প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ভিক্ষুক গাছ | তৈমুর খান

বাতায়ন/মাসিক/কবিতা/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | কবিতা তৈমুর খান ভিক্ষুক গাছ দু - একটি ভিক্...

Saturday, April 15, 2023

অন্য চোখে অন্য সুখ । শ্রাবণী বাগচি

প্রথম বর্ষ/প্রথম সংখ্যা/১লা বৈশাখ, ১৪৩০

অন্য চোখে

শ্রাবণী বাগচি

অন্য চোখে অন্য সুখ



এখন সকাল ঠিক ন’টা। রাস্তাঘাট ফাঁকা শুনশান। কর্মব্যস্ত জীবন হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে— এক রাশ হতাশা আর আতঙ্ক নিয়ে। এ যেন তিল তিল করে মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করার রিহার্সাল চলছে। কাল মাঝরাতে পাড়ায় অ্যাম্বুল্যান্স আসার শব্দে নিতুর ঘুমটা ভেঙে গেছিল কিন্তু কিছু জানার ইচ্ছেতে ও কেমন মৃত্যু-ভয় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছিল। সকালে অবশ্য পাশের বাড়ির রণিদা ফোনে জানালো যে খোকাদাকে অ্যাম্বুল্যান্স করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল তবে তা আর কাজে লাগেনি। সবাই মুখে কুলুপ এঁটে মেনে নিয়েছিল যেন খোকাদা সপরিবারে জঘণ‍্যতম কোন অপরাধ করেছে! কী হয়েছিল? সবারই এক অনুমান। বিশ্ব জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ‘কোভিড’— ভয়ংকর মারণব‍্যাধী। হাতে চায়ের কাপটা নিয়ে নিতু ভাবতে বসে সাত-পাঁচ— মিনুকে ডেকে বিস্কুটটা রেখে দিতে বলে, বাড়িতে বাচ্চা-বয়স্ক সবাই আছে। একটা বিস্কুট খাওয়া বা না খাওয়ার মধ্যে কোন ফারাক বোঝে না আর হঠাৎই সব যেন কেমন পাল্টে গেল। এই নিতুই ক’দিন আগেও ছিল বিস্কুটের এনসাইক্লোপিডিয়া। ক’দিনের মধ্যেই সকালের জলখাবারেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। নিঃশব্দে মেনে নিয়েছে ছোট-বড় সকলেই। মৃত্যু-ভয় বেঁচে থাকার চাহিদাগুলোর উপরেও নীরবে থাবা বসাতে শুরু করেছে ক’দিনেই। বুকের মধ্যে একটা ভীষণ চাপ অনুভব করে।

কখন যে ঘড়ির কাঁটা বারোটার ঘর পেরিয়েছে টের পায়নি কিছু। হঠাৎই চিনির আধো-সুরে বাবা ডাক কানে আসতেই সম্বিৎ ফেরে— অজান্তেই চমকে উঠে সজোরে বুকে জাপটে ধরে চিনিকে। সবাইকে এমন করেই আগলে রাখতে হবে যে। বুকের মাঝের আতঙ্কের ভূতটাকে কিছুতেই তাড়াতে পারে না। মিনু অত্যন্ত বুদ্ধিমতী সুগৃহিণী। লকডাউন ঘোষণার সাথে সাথেই নিতুর কোম্পানির থেকে মেল এসেছে— এক-তৃতীয়াংশ কম বেতন পাওয়ার। এখনও নিতু বলে উঠতে পারেনি বাড়ির সবাইকে। খাবার টেবিলে বসে একবার খাবারের দিকে আর পরক্ষণেই মিনুর দিকে তাকিয়ে দেখে। চকিতে মিনু বলে ওঠে একটু কম রান্নাই করলাম, কাজের মেয়েটা তো আসতে পারবে না— সব টুকু একা হাতে সারতে হবে! হাসি গল্পের মাঝে সবাই খেয়ে উঠে যেতেই নিতু তড়িঘড়ি থালাবাসনগুলো নিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেখে মিনু দৌড়ে আসে— তুমি আবার কী করো! আমি সব ম‍্যানেজ করে নেব। নিতু হাসিমুখে মিনুর সামনে এসে দাঁড়ায়। সব কিছু কাটছাঁট করে দিনের অর্ধেকটা তো কাটিয়ে দিলে হাসিমুখে, এবার আমি নাহয় এটুকু করে বাকি সময়টা দুজনে নিজেদের কথা বলব— যা বলি-বলি করে দশ বছরেও বলার অবকাশ হয়নি। সুযোগ হয়নি একে অপরকে চেনার! বুকের মাঝের চাপা মৃত্যু-ভয়ের পাশে হঠাৎ জ্বলে ওঠে প্রথম মিলনের ক্ষণ। মিনুকে পরম আদরে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে নিতু— আছি সুখে— থাকব সুখে— চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মুছে।

[লেখিকা অবসরপ্রাপ্ত গণিতের শিক্ষিকা, বর্তমানে সমাজসেবা ও কাব্যচর্চায় যুক্ত।]




1 comment:

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)