প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

বার ঘরে যাই | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন /ছোটগল্প /৩য় বর্ষ/১ ৪ তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা / ২৩শে শ্রাবণ , ১৪৩২ মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছোটগল্প পারমিতা চ্যাটার্জি বার ঘ...

Thursday, August 7, 2025

ভীরু প্রেম [২য় পর্ব] | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/১তম সংখ্যা/শে শ্রাবণ, ১৪৩২
ধারাবাহিক গল্প
পারমিতা চ্যাটার্জি
 
ভীরু প্রেম
[২য় পর্ব]

"এই বয়সেও বউয়ের কাছে না শুলে তোর প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে এ কি তোর বউয়ের শিক্ষাতুই তো এরকম ছিলিস না।"


পূর্বানুবৃত্তি জানি আমার ওপর তোমার অনেক অভিমান, তাই গানটা গাইলে না আমিও যে তখন খুব অপারগ ছিলাম অপু তাই গানটা আমরা তোমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিযাক গে আমি আজ অফিস যাচ্ছি না, তুমি ওদের দাও, আমি আর তুমি একসাথে খাব আজ। তারপর…

মা উত্তর দিয়েছিলেন,
-ছেলে যেভাবে মাকে আগলে রাখতে পারে, ওরা কি তা পারে?

গতবছর এই বিবাহবার্ষিকীর দিন নীলয় বলেছিল ওর মাকে,
-আজ তোমার কাছে বুবাই, তপাই শোবে, আমি ও ঘরে শোব
মা বলেছিলেন,
-তুই যে এতটা নির্লজ্জ হয়ে গিয়েছিস ভাবতেই পারি না
-এতে নির্লজ্জের কী হল?
-এই বয়সেও বউয়ের কাছে না শুলে তোর প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে এ কি তোর বউয়ের শিক্ষা? তুই তো এরকম ছিলিস না
-মা আমাকে যা ইচ্ছে বল ওকে কিছু বল-না ওর ত্যাগ তুমি না বুঝলেও আর পাঁচজনে বোঝে।
তারপর দুদিন মা প্রায় না খেয়ে ছিল তখন অপরূপাই বলেছে,
-আর কোনদিন তুমি আমার কাছে শোবার কথা ভেবো না আমি তো চাইনি
-না তুমি চাওনি কিন্তু আমারও তো কিছু চাওয়াপাওয়া থাকতে পারে? এভাবে আর কতদিন অপু? আমি তো আর পারছি না।
অপু কোন জবাব দেয়নি শুধু বলেছিল,
-আমি আর তোমার কাছে কিছু চাওয়াপাওয়ার আশা রাখি না, তুমি এখানে শুলে কী না শুলে আমার তাতে কিছু আর যায় আসে না আমার ভেতরের সেই আমিটা যাকে তুমি চিনতে সে দীর্ঘদিন অবহেলা আর বঞ্চিত থাকতে-থাকতে নিজের চাওয়াপাওয়ার হিসেবটা ভুলে গেছে।
নীলয় আর কিছু বলেনি, নিঃশব্দে নিজের বালিশটা তুলে নিয়ে চলে গিয়েছিলআজ ছেলেমেয়ে স্কুলে চলে যাওয়ার পর নীলয় আবার এল,
-অপু এস আমরা খাই এবার
-হ্যাঁ তুমি খেয়ে নাও, আমি দিচ্ছি তোমাকে এখুনি, আমার এখন হবে না, এখুনি কাজের মাসি আসবে, তার আগে সব সারতে হবে
নীলয় জোর করে এগিয়ে এসে ওর হাতটা ধরে বলল,
-না আজ তোমাকে আমার সাথে খেতেই হবে, আমি কিছু শুনব না।
নীলয় নিজে হাতে খাবারের থালা সাজাল দুটো, আজ সকালে বেরিয়ে ছিল সে, তখন অপুর প্রিয় চকোলেট পেস্ট্রি নিয়ে এসেছিল এক বাক্স, তার থেকে নিজে বার করে সাজাল প্লেটেঅপু অবাক হয়ে দেখছিল, অজান্তেই তার চোখ দুটো জলে ভরে উঠছে। মনে পড়ে যাচ্ছে বছর তিনেক আগে বিয়ের তারিখে, নীলয়ের মা অযথা অপুর সাথে তর্কবিতর্ক লাগিয়েছিলেন, তিনি এসব দিনগুলোতে ইচ্ছা করেই অশান্তি করতেন, ছেলে-বউয়ের মধ্যে বিবাদ বাধাবার জন্যে। অপুও তো মানুষ, কত আর সহ্য করবে, সেদিন সে বলেছিল তার শাশুড়িকে,
-আপনি কীরকম মা যে ছেলে-বউয়ের সুখ দেখতে পারেন না?
নীলয় তখন সবে বাজার থেকে ফিরেছে, আর তিনি কেঁদেকেটে, দেওয়ালে মাথা কুটে এমন অবস্থা করেছিলেন যে সেদিন সজোরে অপুর গালে একটা চর মেরেছিল তারপরেই ওর চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এসেছিল, কেঁদে ফেলে মাকে বলেছিল,
-এবার তুমি খুশি তো মাআজকের দিনে তোমার বাধ্য ছেলে তোমার কথায় তার বউয়ের গায়ে হাত তুলেছে, কী বল চুপ কেন? দিয়েছি তো মাতৃভক্তির পরিচয়
তারপর কাঁদতে-কাঁদতে অপুকে বলেছিল,
-আর কত অপমান সহ্য করবে? শুধু বলব আমার অন্যায়ের শাস্তি ভগবান আমাকে ঠিকই দেবেন, তুমি দিও-না, পারলে ক্ষমা কোর তোমার এই অপদার্থ স্বামীকে
 
ক্রমশ

No comments:

Post a Comment

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)