বাতায়ন/মাসিক/রম্যরচনা/২য়
বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক, ১৪৩১
চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | রম্যরচনা
কৌশিক
চট্টোপাধ্যায়
হাওয়াই চপ্পল
"বলেছিলাম না শালা আমার ক্যারেক্টারটাই অমন। নিজে থেকেই কুড়ুলের কাছে চলে যায়। যা বলছি উল্টো উল্টো মানে হচ্ছে। আর এই দুই মহিলা থাকতে বিপদ বাড়বে বই কমবে না। যেমন অসন্তুষ্ট মন নিয়ে এসেছে তারপর এখনও জুতো চটি পছন্দ হয়নি।"
এমন একটা
ডেঞ্জারাস শিরোনাম এমন একটা সময়ে দেওয়া নেহাতই দুঃসাহসিকতা কিন্ত রম্য
রচনাকাররা একটু দুঃসাহসিক হন। হাস্যরস সৃষ্টি করতে গিয়ে যে
প্রাণের ঝুঁকি নিয়েছেন কেউ কেউ তাও অনেকের অজানা নয়। আর কারোর কারোর স্বভাব থাকে
পায়ের কাছে কুড়ুল না থাকলে কুড়ুলের কাছে পা নিয়ে চলে যাবার। এই
শিরোনামের লেখক
সেই ক্যাটাগরির মধ্যেই পড়েন তা নইলে সম্পাদক বলল আর
ড্যাং ড্যাং
করে এমন বিষয়ে কেউ মুখ খোলে। আবার এই লেখা ছাপার সাহস বা
দুঃসাহস যে
সম্পাদক রাখে সে তো নেপোলিয়ন বোনাপার্টের পর্যায়ে চলে যেতে পারে। কিন্ত সুধী
পাঠকবৃন্দ এই রচনার সাথে দূর দূর পর্যন্ত যার কথা ভাবছেন তার সাথে কোনও সম্বন্ধ
নেই। অতএব যারা অতি উৎসাহিত হয়েছিলেন এবং
যারা ক্রুদ্ধ হতে শুরু করেছিলেন উভয়েই ঠান্ডা মাথায় আসুন মূল ঘটনায়
আসি।
কদিন ধরেই হাওয়াই চপ্পলটা খুব ঝামেলায় ফেলছিল কিন্ত অফিস থেকে ফিরে আর দোকান যাওয়ার সময় হচ্ছিল না। অফিসে জুতো পরে যাই কিন্ত ঘরে এবং পাড়ায় হাওয়াই চপ্পল ছাড়া অনেক বাঙালির মতো আমিও অচল। সেদিন একটু আগে ছুটি হয়ে গেল অফিস। তাই বিকেল বিকেল বাজারে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথম যে জুতোর দোকান পেলাম সেখানেই ঢুকে পড়লাম। দোকানে তখন এক মাঝবয়সী মহিলা তার মেয়েকে নিয়ে দোকানে বসে। দুজনেরই পায়ের তলায় দুজন সেলসম্যান কাঁচুমাচু মুখে বসে আছে। অনেকগুলি চটি, জুতো ডাঁই হয়ে পাশেই পড়ে আছে কিন্ত দুজনের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। দোকানদার উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে আছে যেমন করে বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের জয়েন্টের রেজাল্ট দেখে। মেয়েটির জন্য আনা জুতোগুলো মা নাকচ করে দিচ্ছে আর মায়ের জন্য আনা চটিগুলো মেয়ে নাকচ করে দিচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলল এই খেলা। আমি খানিকক্ষণ দেখছিলাম কিন্ত তারপর ভাবলাম খেলা তো হবে কিন্ত আমি কী যেন কেন এসেছিলাম! ও হ্যাঁ, জুতো না চটি না ও মনে পড়েছে হাওয়াই চপ্পল কিনতে। একটু গলা খাঁকরে বললাম, "দাদা, হাওয়াই চটি আছে?"
মেয়েটি বলল, "ইডিয়ট"
ভদ্রমহিলা
বললেন, "কী
অসভ্য"
দোকানদার কেমন
ভ্যাবলার মতন মুখ করে তাকিয়ে আছেন। সেলসম্যান
দুজন কেমন রাগ রাগ মুখ করে তাকিয়ে আছে। আমি ভাবলাম কী হলো রে বাবা। জুতোর দোকানে জুতো পাওয়া যাবে না তো
কি কেরোসিন পাওয়া যাবে? ব্যাপারটা কী হলো বোধগম্য হলো
না। ইতোমধ্যেই
ভদ্রমহিলা আবার মুখ খুললেন,
"দেখে তো ভদ্রলোক মনে হচ্ছে তা ভদ্রমহিলাদের সম্পর্কে
অসম্মানজনক কথা বলতে নেই জানেন না! মিনিমাম সেন্স নেই?"
