ধারাবাহিক গল্প
পারমিতা
চ্যাটার্জি
শ্রাবণের ধারায় নতুন প্লাবন
[২য় পর্ব]
"কাল রাতে যখন সৈকত নিজের ঘরে তমালিকাকে ডেকে শাড়িটা হাতে দিয়ে বলে দেখ তো পছন্দ কি না? অনেকদিন বাদে সৈকতের গলায় স্নেহের সুর পেয়ে ওর চোখে প্রায় জল এসে গিয়েছিল।"
পূর্বানুবৃত্তি খুব সাধারণ
পরিবারের মেয়ে তমালিকাকে ভালবাসায় আপ্লুত হয়ে
বিয়ে করে সৈকত। বিয়ের দু’দিন পরে বৃষ্টিতে লেকটা ফাঁকাই ছিল। সৈকত হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে বলল, “চল
নামি” দুজনে মহানন্দে ভিজতে-ভিজতে গান
গেয়েছিল— আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে। বাড়ি ফিরেছিল দুজনে কাক ভেজা হয়ে। তারপর…
অনেক রাত অবধি ফোনে সৈকত রাইয়ের সাথে কখনও-বা মনিকার সাথে গল্প করে যায়। অথচ কোনও রাতেই তার ঘরে আজকাল আসে না। কাল হঠাৎ একটা হালকা নীল রঙের শাড়ি এনে বলল,
-এটা তোমার।
তমালিকাও অন্য দিকে চেয়ে এই প্রথম জবাব দিল,
-যে বিয়েটা
তোমার জীবনে একটা বিরাট ভুল বলে মনে হয়।
হ্যাঁ
কিছুদিন আগে সৈকত তাকে কী কথায় যেন বলেছিল,
-তোমায় বিয়ে
করাটাই আমার জীবনের এক ব্লান্ডার। ভীষণ ভুল
ডিসিশন হয়ে গেছে।
তমালিকা
চোখের জল সংবরণ করে বলেছিল,
-আমায় বিয়ে করাটা তোমার জীবনের ভুল!
তারপর থেকে
সে একদম চুপচাপ। সেও নয়-নয় করে ছ’মাস হয়ে গেল। সে তো একদম অশিক্ষিত নয়। ইতিহাসে এমএবিএড, ভাল গান জানে। তার শাশুড়ি-মা
মারা যাবার আগেই ছেলের ভাবান্তর লক্ষ্য করেছিলেন। তাই ওকে
বলে গিয়েছিলেন, তুই তো শিক্ষিত, দরকার
হলে নিজের পায়ের তলার মাটিটা শক্ত করে নিবি।
মারা যাবার
আগে ছেলেকেও বলেছিলেন, ভেবেছিলাম তোমার মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ থাকবে
কিন্তু তুমি এই একই পথে যাচ্ছ। রক্ত যাবে কোথায়?
নীল আর মেয়ে
মেঘকে স্কুলে পৌঁছে দেবার সময় সে বেশ কয়েকটা স্কুলে তার সিভি জমা দিয়েছিল। হঠাৎ মেয়ের স্কুলেই হিস্ট্রি টিচারের জন্যে তাকে ইন্টারভিউ কল করে। আজই তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার হাতে পেয়েছে, সামনের
মাস থেকে জয়েন করবে।
তাই কাল
রাতে যখন সৈকত নিজের ঘরে তমালিকাকে ডেকে শাড়িটা হাতে দিয়ে বলে দেখ তো পছন্দ কি না? অনেকদিন
বাদে সৈকতের গলায় স্নেহের সুর পেয়ে ওর চোখে প্রায় জল এসে গিয়েছিল। বহুকষ্টে নিজের দুর্বলতাকে দমন করে তমালিকা বলেছিল,
-যে
বিয়েটাকে তোমার এত ভুল বলে মনে হয় সেটাকে ঘটা করে পালন করার কী প্রয়োজন?
তাকে ভেঙে দিলেই তো হয়।
-ভেঙে দেব? তার মানে?
-এত কষ্ট করে
একটা ভুলকে সারাজীবন বয়ে নিয়ে চলবেই বা কেন? ভয় নেই আমি কোন ক্ষতিপূরণ চাইব না।
-কী বলছ তুমি? আর ছেলেমেয়ে?
-ছেলেমেয়ে
যদি তোমার কাছে থাকতে চায় থাকবে, আর আমার কাছে থাকতে চাইলেও থাকতে
পারে। সেটা ওদের ওপর নির্ভর করবে। আমি
কারও ওপর কোন জোর দেখাতে চাই না।
-এত যে বড় বড়
কথা বলছ, চালাবে কী করে?
তমালিকা তখন
তার চাকরির অফার-লেটারটা দেখাল। আর বলল,
-বাবা তার বাড়ির অর্দ্ধেক আমার নামে দিয়ে গেছেন কাজেই
মাথা গোঁজার একটা জায়গাও আছে, চাকরিও
পেলাম।
ক্রমশ
No comments:
Post a Comment