প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ওয়েটিং লিস্টে আছি... | রতনলাল আচার্য্য

বাতায়ন/মাসিক/কবিতা/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | কবিতা রতনলাল আচার্য্য ওয়েটিং লিস্টে আছি ....

Thursday, October 26, 2023

মা’কে শ্রীতমা | সীমা ব্যানার্জি-রায়

বাতায়ন/হলদে খাম/১ম বর্ষ/২৩তম সংখ্যা/১০ই কার্তিক, ১৪৩০

হলদে খাম
সীমা ব্যানার্জি-রায়

মা’কে শ্রীতমা


ওঁ গুরুবে নমঃ
রাত ১১টা, রবিবার পাঁচড়া গ্রাম

শ্রীচরণেষু মা,

তোমার করুণ মুখটা বড্ড মনে পড়ছে। তুমি জানো, আমি কোনোদিন অন্যায় করিনি। একটু পড়াশুনা করে জগতকে দেখতে পাবার আশা সেই ছোটবেলা থেকে আমার মনে বপন করেছি। আর সেই বীজ রোপণ করেছে আমার সোনা মা-টা। সেদিন স্কুল থেকে আসার সময় বাবার বিয়ে করার কথা মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। এই বয়সে বিয়ে করলে সংসার আর সন্তান এই হবে আমার জীবন পথের পাথেয়।

আচ্ছা মা, তুমি তো তা চাও না, চাও কি? দু’দিন আগে বাবার বক্তব্য ছিল, দিনকাল নাকি আর আগের মতো নেই, যে-কোন সময় বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। বিয়ের পরে যে সেই বিপদ আসবে না- বাবা কি তা জানে? মা, তুমি বলো? মাগো- তুমিই সব সময় আমায় উৎসাহ দিয়ে এসেছ। তুমিই বলেছ, তোকে আমার মতন হলে হবে না শ্রীতমা। তোকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তাই অযাচিত ভাবে এক বান্ধবীর সাহায্যে একটা সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গেছি মা। তোমার মনের কোণের আশার সেই পথে যাবার একটা ক্ষীণ আলোর সন্ধান পেয়ে সেদিকেই পা বাড়াচ্ছি। বিশ্বাস করো মা, কোনো কু-পথে যাচ্ছি না। তোমার শিক্ষা আর আশীর্বাদ যে আমার রক্ষাকবচ। যদি তারা আমাকে রক্ষা করতে না পারে তাহলে, মা গঙ্গার কোল তো থাকবেই। ভয় নেই মা, নিজের পায়ের মাটি শক্ত করে তোমার বুকে আবার ফিরে আসবে তোমার তমা। শুধু একটু ধৈর্য-একটু প্রার্থনা তোমার তমা মা’র জন্য। মাগো! এই জন্যে তোমায় অনেক কটু কথা শুনতে হবে বাবা আর কাকুর কাছে। একদম ভেঙে পোড়ো না। আমরা দু’জনে দু’দিকে যে যুদ্ধে নামতে চলেছি তাতে আমার সম্বল একমাত্র আমার মায়ের আশীর্বাদ- আর তোমার কাছে তোমার ঠাকুরের আশীর্বাদ। দেখো আমরা জয়ী হবই। নয়তো ঠাকুর মিথ্যে। কাক-পক্ষী ডাকার আগেই আমার দু’টো শাড়ি, সায়া-ব্লাউজ আর তোমার দেওয়া হাতখরচের কিছু খুচরো নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাব। হ্যাঁ! তোমার পায়ের ধুলো নিয়ে যাব, সেই হবে আমার যুদ্ধের হাতিয়ার। সকলকে বোলো আমি মামা-মামির কাছে কাশীতে চলে গেছি। মামার সঙ্গে বাবার যা সম্পর্ক বাবা সেখানে কোনদিন আমার খোঁজে যাবে না। সে আমি-তুমি ভাল ভাবেই জানি। তবু বলছি আমার খোঁজ করার চেষ্টা কোরো না, তার ফল আমার পক্ষে ভাল হবে না, মা। তোমায় এই কষ্টের মধ্যে ফেলতে হল বলে খুব খারাপ লাগছে। আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি রোজ চোখের জল ফেলবে- কিন্তু না মা না একদম না। তোমার মেয়ে কখনই কোনো ভুল পথে যাবে না। স্কুলে চিরটাকাল প্রথম হয়ে এসেছি তার জন্য দায়ী তুমি। হায়ার-সেকেন্ডারি পাশের পর যে বাকি পরীক্ষাগুলো দেব, তাতেও দেখো তোমার মেয়ে প্রথম হচ্ছে। তুমি ছাড়া যে আমার আর কেউ নেই মা। যেখানেই থাকি প্রতিদিন রাত্রে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম থাকবে তোমার ঐ দু’টি রাঙা পায়ে। স্কুলে পড়েছিলাম মানুষ যেন এক অন্তহীন স্প্রিং। ছোট বাক্সে জড়ানো আছে। সেই মানুষ বাইরে আসার চেষ্টা করছে। যা কিছু সামাজিক ঘটনা আমরা দেখি, তা কিন্তু এই চেষ্টার ফল। ও মা, মাগো প্রাণ ভরে আশীর্বাদ কোরো তোমার আদরের তমাকে। যখন এ চিঠি তুমি পড়বে... আমি তখন অনেক দূরে। প্রণাম নিও আমার সোনামণি মাগো। আর খুব ভাল থেকো শুধু তোমার তমার জন্য। একদিন তোমার মুখ উজ্জ্বল করবই- তোমার মুখে হাসি ফোটাবই এই আমার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। আজ এইটুকুই থাক- কেমন? ঠিক মতন খাওয়াদাওয়া কোরো আর সবাইকে ভাল রেখো। চিন্তা একদমই করবে না। আমি ফিরে এসে যেন দেখি আমার মা-টা একদম সুস্থ। অনেক দুঃখ পেয়েছ সারা জীবন, আর তোমার সেই দুঃখ ভরা দিনগুলোই আজ আমাকে এত সাহসী করে তুলেছে। আমার সোনামণি মা’টা... জীবনটা তো মাত্র ক’ঘন্টার... কেটে যাবে হু হু করে...

ইতি—

তোমার তমা অজানা পথের পথযাত্রী


No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)