আমি বললাম, "আমি আবার
কাকে অসম্মানজনক
কথা বললাম।
আমি তো শুধু বললাম যে হাওয়াই চটি আছে কিনা?"
"দেখলে মা
দেখলে হাউ রিডিকিউলাস!
হি ইজ সিওর
এ মাকু অর বিজ।"
এতক্ষণ ধরে দুই মহিলাকে জুতো দিয়ে (জুতিয়ে নয়) সন্তুষ্ট করতে না পেরে দুই পরাজিত সেলসম্যান ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার উপর। ওরে ব্যাটারা আমার সঙ্গে না লেগে আমাকে সাপোর্ট করলে পারতিস। বিনা ঝঞ্ঝাটে তোদের কাছ থেকে জিনিস কিনতে পারতাম! কিন্ত কপাল খারাপ পাঁচ চক্রে গোবেচারা খলনায়ক। দোকানদার ভদ্রলোক বললেন, "দেখুন এইসব পলিটিক্যাল কথাবার্তা এখানে বলবেন না প্লিজ। এসব ঝামেলা করার জায়গা এটা নয়।"
এবার আমার মাথার মধ্যে কারেন্ট খেলে গেল। এই খেয়েছে। কী বলেছি আর কী বুঝেছে। একটু গলা খাঁকরে বললাম, "আপনারা যা ভাবছেন তা নয়। আমি তো আর ওই ওনার হাওয়াই চটি খুঁজছি না। আমি অরিজিনাল হাওয়াই চটি চাইছি।"
"মানেটা কী? আপনার সাহস তো কম নয়। আপনি ওনাকে ডুপ্লিকেট বলছেন।"
বলেছিলাম না
শালা আমার ক্যারেক্টারটাই অমন। নিজে থেকেই কুড়ুলের কাছে চলে যায়। যা বলছি উল্টো
উল্টো মানে হচ্ছে। আর এই দুই মহিলা থাকতে বিপদ বাড়বে বই কমবে না। যেমন অসন্তুষ্ট
মন নিয়ে এসেছে তারপর এখনও জুতো চটি পছন্দ হয়নি। এরা এখন যা খুশি করতে পারে। তাই
চুপ থাকাই শ্রেয় বলে মনে করলাম। কিন্তু ফল হলো
উল্টো। এবার দোকানের একজন সেলসম্যান বলল, "দাদার ঘরে কি ভাণ্ডার নেই তাই এত রাগ"। দোকানের মালিক
টিপ্পনি কাটলেন, "খদ্দের হলো লক্ষ্মী কিন্তু এরকম
লক্ষ্মী হলে তো দোকান গেছে।"
হুঁ এতক্ষণ তো তোমার লক্ষ্মীদের নমুনা দেখছি। যতগুলো জুতো ডাঁই করেছে নির্ঘাত আধাঘন্টা ধরে দোকানের মাথা খাচ্ছে কিন্ত আমি শালা পাঁচ মিনিটেই যেন কাশ্মীর সীমান্তে চলে এসেছি। ঢ্যা ঢ্যা করে গুলি চালিয়ে চলেছে তখন থেকে। এবার মরিয়া হয়ে বললাম, "আরে বাবা একটা হাওয়াই চপ্পল কিনতে এসেছিলাম" আমারটা একদম ফুটে গেছে বলে পায়ের দিকে দেখালাম।" কিন্তু তার যে এমন হ্যাপা জানলে থোড়াই আসতাম। ঘাট হয়েছে আমার। আমি চললাম।" এই বলে দোকানের বাইরে পা বাড়াতেই দোকানের মালিক শিবাজি ব্যানার্জির মতো ডাইভ দিয়ে আমাকে আটকালেন। তারপর মুখে একগাল হাসি নিয়ে বললেন, "আরে দাদা সেটা আগে বলবেন তো। দেখুন দেখি কাণ্ড!"
একজন
সেলসম্যান জিজ্ঞেস করল,
"দাদা আপনার সাইজ কত?"
আর সাইজ।
এতক্ষণ তো তোমরা আমাকে সাইজ করেই দিয়েছ। নিজেই ভুলে গেছি। বলে ফেললাম, "ছাপ্পান্ন"।
ছাপ্পান্ন তো ওনার বুকের মাপ আপনার পায়ের সাইজ কত?
