পাদপ্রদীপের টানে
পাদপ্রদীপের অমোঘ আকর্ষণ উপেক্ষা করে বর্তমানে এমন মানুষ বোধহয় গোটা পৃথিবীতে বিরল। সে সমাজের যে-কোন ক্ষেত্রেই হোক-না-কেন। আর এই আকর্ষণকে কেন্দ্র করেই যত অপ্রীতিকর ঘটনা। ভাই-ভাই, ভাই-বোন, বাবা-মা, বন্ধুতে-বন্ধুতে রেষারেষি, হিংসা। এমনকি ক্ষিপ্ত, চূড়ান্ত ক্ষতিকর, আক্রমণাক্তক হয়ে খুনজখমও বিচিত্র নয়।
কেউ কেউ হয়তো অতি সরলীকরণ করে বলবেন, মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থানই এর জন্য দায়ী। হ্যাঁ, কিছুটা হলেও সত্যি। কিন্তু সমস্যার গভীরে যদি তাকানো যায়, আর অন্য কোনও সত্য কি উঠে আসে না? কেন এমন হল, যারা চল্লিশ বা পঞ্চাশের আশপাশ বা তার বেশি, তারা তো বিভিন্ন মূল্যবোধ, আদর্শকে মাথায় নিয়েই বড় হয়েছেন। পরিণত বয়সে তারা বা তাদের পরিমন্ডলের মানুষজন এমনটা হতে দিলেন কেন? মানুষের জীবনে সত্য, ত্যাগের মহিমা যা বিবেকানন্দ-সহ অতীতের বিভিন্ন মনীষীরা বলে গেছেন, সব অকার্যকরী! ধর্মের কথা বাদ দিয়েও বলা যায়, মানুষের ব্যবহারিক জীবনে তার কোনও মূল্যই নেই!
আসলে অধিকাংশ সাধারণ মানুষই চর্চা, নিষ্ঠা, অধ্যাবসায় ছাড়াই সব পেতে চায়। সে সাহিত্যের আঙিনা বা যেখানেই হোক। এই শর্টকাট করতে গিয়েই যত সমস্যা। অথচ মানুষ যদি একাগ্র চিত্তে সাধনায়, শর্টকাট রাস্তায় বা কারোর দয়ায় নয়, যা-কিছু পেতে চায় তা অর্জন করতে চাইত তাহলে এমন সমস্যায় মানুষকে জর্জরিত হতে হত না। তার সাফল্যে, পাদপ্রদীপের আলোয় সে এমনিতেই উদ্ভাসিত হতে পারত।
মানুষের অপরিমিত লোভে পৃথিবী ভয়ংকর ভাবে দূষিত। যার মূল্য দিচ্ছে সমগ্র জীবজগৎ। অথচ একটু চেষ্টা করে নিজেকে একটু বদলালেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত, সব ক্ষেত্রেই। এক দিনে নিশ্চয়ই নয়, তবে ধীরে ধীরে।
মানুষ হিসেবে মানুষের উপরে এই বিশ্বাস, আস্থা রাখা, খুব বেশি কিছু চাওয়া!
No comments:
Post a Comment