প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ভিক্ষুক গাছ | তৈমুর খান

বাতায়ন/মাসিক/কবিতা/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | কবিতা তৈমুর খান ভিক্ষুক গাছ দু - একটি ভিক্...

Saturday, October 7, 2023

শারদ | শিউলিবেলা | নীলম সামন্ত

বাতায়ন/শারদ/গদ্য/১ম বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১৯শে আশ্বিন, ১৪৩০

শারদ | গদ্য
নীলম সামন্ত

শিউলিবেলা


আমাদের কোথাও যাওয়ার নেই৷ তাও সকাল হওয়ার আগেই বেরিয়ে পড়ি। বাইরের বেঞ্চে বসে জুতোর ফিতে বাঁধতে বাঁধতে দেখি রাত্রি কেমন ফিকে হয়ে যায় শেষের দিকে৷ পাড়ার দু-এক বাড়ির বৃদ্ধ কেশে ওঠে। কোন বাড়ির বৌ ছড়া ফেলায়৷ আমাদের শাঁখ বাজে৷ আমরা বেরিয়ে পড়ি৷ রাস্তায় অসংখ্য সাপ মরে পড়ে থাকে৷ সাবধানে পা ফেলি। সাপ মরে গেলে কামড়ায় না; সে কথা ভুলে যাই৷ ভুলে যাই বলেই পা ফেলতে পারি না৷ যারা মনে রাখে তাদের জুতোর তলায় চাকার তলায় মরা সাপে আবারও মরে।

মৃত্যুর পর আবারও মরলে কোন যন্ত্রণা হয় না৷ কেউ ঘুরে কাঁদে না৷ কেউ তাকায়ও না৷ কালো শুকোরের বেয়াদব গোঙানির মতো পিচের রাস্তা শুয়ে থাকে। নির্বিকার মহাকাশ। দূর থেকে দেখি পুরোনো বট গাছে গামছা পরা পুরুত এক ঘটি জল নিয়ে পরিক্রমা করছেন। বাড়িতে তাঁর কাঠের জ্বালানি, কাঠের খাট। বাড়িতে বাটালি মেরে নিখুঁত করছে ড্রেসিং টেবিলের ময়ূর৷ গাছকে এভাবেও পুজো করতে হয়৷ গাছ আমাদের নির্বাক দাতা৷

আমরা গল্প করতে করতে হাঁটি৷ গ্রামে মেয়েদের প্রকাশ্য রাস্তায় ছুটতে নেই৷ বৌদের জোরে পা ফেলতে নেই৷ আস্তে হাঁটি বলেই এ বাড়ি-ও বাড়ির কথা কানে আসে। কোথাও উঁকি মেরে দেখি বাড়ির কর্তারা ডিসের বাটিতে পান্তা অথবা হাঁড়িয়া নিয়ে বসে আছে। বৌ-রা পুকুর ঘাটে হাঁড়ির কালি তোলে। স্নান করে। ধুয়ে ফেলে রাত্রিযাপন। চাল ঝুঁকে পড়া ঘরগুলো থেকে ছেলেমেয়েরা বেরিয়ে আসে। ঝুঁটিওয়ালা মোরগ ঘুরে বেড়ায়। আহা। ভারী মধুর। পড়াশুনোর জিজ্ঞেস করব ভাবি বাচ্চাগুলোকে৷ সামনেই দোতলা ইস্কুল, নলকূপ; সরকার আর উন্নয়ন তালা ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি৷ ছেলেরা বাবা দাদুদের সাথে ব্যাগ কাঁধে বেরিয়ে পড়ে। কাজ শিখলে খাওয়া জোটে। গ্রামে এখন একশো দিনের কাজ। সেখানেও হাজিরায় উপস্থিত বলতে হয়।

দেখতে দেখতে সূর্য উঠে পড়ে। তাপ বাড়ে। দুধ সমিতিতে ভিড় বাড়ে। ভেজাল-নির্ভেজাল মানুষেরা হাসি মুখে লাইনে দাঁড়ায়। গায়ে গা লাগিয়ে৷ এখানে মহামারী অদেখা মহাসাগর৷ পেটে ভাত জুটলেই সুখের দিন ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে থাকে ঘরে-বাইরে৷ তাও মানুষের অভাব৷ দুশ্চিন্তা। আমরা এভাবে আর কোথাও পৌঁছোতে পারি না৷ ফিরে আসার কথা ভেবে ঘুরে দাঁড়াই। দূর থেকে ঘর দেখি। টুপটাপ ঝরতে থাকে শিউলির শেষবেলা। মা ফোন করে বলেন, "তোমরা ঘরে নেই কেন?"

সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)