বলতে বলতে
একজন সেলসম্যান আমার পা দেখেই বলল, "হুমম আপনার আট নম্বর লাগবে। দাঁড়ান
নিয়ে আসছি।"
এবার সেই মেয়েটি হুংকার ছাড়ল, "নিয়ে আসছি মানে কী? আগে আমাদের মালগুলো দিয়ে যান। আমরা আগে এসেছি।"
এ তো আচ্ছা ঝামেলা হলো। এমন ফাঁসবো জানলে কে আর চটি কিনতে আসত! এই দুজনকে খুশি করা এই দোকানের কম্মো নয়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে নারীদের খুশি করতে পেরেছে এমন পুরুষ দুর্লভ। কেউ স্ত্রীকে খুশি করতে গিয়ে সোনার হরিণ ধরতে গিয়ে কেলো কাণ্ড করে বসল আর কেউ বউকে খুশি করতে একশোটা মার্ডার করে বসল। এদিকে আমাকে দেখো একটা হাওয়াই চটি পেলেই খুশি হই তবু সেটাই কপালে জুটছে না। বাধ্য হয়েই ওদের দুজনের দিকে ভাল ভাবে তাকালাম। দেখলাম তরুণীটির পায়ের কাছে অনেকগুলি হাইহিল পড়ে আছে। ওর মায়ের সামনে বেশ কিছু ফ্ল্যাট চটি পড়ে আছে। দুজনের দুরকম টেস্ট। তা বেশ। হতেই পারে। কিন্তু দেখলাম সেলসম্যানরা সামনের rack থেকে যতরকম ভ্যারাইটি ছিল সব দেখিয়ে দিয়েছে। এবার কী করা? আমি দোকানের মালিকের কাছে গিয়ে ফিশফিশ করে কিছু বললাম। উনি শুনেই চাঙ্গা হয়ে বললেন, "ম্যাডামরা আপনাদের জন্য দুটো স্পেশাল আইটেম আছে। দাম একটু বেশি পড়বে কিন্তু দেখে ভাল লাগবে। ইউরোপিয়ান কালেকশন।" এই বলে দুটো বাক্স নিয়ে নামলেন। বলব কী দুটোই একবারে হিট এন্ড ফিট হয়ে গেল। এতক্ষণ ধরে যে উৎপাত মাতিয়ে দিয়েছিল দোকানটায় এবার যেন শান্তি ফিরে এল। আমি মৃদুস্বরে বললাম, "এবার আমারটা পেতে পারি?"
কী?
হাওয়াই চটি।
কদিন ধরেই হাওয়াই চপ্পলটা খুব ঝামেলায় ফেলছিল কিন্ত অফিস থেকে ফিরে আর দোকান যাওয়ার সময় হচ্ছিল না। অফিসে জুতো পরে যাই কিন্ত ঘরে এবং পাড়ায় হাওয়াই চপ্পল ছাড়া অনেক বাঙালির মতো আমিও অচল। সেদিন একটু আগে ছুটি হয়ে গেল অফিস। তাই বিকেল বিকেল বাজারে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথম যে জুতোর দোকান পেলাম সেখানেই ঢুকে পড়লাম। দোকানে তখন এক মাঝবয়সী মহিলা তার মেয়েকে নিয়ে দোকানে বসে। দুজনেরই পায়ের তলায় দুজন সেলসম্যান কাঁচুমাচু মুখে বসে আছে। অনেকগুলি চটি, জুতো ডাঁই হয়ে পাশেই পড়ে আছে কিন্ত দুজনের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। দোকানদার উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে আছে যেমন করে বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের জয়েন্টের রেজাল্ট দেখে। মেয়েটির জন্য আনা জুতোগুলো মা নাকচ করে দিচ্ছে আর মায়ের জন্য আনা চটিগুলো মেয়ে নাকচ করে দিচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলল এই খেলা। আমি খানিকক্ষণ দেখছিলাম কিন্ত তারপর ভাবলাম খেলা তো হবে কিন্ত আমি কী যেন কেন এসেছিলাম! ও হ্যাঁ, জুতো না চটি না ও মনে পড়েছে হাওয়াই চপ্পল কিনতে। একটু গলা খাঁকরে বললাম, "দাদা, হাওয়াই চটি আছে?"
