প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ওয়েটিং লিস্টে আছি... | রতনলাল আচার্য্য

বাতায়ন/মাসিক/কবিতা/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | কবিতা রতনলাল আচার্য্য ওয়েটিং লিস্টে আছি ....

Thursday, October 26, 2023

মেন্টাল ডিজ-অর্ডার | বিরথ চন্দ্র মণ্ডল

বাতায়ন/ধারাবাহিক/১ম বর্ষ/২৩তম সংখ্যা/১০ই কার্তিক, ১৪৩০

ধারাবাহিক গল্প
বিরথ চন্দ্র মণ্ডল

মেন্টাল ডিজ-অর্ডার

[১ম পর্ব]


কথা শুনতে শুনতে ডাক্তারবাবু বিস্ময়ের সুরে বললেন,
-ও তাই নাকি!
ডাক্তারবাবুর এমন প্রতিক্রিয়ায় অর্চিশা মনে আরও জোর পায়। বলে,
-হ্যাঁ ডাক্তারবাবু! শুধু কী তাই! অফিসে যাওয়া-আসা নিয়েও রীতিমতো চিৎকার চেঁচামেচি! আর মিছিমিছি সন্দেহ! অকারণে ঝামেলা। অফিসে হাজার কাজের চাপ। তারপর ঘরে এসে যদি দু'দণ্ড শান্তি না পাই, তাহলে বলুন! ভাল লাগে কি? দিনরাত এই নিয়ে অশান্তি লেগেই আছে। সংসারে টিকে থাকাই দায়! অনেক কষ্টে ডক্টর চৌধুরীর কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করার পর, তিনি পাঠালেন আপনার কাছে। আমার আর ভাল লাগছে না ডাক্তারবাবু।
বলে থেমে যায় অর্চিশা। ডাক্তারবাবু ফের জিজ্ঞেস করলেন,
-আর কিছু?
উত্তরে চোখে-মুখে বিরক্তির ভাব প্রকাশ করে। বলে,
-না স্যার। সেই একই প্রসঙ্গ আমার ভাল লাগে না।

ডঃ তমোনাশ চ্যাটার্জী। বিখ্যাত সাইকোলজিস্ট। সাইক্রিয়াটিস্টদের একমাত্র মুশকিল আসান। শতদ্রুর উদ্দেশ্যে বলেন,
-আপনি তো সব শুনলেন। এ নিয়ে কিছু বলার থাকলে বলুন।
শতদ্রু বলে,
-স্যার, এর আগেও বার কয়েক কলকাতায় ছুটেছি এসএসকেএমে। মেন্টাল হসপিটালে। আমি এমন কোন মানসিক রোগী নই। ওর সামান্যতম অভ্যাস পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম মাত্র। তা না করে উল্টে ঘরে-বাইরে, চতুর্দিকে নিজেকে সৎ ও সাচ্চা বানানোর জন্য, আমাকে মানসিক রোগী বানানোর জন্য, রীতিমতো জোরদার নাটক চালিয়ে যাচ্ছে এখনো। এ নিয়ে কোন ডাক্তারবাবুকে কিছুই বলিনি। প্রসঙ্গও তেমন আসেনি। তবে আজ বলছি। প্রথম থেকেই বলি তাহলে।

শতদ্রু কথা বলতে থাকে।
-স্যার, আমাদের ভালবেসে বিয়ে। পালিয়ে। তখন ও চাকরি পায়নি। প্রেম করা কালীন দেখেছি, ও বিকেল তিনটেয় দেখা করতে বললে, আসত সন্ধ্যা ছ’টায়। আমি দিব্যি ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে থাকতাম। ও ইচ্ছে করে এটা করত কিনা বুঝতাম না। সময়ের এই গরমিল একদিন নয়! দিনের পর দিন! তবুও চুপচাপ মেনে নিতাম। ভাবতাম বিয়েশাদি করলে ঠিক শুধরে নেবে। আমার বন্ধুরা এসব শুনে অবাক হত! বলত, ‘সতু, তুই ভেবে দেখ, সত্যি তুই ভুল করছিস কিনা! ওকে বিয়ে করার ঠিক পরে পরে
  বুঝতে পারবি, কত ধানে কত চাল।’ এখন বুঝতেই পারছি, কতটা আবেগপ্রবণ ছিলাম তখন। বাস্তবে কিছুই বুঝতাম না। তখন ওদের কথায় কোন পাত্তা দিইনি। দীর্ঘ ছ’ বছরের পর বিয়ে করলাম। বিয়ের পরে পরে ও চাকরি পেল। আমিও ভাল ছাত্র ছিলাম। কেজিও পোস্টে তখন এক বছর চাকরি করছি। ওরও ভাল মাইনে। দু’জনের যৌথ আয়ের পরিমাণ ভেবে চমকে উঠতাম। স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। বড় ছেলেকে ভাল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করালাম। সংসারে স্ট্যাটাস বাড়ল। ওর চাকরির এক মাস দুই মাস ছাড়িয়ে বছর ঘুরল। অর্থ যৎসামান্য শুধু ছেলের জন্য খরচ করত। যেটা না দিলে নয়। এইভাবেই দশ বছর কেটে গেল। কোন কারণে চোখে পড়ল, ওর তিন-তিনটে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পুরো জিরো ব্যালান্স। এতগুলো টাকা কোথায় রাখল? কী করল? জিজ্ঞেস করলে উত্তর নেই। এই নিয়ে সংসারের নানা ভাবনা ভাবতে ভাবতে এক কঠিন রোগ ধরল আমার। এত ভুলের পরেও ওকে ছাড়তে পারলাম না। কোথাও বেড়াতে যাব বললে ও চোখ বন্ধ করে না করত। কাছাকাছি হোটেলে, রেস্টুরেন্টেও না। বাড়িতে কোন খাবার নিয়ে এলে, ছুঁয়েও দেখেনি! আজও না। তারপর দ্বিতীয় সন্তান এল।
কথা থামিয়ে ডাক্তারবাবু বললেন,

-এত কিছু জেনেও আবার ইস্যু নিলেন কেন?
শতদ্রু বলল,
-মানুষ মাত্রেই তো ভুল করে। হয়তো ও একটু বেশি ভুল করেছে। ও ঠিক হয়ে যাবে।

শতদ্রুর কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে ডাক্তারবাবু দেখছেন অর্চিশার অসহিষ্ণুতার পরিস্থিতি। এইভাবে শতদ্রু অকপটে সব ফাঁস করে দেবে ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি সে। অর্চিশার চোখে-মুখে যেন অসহনীয় মানসিক চাপ। চোখ-মুখ থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে সেই চাপগুলি। বার বার ছটফট করছে। বসতে বসতে তার গ্রীবা ঊর্ধ্বে সম্প্রসারণ করছে। শতদ্রু এক মনে বলতে থাকে।
-কিন্তু স্যার, ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, ওর গতিপ্রকৃতি। তলায় তলায় ও এক আলাদা জগত গড়ে নিয়েছে।
বারবার বোঝালাম। বললাম,

-খুব ভুল করছ অর্চিশা। এ পথ সঠিক পথ নয়। আমার কোন কথাতেই আমল দিল না।

কথা শুনতে শুনতে ডাক্তারের দৃষ্টি হঠাৎ শতদ্রুর দিকে। বললেন,

-ঠিক বুঝলাম না কী বললেন!
শতদ্রু বলল,

ক্রমশ

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)