বাতায়ন/ছোটগল্প/৩য় বর্ষ/১৪তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা/২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২
মণিজিঞ্জির
সান্যাল সংখ্যা | ছোটগল্প
অর্পিতা
সাহা
মাতৃত্ব
"নার্স ক্রমাগত বলে যাচ্ছে তাকে আপনার বাচ্চাটাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করুন কিন্তু মেয়েটি বলছে দুধ তো আসছেই না কী খাওয়াব এদিকে বাচ্চাটা খিদেতে আরও জোরে কাঁদতে লাগল..."
হাসপাতালে সূর্য যখন এল তখন মোহনা কোলে নিয়ে বসে আছে ওদের একদিনের ছোট্ট ছেলেটাকে... সূর্য স্ত্রী ও ছেলেকে একসাথে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বউ আর ছেলের কপালে একটা করে চুমু খেয়ে নিল, ওয়ার্ডের মধ্যে এমন কাণ্ডে মোহনা সূর্যকে বলে উঠল, "ইস তুমি যে কী করো না এত লোক চারিদিকে..."
সূর্য শুধু মুচকি হাসল। কোলের
ছেলেটা কেঁদে উঠল এমন সময়ে মোহনা ওকে বুকের দুধ দিল তাড়াতাড়ি, দুধ খেতে-খেতে ছেলেটা কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল।
নার্স এসে বাচ্চাটাকে যখন বেবিকটে শোয়াচ্ছে এমন সময়ে ওর ঠিক পাশের বেডের ছোট্ট
বাচ্চাটা ভয়ানক কাঁদতে লাগল।
বাচ্চাটা হয়েছে মাত্র কয়েক
ঘন্টা আগে। এক ঝলক দেখে মোহনার মনে হল মুসলিম পরিবারের বধূ বাচ্চাটার মা এবং ভীষণ
রোগা ক্ষয়াটে চেহারার... নার্স ক্রমাগত বলে যাচ্ছে তাকে আপনার বাচ্চাটাকে বুকের
দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করুন কিন্তু মেয়েটি বলছে দুধ তো আসছেই না কী খাওয়াব এদিকে
বাচ্চাটা খিদেতে আরও জোরে কাঁদতে লাগল... মোহনা সূর্যের মুখের দিকে তাকাল সূর্য
বুঝতে পেরে যেই মাথা নেড়ে সম্মতি দিল মোহনা বাচ্চাটার মাকে বলল,
-যদি কিছু মনে না করেন আমি কি ওকে দুধ খাওয়াতে পারি?
বাচ্চাটির মায়ের মুখ দেখে মনে
হল হাতে যেন চাঁদ পেয়েছে। হেসে বলল,
-আল্লাহ্ মুখ তুলে চাইলেন তাই এমন বহিন পেলাম...
হা বহিন তুমি দাও ওকে দুধ... আমার শরীরের অবস্থা ভাল নয়, জানি আমার বুকে দুধ হবে না ও যে কী খাবে কে
জানে...
মোহনা বলল,
-আমি এখানে যে ক’দিন আছি ওকে দুধ দেব তুমি চিন্তা কর না, বহিন
মুসলিম বউটি এ কথা শুনে খানিক
স্বস্তি পেল মনে হল...
বাচ্চাটা মোহনার দুধে ভরাট
স্তন থেকে দ্রুত গতিতে শব্দ করে প্রাণভরে দুধ খাচ্ছে এত খিদে পেয়েছিল ওর, তা দেখে ভারী শান্তি পেল বাচ্চাটার মা...
জাতপাতের পরোয়া না করা
মোহনার মতন উদার মানসিকতার মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে সূর্যরও ভীষণ গর্ব হতে
লাগল...
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment