ধারাবাহিক গল্প
ডঃ নিতাই
ভট্টাচার্য
শ্রাবণের
দিনগুলি
[৩য় পর্ব]
"হঠাৎ করেই সুখীকে একবার দেখতে পাবার ইচ্ছে মাথা তুলে দাঁড়ায়। মানব মনের এ এক অবোধ্য গতি। যে প্রেম তাকে পুড়িয়ে দগ্ধ করে সেই প্রেমের পরশে দহন জুড়ানোর সুতীব্র ইচ্ছেয় উদগ্রীব হয়ে ওঠে মন।"
পূর্বানুবৃত্তি সুখীকে সে ভালবাসে, ভীষণ ভালবাসে। তবে
সেই ভালবাসা নিধুর বুকের মধ্যেই বেঁচে আছে। সুখীর অন্যত্র বিবাহ হয়ে যাওয়ায়
অফুরান কষ্ট পায় নিধু। তারপর…
রাতের বেলায় রান্নাবান্নার কাজ শেষ করে সুর করে গান ধরত সুখী। সে গান নিধুর মনে জায়গা পায়নি তখন। তারপর সুখী ফিরে গেছে একদিন। নিধুর বিপুল কর্মব্যস্ততা এসেছে কমে। সকালবিকাল নিয়ম করে জলার মাঠ আর তালতলার মাঠে গিয়ে হিসেব নিয়েছে কবে সেচ দেবে, গাছে পোকা ধরল কিনা। আর নিজের অজান্তেই সুখীর ভাবনায় ডুব দিয়েছে।
শ্রাবণে কাজের মাঝে সুখীর
হাসি দেখে মেজাজ হারিয়ে ছিল নিধু দিন যত গড়িয়েছে সেই হাসির মূর্ছনা শুনতে চেয়ে
বাতাসে কান পেতেছে। কথায়-কথায় গান গেয়ে উঠলে সুখীর দিকে আগুনে
বাক্য ছুঁড়েছে নিধু পরে পরে নির্জন দুপুরে সেই গানের সুর গুনগুন করে গেয়ে উঠেছে।
নিজের অবস্থার কথা ভেবে নিজেই হেসে উঠেছে। প্রতিদিন একটু-একটু
করে কথা জমিয়ে মনের ভিতর কথার পাহাড় তৈরি করেছে নিধু, অঘ্রাণ মাসে
সুখী এলে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তাকে না বলা কথার স্রোতে। তারপর হঠাৎ করেই সব বদলে
গেল। সুখীর বিয়ে হয়ে গেল। সেদিন থেকে শুখা বছরের নিষ্ফলা জমির মতো ধু-ধু হয়ে পড়ে আছে নিধুর মন। এই জীবনে আর হয়তো
বর্ষার ধারায় ভিজবে না সেই মনভূমি। এই ভাবেই কাটবে বাকি জীবন। এই কথা নিজেকেই
নিজে বোঝায় নিধু। জীবনের চাওয়াপাওয়ার হিসাব বুঝি অন্য কারোর নির্দেশে হয়, মানুষের
নাগাল নেই সেখানে এই ভেবে শান্ত রাখে নিজেকে। মহিম বাবু বলে,
-তোকে ইন্দাস
যেতে হবে।
পায়ের নিচের মাটি কেঁপে ওঠে নিধুর। তবুও যেতে তাকে হবেই। বাবুর মুখের উপর কথা চলে না।
-দেরি হচ্ছে
চরণ দা। চলি...
বাস
স্ট্যান্ডের দিকে যেতে চায় নিধু।
-এত দূর এলে
একটি বার সুখীর সঙ্গে দেখা করে যাবে না নিধু? এমন দিনে তোমায়
দেখলে সে খুশিই হত। জোর করে চরণ। দাঁড়িয়ে যায় নিধু। হঠাৎ করেই সুখীকে একবার
দেখতে পাবার ইচ্ছে মাথা তুলে দাঁড়ায়। মানব মনের এ এক অবোধ্য গতি। যে প্রেম তাকে
পুড়িয়ে দগ্ধ করে সেই প্রেমের পরশে দহন জুড়ানোর সুতীব্র ইচ্ছেয় উদগ্রীব হয়ে
ওঠে মন। মুখ ফেরায় নিধু। পা মেলায় চরণ মাঝির সঙ্গে। সুখীর মুখটা ভেসে আসে মনে।
হাজার কথা একসঙ্গে ভেসে আসে। সুখীকে কেমন দেখবে, সুখীকে কী বলবে,
সুখীই বা নিধুকে দেখে কী বলবে সেই ভাবনায় ভেসে চলে নিধু, মুখের কথায়
আর্গল পড়ে।
-সুখী দেখ কে
এসেছে?
বাড়িতে পা
রাখে চরণ মাঝি। পিছনে দাঁড়িয়ে নিধু। নিধুকে দেখে চমকে ওঠে সুখী।
-নিধুবাবু যে! কী মনে করে।
ক্রমশ
No comments:
Post a Comment