প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

বার ঘরে যাই | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন /ছোটগল্প /৩য় বর্ষ/১ ৪ তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা / ২৩শে শ্রাবণ , ১৪৩২ মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছোটগল্প পারমিতা চ্যাটার্জি বার ঘ...

Thursday, August 7, 2025

আলোর স্বপ্ন [১ম পর্ব] | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/১তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা/২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২
মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ধারাবাহিক গল্প
পারমিতা চ্যাটার্জি
 
আলোর স্বপ্ন
[১ম পর্ব]

"বাবাও তো মাস গেলে মোটা পেনশন পানএকটা রান্নার লোক রাখলেও তো অনেকটা সুরাহা হয়সেটা এবার একটু ভেবে দেখবেনআমার শরীরটা যন্ত্র নয়আমি আর পারছি না টানতেহাঁপিয়ে পড়েছি।"


অদিতি রাত প্রায় নটায় ফিরল। কলেজে পড়ানোর পর কোচিং ক্লাস সেরে পরিশ্রান্ত হয়ে ঘেমে-নেয়ে বাড়িতে ঢুকতেই মেয়ে বলল,


-মা আমার কাল অঙ্কের ক্লাস-টেস্ট আছে, একটা অঙ্ক কিছুতেই মিলছে না একটু দেখিয়ে দেবে?
শাশুড়ি বললেন,
-আমার বাতের ব্যথার ওষুধটা এনেছ নাকি? আজ ব্যথাটা এত বেড়েছে যে রাতের রান্নাটা আর করতে পারিনি।
অদিতি অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলল,
-মা আমিও সকাল থেকে উঠে আপনাদের সবার চা-জলখাবার, দুপুরের রান্না, মেয়ের টিফিন, ওকে খাইয়ে রেডি করে স্কুলে পাঠিয়ে, এমনকি বিকেলে মেয়ে এসে কী খাবে আপনারা কী খাবেন তার সব ব্যবস্থা করে কলেজে যাই, ফিরি কোচিং সেরে, কখনও কি আপনাদের মনে হয় না যে আমাকে একটু বিশ্রাম দেওয়ার প্রয়োজন আছে!  সকালের যা ভাত-তরকারি আছে তাই রাতে খেয়ে নিতে হবে আমি আর কিছু করতে পারব না। এখন মেয়ের পড়া দেখিয়ে আমায় রাশীকৃত পরীক্ষার খাতা দেখতে হবে। এবার ছেলেকে একটু বলুন সারাদিন শুয়ে-শুয়ে কড়িকাঠ না গুণে রোজগারে একটু মন দিক। আমি যদি বিছানায় পড়ে যাই সংসারটা তো অচল হয়ে যাবে।
শাশুড়ি রমলা বললেন,
-দুটো রোজগার করে খাওয়াও বলে এত কথা শোনাচ্ছ?
-না তারজন্য শোনাইনি শুধু আমার পরিশ্রমের কথাটাই বললাম, বাবাও তো মাস গেলে মোটা পেনশন পান, একটা রান্নার লোক রাখলেও তো অনেকটা সুরাহা হয়, সেটা এবার একটু ভেবে দেখবেন, আমার শরীরটা যন্ত্র নয়, আমি আর পারছি না টানতে, হাঁপিয়ে পড়েছি।
ঘরে ঢোকামাত্র অরুণকে ইজিচেয়ারে গা এলিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে মাথাটা আরও গরম হয়ে গেল বলেই ফেলল,
-এভাবে শুয়ে না থেকে একটু রোজগারের দিকে মন দাও দুবেলা যে খাচ্ছ একবারও ভেবে দেখ কোথা থেকে সব আসছে! মেয়েটা কাল অঙ্কের টেস্ট, ওকে অঙ্কগুলো একটু করালেও তো সংসারের একটু সুবিধা হত।
অরুণ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকল অদিতির মুখের দিকে তারপর বলল আস্তে-আস্তে,
-আমি বুঝি দিতি সবই বুঝি, দুবেলা খাই ঠিকই কিন্তু কী খাই কতটা খাই সে আমি জানি। খেতে গিয়ে খাবার গলা দিয়ে নামতে চায় না, মনে হয় তোমার রক্ত জল করা পয়সায় অন্ন ধ্বংস করছি।
দিতি এবার একটু ঠান্ডা হয়ে ওর পাশে বসে বলল,
-একটা কথা বলব শুনবে?
-হ্যাঁ বলো-না নিশ্চয়ই শুনব?
-বাড়িতে যে এতটা বড় একটা হলঘর আছে সেটা অর্ধেক করে পার্টিশন দিয়ে একটা গানের স্কুল কর, দেখবে অরুণ সেনের গানের স্কুলে ছাত্রছাত্রীর অভাব হবে না। নিজের লেখা গানে নিজে সুর দিয়ে দুটো অ্যালবাম বার কর, আমার বিশ্বাস তুমি আবার আগের মতো দাঁড়িয়ে যাবে
-আবার গানের জগতে ফিরতে বলছ! তুমি জানো সংগীত যার জীবন থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় তার হতাশা আর বঞ্চনা কতখানি?
 
ক্রমশ

No comments:

Post a Comment

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)