স্মার্টফোনের কুপ্রভাব
স্মার্টফোনের কুপ্রভাবে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত? সমস্যাকে চিনুন, প্রতিকার করুন, সঙ্গে রয়েছেন বিশিষ্ট মনোবিদ
কিন্তু প্রযুক্তি অধ্যুষিত বর্তমান দুনিয়ায় শিশু থেকে কিশোর, যুবক থেকে বৃদ্ধ সকলেই মোবাইল ব্যবহার করতে এক সময় বাধ্য হচ্ছে। শুধু প্রয়োজনের খাতিরে নয় সকলকে পাশাপাশি মোবাইল ব্যবহার করতে দেখলেও নিজেদের মনে ইচ্ছে জেগে ওঠে মোবাইল ব্যবহারের। এর চূড়ান্ত খারাপ প্রভাব থাকার সত্ত্বেও এর প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবহার দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে।
কিন্তু এর আগ্রাসনের হাত থেকে কেমন করে বাঁচবে আজকের ছাত্র সমাজ? কেমন করে শিক্ষার্থীরা কেবল গেজেট ঘাঁটার পরিবর্তে মন দেবে বইয়ের পড়ায়? টাইপ করার বদলে হাতে লিখবে কিছুটা অংশ অন্তত? ইউটিউব না ঘেঁটে লাইব্রেরি যাবে বারবার?
কিছু কিছু সু-অভ্যাস গঠন, কিছু কিছু দৃঢ় চেতনার উন্মেষ, কিছু কিছু নির্দেশ বা নিষেধ প্রভৃতি কীভাবে শিক্ষার্থীদের ও তাদের নিয়ে চিন্তিত অভিভাবক ও শিক্ষক সম্পর্কে সাম্প্রতিকতম এই সমস্যার হাত থেকে মুক্ত করতে পারে তা আলোচনা করা যাক এবার-
●
প্রত্যেক বার মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সময় বা
মোবাইলে হাত ছোঁয়ানোর সময় ট্যালি দিয়ে রাখবে একটা আলাদা খাতায় তারিখ দিয়ে। দিনে
কতবার মোবাইল স্পর্শ করছ তা গুনে নাও দিনের শেষে। প্রতিদিন আগের দিনের থেকে যাতে কম
ট্যালি করে তার জন্য মনে মনে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং মোবাইলে হাত দেওয়ার চেষ্টা কম
করতে হবে।
●
নিজের মতো করে মোবাইল ব্যবহার করার জন্য দিনের
মধ্যে সময় নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। সেই সময়ের বাইরে মোবাইল অন্য ঘরে বা হাতের নাগালের
বাইরে দূরে কোথাও রাখার ব্যবস্থা করো।
●
দরকারের বাইরে অবসর বিনোদনের জন্য মোবাইলে হাত
দেওয়া যাবে না। তার পরিবর্তে বিভিন্ন রকম অন্দর ক্রীড়া বা ইনডোর গেমস যেমন- লুডো,
চাইনিজ চেকার, পাজল সলভ, মেমরি গেম, সুডোকু ইত্যাদি এবং বহিঃক্রীড়া যেমন ফুটবল, ক্রিকেট,
ব্যাডমিন্টন প্রভৃতি খেলা যেতে পারে।
●
অনস্ক্রিন সোশ্যাল মিডিয়ার পরিবর্তে অনস্ক্রিন
প্রিন্ট মিডিয়ায় অভ্যস্ত হতে হবে। নিজের চোখ ও মনকে নিবদ্ধ রাখতে হবে পড়াশোনায়,
গল্পের বই পড়া, খবরের কাগজ পড়া, বিভিন্ন পত্রপত্রিকা পড়া প্রভৃতিতে।
●
যত রকম খেলা বা চিত্তাকর্ষক অ্যাপস আছে সেগুলো
মোবাইল থেকে মুছে বা সরিয়ে দাও একেবারে। ওই নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনাও কোরো না।
●
মোবাইল ফোনের সমস্ত রকম বিজ্ঞপ্তি বা নোটিফিকেশন
বন্ধ রাখতে হবে।
●
শোবার পর রাত্রিবেলায় মোবাইল ফোনে আর হাত দেবে
না। তার পরিবর্তে গান শোনা, নাটক শোনা, বক্তৃতা শোনা জরুরি। কিন্তু চোখ খুলে মোবাইলের
আলোর দিকে তাকালে চলবে না।
●
মোবাইল ফোনের পাসওয়ার্ড দীর্ঘতম ও জটিল করে দাও।
যাতে বারবার মোবাইল ফোন ব্যবহারে বিরক্তি আসে।
●
অনেক সময় এরোপ্লেন মোড অন করে রাখলে নির্দিষ্ট
সময়ের জন্য অবাঞ্ছিত ফোন কল এড়ানো যায়।
●
শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা— যেমন কুইজ প্রতিযোগিতা,
বিতর্ক প্রতিযোগিতা, নানা রকম ওয়ার্কশপ, পরিবেশ সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, দুস্থদের সাহায্য
প্রদান মূলক অনুষ্ঠান প্রভৃতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা ও বিভিন্ন কাজের সময়
নানান রকম পরিকল্পনামূলক ও দায়িত্বভার সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে ছাত্রছাত্রীদের ব্যস্ত
রাখা।
●
বাড়ির বা সংসারের নিয়মিত ছোট ছোট কাজের দায়িত্বের
মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের ব্যস্ত রাখা।
●
বিভিন্ন রকম পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যক্রম। যেমন
সংগীত, নৃত্য, অঙ্কন, জিমন্যাস্টিক, বিভিন্ন রকম হাতের কাজ ও সেলাই, গল্প-কবিতা লেখা
প্রভৃতিতে অংশগ্রহণ এবং জড়িয়ে থাকা।
●
বিভিন্ন রকম শারীরিক কসরত মূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ
করা। যেমন- এনসিসি, স্কোয়ার্ড, সাঁতার, জিমন্যাস্টিক, ক্যারাটে প্রভৃতি।
আসুন সকলেই নিজেদের দায়বদ্ধতা অনুভব করে এই মোবাইল ব্যবহারের প্রাদুর্ভাব থেকে শিশুদের জীবন বাঁচাই। নিজেরাও সচেতন হয়ে দৃঢ়ভাবে শিশুদের জীবন বিপন্ন হবার আগেই ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করি। প্রয়োজনে মনস্তত্ববিদ বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মতামত নিই। সমগ্র সমাজকে রক্ষার দায় আমাদের সকলের।
ড: পাপড়ি চট্টোপাধ্যায়
No comments:
Post a Comment