বাতায়ন/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/১৪তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা/২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২
মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ধারাবাহিক গল্প
পারমিতা
চ্যাটার্জি
ভীরু
প্রেম
[১ম পর্ব]
"ও হ্যাঁ সত্যি ভুলেই গিয়েছি কবে বিয়ে হয়েছিল, কোনদিন তো এই তারিখটায় তুমি বাড়িতেই খেতে না, তোমার মা তোমাকে নিয়ে এই তারিখেই কোনও-না-কোনও ভাইবোনের বাড়ি নেমন্তন্ন যেতেন, আর আমি একাই কাটাতাম, আজ আবার এতদিন পর এ দিনটার কথা উঠছে কেন?"
আজ সকালটা খুব সুন্দর। সবে শীতের শুরু, হালকা ঠান্ডা, বেশ আরামদায়ক। অপরূপা রান্নাঘরে সবার ব্রেকফাস্ট বানাতে-বানাতে হঠাৎ গুনগুন করে গান গেয়ে উঠল। তার বড় প্রিয় গান, "আমার মল্লিকা বনে, যখন প্রথম ধরেছে কলি আমার মল্লিকা বনে…"
চমকে পেছনে
তাকিয়ে দেখল নীলয় দাঁড়িয়ে আছে, তাড়াতাড়ি সে গান থামিয়ে হাতের কাজ দ্রুত করে বলল,
-এই হয়ে গেছে আমার, তুমি বুবাই আর তপাইকে নিয়ে বস, আমি গরম-গরম সার্ভ করে দিচ্ছি।
নীলয় সে
কথার কোন উত্তর না দিয়ে বলল,
-বহুদিন পর তোমার গলায় এই গানটা শুনছিলাম, থামিয়ে দিলে
কেন? কর-না।
-ভুল করে গুনগুন করে ফেলেছি গো, তোমরা বস-না আমি দিচ্ছি এখুনি।
নীলয় আবার
বলল,
-জানি আমার
ওপর তোমার অনেক অভিমান,
তাই গানটা গাইলে না। আমিও যে তখন খুব অপারগ ছিলাম অপু তাই গানটা
আমরা তোমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছি। অথচ সেদিন এই গানটা
শুনেই তোমার প্রেমে পড়েছিলাম, তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম কিন্তু
রাখতে পারিনি। যাক গে আমি আজ অফিস যাচ্ছি না, তুমি ওদের দাও, আমি আর তুমি
একসাথে খাব আজ।
-সে কী আজ অফিস যাবে না কেন? তুমি তো কখনও অফিস কামাই করতে না তবে
আজ কী হল?
নীলয় মুখ
নীচু করে বলল,
-তুমি ভুলে
গেছ অপু আজ আমাদের বিয়ের তারিখ।
-ও হ্যাঁ
সত্যি ভুলেই গিয়েছি কবে বিয়ে হয়েছিল, কোনদিন তো এই তারিখটায় তুমি বাড়িতেই
খেতে না, তোমার
মা তোমাকে নিয়ে এই তারিখেই কোনও-না-কোনও
ভাইবোনের বাড়ি নেমন্তন্ন যেতেন, আর আমি একাই কাটাতাম, আজ আবার
এতদিন পর এ দিনটার কথা উঠছে কেন? যাক সরো এখন,
আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে, ছেলেমেয়েগুলোকে খাইয়ে রেডি করে দিই।
আজ দু’মাস হল নীলয়ের মা মারা গেছেন, তারপর থেকেই নীলয় যেন সেই আগের মতো
প্রেমিক হয়ে উঠছে, হাত
ধরে টেনে কাছে বসাতে চায়,
ওর জন্য এটা-ওটা নিয়ে আসে, জন্মদিনে
অনেক ফুল আর কেক নিয়ে এসে ছেলেমেয়েদের বলল,
-আজ তোমাদের
মায়ের জন্মদিন, চল
আমরা একটু সারপ্রাইজ দিই।
ছেলেমেয়েরা
যখন ছোট ছিল তখন অপরূপাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিল,
-সবার এত
ঘটা করে জন্মদিন হয়,
তোমার কেন হয় না মা?
সে হেসে
উত্তর দিয়েছিল,
-আরে আমি
কবে জন্মেছিলাম সেই তারিখটাও তো আমার মনে নেই। তখন দেখেছিল নীলয় খুব করুণ চোখে ওর
দিকে তাকিয়ে আছে। শ্বশুর মারা যাবার পর থেকে নীলয়কে ওর মায়ের সাথে শুতে হত। এতে নীলয় যে খুব খুশি ছিল না তা ওর মুখ দেখেই বোঝা গিয়েছিল। সেই একদিন একটু মৃদু প্রতিবাদ
এসেছিল নীলয়ের গলা থেকে,
-কেন মা? আমি কেন? তোমার
নাতিনাতনিরাই তো শুতে পারে তোমার সাথে।
ক্রমশ
No comments:
Post a Comment