মেন্টাল ডিজ-অর্ডার
[১ম পর্ব]
শতদ্রু কথা বলতে থাকে।
-স্যার, আমাদের ভালবেসে বিয়ে। পালিয়ে। তখন ও চাকরি পায়নি। প্রেম করা কালীন
দেখেছি, ও বিকেল তিনটেয় দেখা করতে বললে, আসত সন্ধ্যা ছ’টায়। আমি দিব্যি ঘন্টার
পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে থাকতাম। ও ইচ্ছে করে এটা করত কিনা বুঝতাম না। সময়ের এই
গরমিল একদিন নয়! দিনের পর দিন! তবুও চুপচাপ মেনে নিতাম। ভাবতাম বিয়েশাদি করলে
ঠিক শুধরে নেবে। আমার বন্ধুরা এসব শুনে অবাক হত! বলত, ‘সতু, তুই ভেবে দেখ, সত্যি
তুই ভুল করছিস কিনা! ওকে বিয়ে করার ঠিক পরে পরে বুঝতে পারবি, কত ধানে কত চাল।’ এখন বুঝতেই পারছি, কতটা আবেগপ্রবণ
ছিলাম তখন। বাস্তবে কিছুই বুঝতাম না। তখন ওদের কথায় কোন পাত্তা দিইনি। দীর্ঘ ছ’
বছরের পর বিয়ে করলাম। বিয়ের পরে পরে ও চাকরি পেল। আমিও ভাল ছাত্র ছিলাম। কেজিও
পোস্টে তখন এক বছর চাকরি করছি। ওরও ভাল মাইনে। দু’জনের যৌথ আয়ের পরিমাণ ভেবে চমকে
উঠতাম। স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। বড় ছেলেকে ভাল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি
করালাম। সংসারে স্ট্যাটাস বাড়ল। ওর চাকরির এক মাস দুই মাস ছাড়িয়ে বছর ঘুরল।
অর্থ যৎসামান্য শুধু ছেলের জন্য খরচ করত। যেটা না দিলে নয়। এইভাবেই দশ বছর কেটে
গেল। কোন কারণে চোখে পড়ল, ওর তিন-তিনটে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পুরো জিরো ব্যালান্স। এতগুলো
টাকা কোথায় রাখল? কী করল? জিজ্ঞেস করলে উত্তর নেই। এই নিয়ে সংসারের নানা ভাবনা
ভাবতে ভাবতে এক কঠিন রোগ ধরল আমার। এত ভুলের পরেও ওকে ছাড়তে পারলাম না। কোথাও
বেড়াতে যাব বললে ও চোখ বন্ধ করে না করত। কাছাকাছি হোটেলে, রেস্টুরেন্টেও না।
বাড়িতে কোন খাবার নিয়ে এলে, ছুঁয়েও দেখেনি! আজও না। তারপর দ্বিতীয় সন্তান এল।
কথা থামিয়ে ডাক্তারবাবু বললেন,
শতদ্রুর কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে ডাক্তারবাবু দেখছেন অর্চিশার অসহিষ্ণুতার পরিস্থিতি।
এইভাবে শতদ্রু অকপটে সব ফাঁস করে দেবে ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি সে। অর্চিশার
চোখে-মুখে যেন অসহনীয় মানসিক চাপ। চোখ-মুখ থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে সেই
চাপগুলি। বার বার ছটফট করছে। বসতে বসতে তার গ্রীবা ঊর্ধ্বে সম্প্রসারণ করছে। শতদ্রু
এক মনে বলতে থাকে।
-কিন্তু স্যার, ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, ওর গতিপ্রকৃতি। তলায় তলায় ও এক আলাদা
জগত গড়ে নিয়েছে।
বারবার বোঝালাম। বললাম,
কথা শুনতে শুনতে ডাক্তারের দৃষ্টি হঠাৎ শতদ্রুর দিকে। বললেন,
ক্রমশ
No comments:
Post a Comment