারের। মোট বারোটা ফ্ল্যাট হবে ওই জমিতে। কত ক্ষমতা অজয়দার। কত দিকে দৃষ্টি। মলিদির মাইনে বেশি নয়। অথচ রোজ রোজ কত শাড়ি দরকার!

এন এস রোডে ঘুরতে ঘুরতে এক সময় রোদে ভিজে ও একের পর এক আবিষ্কার করতে থাকে। কত অদেখা গলিঘুঁজি। সেইসব ওলন্দাজ নাবিকের কথা মনে হয় সোমনাথের। যারা এক অদেখা দেশের গল্প করত! আজ কি ও সেই দেশে এসেছে? মিতুকে বললে ও হাসবে – পাগল কোথাকার!
“এই সোমনাথ, ডাকছি শুনতেই পাচ্ছ না?”
টুম্পাকে চিনতে পারেনি সোমনাথ। রোদে পোড়া চামড়ায় চড়া মেক-আপ। নীল রঙের সালোয়ার কুর্তা আর নীল ওড়নায় ওকে অন্য গ্রহের জীব বলে মনে হল সোমনাথের। “এখানে, এ’-সময় কী করছ টুম্পা?”
“ওমা! আমি তো চাকরি করি, জান না?” একটা চোখ ছোট করে হাসে টুম্পা, “পুজোর আগে ওভারটাইম খাটছি। হি হি হি। বিউটি পার্লারে আছি।”
“ও, তাই? যাক্, টুম্পা একটা রাস্তা তো পেয়ে গেছে।”
“তুমি? এ’-সময়ে, এখানে?”
“ইয়ে, ঘুরছি।”
“ভাল হল তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে…
                                    ক্রমশ




2 comments:

  1. ভীষণ ডালে লাগলো

    ReplyDelete
  2. দীপক বেরা।May 11, 2023 at 9:15 PM

    বেশ ভালো লাগল।

    ReplyDelete

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)