এতক্ষণ ধরে দুই মহিলাকে জুতো দিয়ে (জুতিয়ে নয়) সন্তুষ্ট করতে না পেরে দুই পরাজিত সেলসম্যান ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার উপর। ওরে ব্যাটারা আমার সঙ্গে না লেগে আমাকে সাপোর্ট করলে পারতিস। বিনা ঝঞ্ঝাটে তোদের কাছ থেকে জিনিস কিনতে পারতাম! কিন্ত কপাল খারাপ পাঁচ চক্রে গোবেচারা খলনায়ক। দোকানদার ভদ্রলোক বললেন, "দেখুন এইসব পলিটিক্যাল কথাবার্তা এখানে বলবেন না প্লিজ। এসব ঝামেলা করার জায়গা এটা নয়।"
এবার আমার মাথার মধ্যে কারেন্ট খেলে গেল। এই খেয়েছে। কী বলেছি আর কী বুঝেছে। একটু গলা খাঁকরে বললাম, "আপনারা যা ভাবছেন তা নয়। আমি তো আর ওই ওনার হাওয়াই চটি খুঁজছি না। আমি অরিজিনাল হাওয়াই চটি চাইছি।"
"মানেটা কী? আপনার সাহস তো কম নয়। আপনি ওনাকে ডুপ্লিকেট বলছেন।"
হুঁ এতক্ষণ তো তোমার লক্ষ্মীদের নমুনা দেখছি। যতগুলো জুতো ডাঁই করেছে নির্ঘাত আধাঘন্টা ধরে দোকানের মাথা খাচ্ছে কিন্ত আমি শালা পাঁচ মিনিটেই যেন কাশ্মীর সীমান্তে চলে এসেছি। ঢ্যা ঢ্যা করে গুলি চালিয়ে চলেছে তখন থেকে। এবার মরিয়া হয়ে বললাম, "আরে বাবা একটা হাওয়াই চপ্পল কিনতে এসেছিলাম" আমারটা একদম ফুটে গেছে বলে পায়ের দিকে দেখালাম।" কিন্তু তার যে এমন হ্যাপা জানলে থোড়াই আসতাম। ঘাট হয়েছে আমার। আমি চললাম।" এই বলে দোকানের বাইরে পা বাড়াতেই দোকানের মালিক শিবাজি ব্যানার্জির মতো ডাইভ দিয়ে আমাকে আটকালেন। তারপর মুখে একগাল হাসি নিয়ে বললেন, "আরে দাদা সেটা আগে বলবেন তো। দেখুন দেখি কাণ্ড!"
ছাপ্পান্ন তো ওনার বুকের মাপ আপনার পায়ের সাইজ কত?
এবার সেই মেয়েটি হুংকার ছাড়ল, "নিয়ে আসছি মানে কী? আগে আমাদের মালগুলো দিয়ে যান। আমরা আগে এসেছি।"
এ তো আচ্ছা ঝামেলা হলো। এমন ফাঁসবো জানলে কে আর চটি কিনতে আসত! এই দুজনকে খুশি করা এই দোকানের কম্মো নয়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে নারীদের খুশি করতে পেরেছে এমন পুরুষ দুর্লভ। কেউ স্ত্রীকে খুশি করতে গিয়ে সোনার হরিণ ধরতে গিয়ে কেলো কাণ্ড করে বসল আর কেউ বউকে খুশি করতে একশোটা মার্ডার করে বসল। এদিকে আমাকে দেখো একটা হাওয়াই চটি পেলেই খুশি হই তবু সেটাই কপালে জুটছে না। বাধ্য হয়েই ওদের দুজনের দিকে ভাল ভাবে তাকালাম। দেখলাম তরুণীটির পায়ের কাছে অনেকগুলি হাইহিল পড়ে আছে। ওর মায়ের সামনে বেশ কিছু ফ্ল্যাট চটি পড়ে আছে। দুজনের দুরকম টেস্ট। তা বেশ। হতেই পারে। কিন্তু দেখলাম সেলসম্যানরা সামনের rack থেকে যতরকম ভ্যারাইটি ছিল সব দেখিয়ে দিয়েছে। এবার কী করা? আমি দোকানের মালিকের কাছে গিয়ে ফিশফিশ করে কিছু বললাম। উনি শুনেই চাঙ্গা হয়ে বললেন, "ম্যাডামরা আপনাদের জন্য দুটো স্পেশাল আইটেম আছে। দাম একটু বেশি পড়বে কিন্তু দেখে ভাল লাগবে। ইউরোপিয়ান কালেকশন।" এই বলে দুটো বাক্স নিয়ে নামলেন। বলব কী দুটোই একবারে হিট এন্ড ফিট হয়ে গেল। এতক্ষণ ধরে যে উৎপাত মাতিয়ে দিয়েছিল দোকানটায় এবার যেন শান্তি ফিরে এল। আমি মৃদুস্বরে বললাম, "এবার আমারটা পেতে পারি?"
হাওয়াই চটি।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment