শিউলিবেলা
আমরা গল্প করতে করতে হাঁটি৷ গ্রামে মেয়েদের প্রকাশ্য রাস্তায় ছুটতে নেই৷ বৌদের জোরে পা ফেলতে নেই৷ আস্তে হাঁটি বলেই এ বাড়ি-ও বাড়ির কথা কানে আসে। কোথাও উঁকি মেরে দেখি বাড়ির কর্তারা ডিসের বাটিতে পান্তা অথবা হাঁড়িয়া নিয়ে বসে আছে। বৌ-রা পুকুর ঘাটে হাঁড়ির কালি তোলে। স্নান করে। ধুয়ে ফেলে রাত্রিযাপন। চাল ঝুঁকে পড়া ঘরগুলো থেকে ছেলেমেয়েরা বেরিয়ে আসে। ঝুঁটিওয়ালা মোরগ ঘুরে বেড়ায়। আহা। ভারী মধুর। পড়াশুনোর জিজ্ঞেস করব ভাবি বাচ্চাগুলোকে৷ সামনেই দোতলা ইস্কুল, নলকূপ; সরকার আর উন্নয়ন তালা ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি৷ ছেলেরা বাবা দাদুদের সাথে ব্যাগ কাঁধে বেরিয়ে পড়ে। কাজ শিখলে খাওয়া জোটে। গ্রামে এখন একশো দিনের কাজ। সেখানেও হাজিরায় উপস্থিত বলতে হয়।
দেখতে দেখতে সূর্য উঠে পড়ে। তাপ বাড়ে। দুধ সমিতিতে ভিড় বাড়ে। ভেজাল-নির্ভেজাল মানুষেরা হাসি মুখে লাইনে দাঁড়ায়। গায়ে গা লাগিয়ে৷ এখানে মহামারী অদেখা মহাসাগর৷ পেটে ভাত জুটলেই সুখের দিন ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে থাকে ঘরে-বাইরে৷ তাও মানুষের অভাব৷ দুশ্চিন্তা। আমরা এভাবে আর কোথাও পৌঁছোতে পারি না৷ ফিরে আসার কথা ভেবে ঘুরে দাঁড়াই। দূর থেকে ঘর দেখি। টুপটাপ ঝরতে থাকে শিউলির শেষবেলা। মা ফোন করে বলেন, "তোমরা ঘরে নেই কেন?"
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment