সখ্য
রিমলির মা চেঁচিয়ে বলে ওঠেন, আবার কেন ব্যাগ থেকে ডার্ক ফ্যান্টাসির প্যাকেট বের করছ? রিমলি বলে, মা আমার খিদে পেয়েছে। রিমলির মা একটু অবাক হয় কারণ রিমলির যে খাই-খাই বাতিক আছে তা নয়। কিন্তু জয়ন্তী পাহাড়ের এই গেস্ট হাউসে আসার পর থেকেই দেখছে ব্যাগ থেকে প্রায়-প্রায় কেক আর বিস্কুট নিয়ে রিমলি উধাও হয়ে যাচ্ছে কোথাও।
পুজোর ছুটিতে কলকাতার ভিড় এড়িয়ে রিমলিকে নিয়ে মা-বাবা আলিপুরদুয়ারের জয়ন্তী পাহাড় আর জয়ন্তী নদী দেখতে এসেছে, গেস্ট হাউসে চার দিনের জন্য রয়েছে তারা। প্রায় প্রতিদিনই ট্রেকিং, টি-গার্ডেন, জয়ন্তীর জঙ্গল, জয়ন্তীর নদী ঘুরে-বেড়িয়ে সন্ধেবেলায় ক্লান্ত হয়ে যান রিমলির মা-বাবা। কিন্তু ছোট্ট ৮ বছরের রিমলি সব সময় থাকে প্রাণবন্ত তার কোন ক্লান্তি নেই। জঙ্গলে-পাহাড়ে কিছু শুকনো খাবার ছোট্ট বাচ্চার মা’কে সব সময় সঙ্গে রাখতে হয়। তাই রিমলির জন্যই কলকাতা থেকে আনা হয়েছে কেক বিস্কুট। সন্ধেবেলায় রিমলি নিজের গেস্ট হাউসের ঘর থেকে বেরিয়ে বাগানের দিকে গেস্ট হাউসের কোয়ার্টারের দিকে গেল।
গত দু’দিনে তার একটি বন্ধু হয়েছে। তার নাম সুখী। সুখী হল গেস্ট হাউসের রাঁধুনির মেয়ে। সন্ধেবেলায় রিমলি মায়ের কাছ থেকে লুডো চেয়ে নিয়ে এক দৌড়ে চলে গেল সুখীর ঘরের দিকে। সুখী কোনদিনও লুডো দেখেনি, লুডো খেলেনি ফলে রিমলির কাছ থেকে সে খেলাটা শিখতে লাগল। এদিকে সন্ধে পেরিয়ে রাত্রি হল রিমলি ঘরে না আসায় তার মা চিন্তিত হয়ে সুখীর ঘরের দিকে গেল। রিমলির মা অবাক হল কত কেক আর বিস্কুটের প্যাকেট রয়েছে সুখীর ঘরে! মনে মনে একটু রাগও করলেন তিনি। অর্থাৎ রিমলি এই তিন দিন ধরে নিজে কিছু না খেয়ে সব সুখীকে দিয়ে গেছে। হঠাৎ প্রচণ্ড রেগে গিয়ে লুডোটা তুলে নিয়ে রিমলির হাত ধরে টানতে টানতে চলে এলেন তিনি। রিমলি কাঁদতে লাগল আর বলল, সুখীর ঘরে একটা কাঠের পুতুল ছাড়া আর কোনো খেলনা নেই। সুখী কোনদিনও ডার্ক ফ্যান্টাসি বিস্কুট খায়নি তাই রিমলি ওর বন্ধুর জন্য লুডো আর বিস্কুট নিয়ে গিয়েছিল। রিমলির মা এই-সব কোন কথা শুনলেন না। মুখ ভার করে বসে রইলেন। কারণ রাঁধুনির মেয়ের সঙ্গে এতটা সখ্যতা তিনি হয়তো মেনে নিতে পারছিলেন না। তাছাড়া পরের দিনই তাদের কলকাতার জন্য ট্রেন ধরতে হবে তাই মা গোছগাছের কাজে মন দিলেন।
পরের দিন সকাল সাড়ে দশটায় রিমলিদের গেস্ট হাউস ছেড়ে বেরোবার কথা। একবার সুখীকে দেখার খুব ইচ্ছা ছিল রিমলির। কিন্তু গাড়িতে ওঠা পর্যন্ত সে সুখীকে দেখতে পেল না। গাড়ি এগোতে লাগল। রিমলির মন ভারাক্রান্ত।
বক্সা থেকে বেরোনোর চেকপোষ্ট-এর কাছে রিমলি অবাক হয়ে গেল, সুখী তার বাবাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সুখীর বাবা হাত দেখিয়ে গাড়ি থামালেন। সুখী হাতের ইশারায় রিমলিকে গাড়ি থেকে নামতে বলল। ওর হাতে তুলে দিল একটা কেকের প্যাকেট আর নিজের একমাত্র খেলনা কাঠের পুতুলটি। রিমলি নিতে চাইল না। রিমলির মা’র চোখে জল। তিনি বললেন নাও রিমলি। আজ তুমি নিলে সুখী সব চেয়ে বেশি খুশি হবে। গাড়ি এগিয়ে চলল জয়ন্তী পাহাড় আর জয়ন্তী নদীকে ছেড়ে ইট-কাঠের জঙ্গল, কংক্রিটের শহরের দিকে।
সমাপ্ত
ভালো হয়েছে গল্পটি।
ReplyDeleteShort but touching
ReplyDeleteসুন্দর গল্প, কলম চলুক।
ReplyDeleteবাহ্ রে
ReplyDeleteখুব ভালো মনের পরস ও স্পর্শ সমৃদ্ধ লেখা । আরো লেখা আশা করছি।
ReplyDeleteছোট্ট অথচ হৃদয় ছুঁয়ে যায় !
ReplyDelete