বাতায়ন/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/১৪তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা/২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২
মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ধারাবাহিক গল্প
ডঃ নিতাই
ভট্টাচার্য
শ্রাবণের
দিনগুলি
[১ম পর্ব]
"গিন্নিমা যখন চরণ মাঝিকে শুনিয়ে কথাগুলো বলে মহিমবাবুর বাড়িতে সেইসময় নিধু ছিল। গিন্নি-মায়ের কথা শুনে কাজের অছিলায় সবার সামনে থেকে সরে গিয়েছিল নিধু। সুখীর বিয়ের কথা ভেবে সেদিন কষ্ট পেয়েছিল খুব।"
-সুখীর
জীবনটা এমন হবে ভাবতেই পারিনি নিধু।
চরণ মাঝির
দু’ চোখে জল আসে। নিধু বসে থাকে চুপ করে। এমন পরিস্থিতিতে ঠিক কোন
কথা বলা উচিত বুঝে উঠতে পারে না।
-গিন্নিমা
সেদিন ঠিক কথাই বলেছিল।
বলে আবার
চুপ করে চরণ মাঝি। গিন্নিমায়ের সেদিনের কথাগুলো যেন নতুন করে শুনতে পায় চরণ। এই
বছর অঘ্রাণ মাসের কথা। জমির ধান গোলায় উঠেছে। সপ্তাহ খানেক চাষের তেমন কোনও কাজ নেই নিধুর। মহিমবাবুর উঠানে বসেছিল দুপুরবেলা। মহিমবাবু চেয়ারে বসে
রোদ নিচ্ছিল পিঠে। সেইসময় সুখীর বাপকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয় চরণ মাঝি।
মহিমবাবুকে প্রণাম করে চরণ বলে,
-সুখীর
বিয়ের ব্যবস্থা পাকা হয়েছে বাবু। আপনাদের আশীর্বাদে...
চরণ মাঝির
কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ে মহিমবাবু। বলে,
-এই তো
কয়দিন আগে বলে ছিলে...
দিন সাতেক
আগে মহিমবাবুর জমির ধান কাটার কাজ শেষ করে নিজের গ্রামে ফিরে গেছে চরণ। আর এরই
মধ্যে বিয়ের সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে সেই সংবাদ নিয়ে এসেছে! প্রতি বছরের আষাঢ়
মাসের শেষ দিকে জনা পনেরো-ষোলো মুনিষ নিয়ে
ইন্দাস থেকে মহিমবাবুর বাড়িতে এসে ওঠে চরণ মাঝি। দিন পনেরো গ্রামে থেকে চাষের কাজ
শেষ করে ফিরে যায়। আবার অঘ্রাণ মাসে ধান পাকলে লোকজন নিয়ে হাজির হয় চরণ। বাবুর
জমির ধান কেটে ঝেড়ে গোলায় তুলে দেবার পর ছুটি পায়। বছর-বছর
এমনই হয়ে আসছে। চাষের কাজের যত ঝঞ্ঝাট চরণ মাঝি আর তার লোকজনই সামলে দেয়। এই বছর
ধান রোয়ার সময় চরণের সঙ্গে সুখী এসেছিল। সুখীকে খুব পছন্দ হয়েছিল গিন্নিমায়ের।
বারবার বলত,
-চরণ তোমার ভাগ্নিকে আমার কাছেই রেখে দাও। এখানেই থাকুক। আমার একটা সঙ্গী
থাকবে। সময়ে আমিই ওর বিয়ের ব্যবস্থা করব।
গিন্নিমায়ের
কথা শুনে চরণ মাঝি বলত,
-আবার তো ধান
কাটার সময় আসবে, তখন
না হয় এখানে আপনার কাছে থেকে যাবে কিছুদিন।
অঘ্রাণ মাসে
ধান গোলায় তোলার সময় সুখী আর আসেনি, তাতে রাগ করেছিল গিন্নিমা।
-সুখীকে সঙ্গে করে নিয়ে এলে না চরণ! খুব অন্যায় করেছ।
সুখীর
বিয়ের দেখাশোনা চলছে,
গিন্নিমাকে বলেছিল চরণ। তারপর থেকে বড় জোর কুড়ি-পঁচিশ দিন হল, মেয়ের বিয়ে পাকা হয়ে গেল! গিন্নিমা বেশ অবাক হয়েই জিজ্ঞাসা করেছিল,
-এত
তাড়াতাড়ি কী ছিল চরণ? ভাগ্নি
তোমার জলে পড়ে ছিল না। আঠারো-উনিশ বছরের মেয়ে। তাছাড়া সুখী
অন্যরকম, ভেবেচিন্তে
বিয়ে দেওয়া উচিত।
-পাত্রের
সন্ধান কি আমি দিতে পারতাম না চরণ? ভাল কর্মঠ ছেলে আমার হাতেই ছিল।
বলেছিল
মহিমবাবু।
-আমাদের নিধু
সাক্ষাৎ শিব। নিধুর তুলনা হয় না। ওর সঙ্গে সুখীর...
গিন্নিমা
যখন চরণ মাঝিকে শুনিয়ে কথাগুলো বলে মহিমবাবুর বাড়িতে
সেইসময় নিধু ছিল। গিন্নি-মায়ের কথা শুনে কাজের অছিলায়
সবার সামনে থেকে সরে গিয়েছিল নিধু। সুখীর বিয়ের কথা ভেবে সেদিন কষ্ট পেয়েছিল
খুব।
-ও ছুঁড়ি তোর বিয়ে বলে সুখীর বিয়ে দিও না চরণ। খোঁজখবর নাও। মানুষ চেনা মুশকিল
বড়। আর সুখী কিন্তু সব মেয়ের মতো নয়।
ক্রমশ
No comments:
Post a Comment