বাতায়ন/মাসিক/ছোটগল্প/২য়
বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক, ১৪৩১
চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | ছোটগল্প
পারমিতা
চ্যাটার্জি
ভোরের স্বপ্ন
"অজান্তে বহুদিন আগের শেখা ভৈরবীর তান যেন গলায় গুণগুণ করে উঠল— চমক ভাঙল এক কঠিন গলায়, কী ভাবছ সকাল থেকে! আজ হঠাৎ গানে মজলে কেন? বাড়ির সবাই যে চায়ের জন্য বসে আছে। আমি হেসে বললাম ভুল করে গুণগুণ করে ফেলেছি, চা হয়ে গেছে।"
ভোরের আবছা
আলোয় ঘুম ভাঙা চোখে তাকালাম জানলায় দেখলাম পুবের আকাশ একটু একটু
করে লাল হচ্ছে। এখুনি সূর্য উঠবে তারই নিশানা। জানলায় বাইরে ঘাসগুলো তখনও ভিজে আছে, হয়তো বৃষ্টি
এসেছিল কাল রাতে, তাই আজ ভেজা ভেজা মেঘদের সরিয়ে সূর্য উঠতে দেরি হচ্ছে। তাকাতে তাকাতে মনে হল মেঘের মতন আমার স্বপ্নগুলোও
অনেক দিন ভিজে গেছে, পা রাখলাম ঘরের বাইরে আজকের চৌকাঠে।
চতুর্দিক থেকে নানারকম কাজের ভিড় আমায় চেপে ধরল, ছুটে গেলাম রান্নাঘরে চায়ের জল বসাাতে, এখনি সবাই
উঠবে।
ভোরের
রাগিনী তানপুরার গায়ে মূর্ছনা দিয়ে হালকা হেসে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল, আমি হঠাৎ ছুটে গেলাম তানপুরাটার গায়ে হাত বুলোতে, দেখলাম আমার ছিঁড়ে যাওয়ার স্বপ্নের মতন তারগুলোও এক এক করে ছিঁড়ে পড়ে
যাচ্ছে। পাশের বাড়ি থেকে ভেসে আসছে
মিষ্টি ভৈরবী রাগ,
আমার আনমনা মন কল্পনায় চলে গেল বহুদিন আগের এক সকাল বেলায়— মা এসে যেন ডেকে
বলছেন কী রে উঠবি না? দেখ আদা দিয়ে চা করে
দিয়েছি, চা-টা খেয়ে একটু রেওয়াজে বোস। সকালের রাগ ভৈরবী। অজান্তে বহুদিন আগের শেখা ভৈরবীর
তান যেন গলায় গুণগুণ করে উঠল— চমক ভাঙল এক কঠিন গলায়, কী ভাবছ সকাল থেকে! আজ হঠাৎ গানে
মজলে কেন?
বাড়ির সবাই যে চায়ের জন্য বসে আছে। আমি হেসে বললাম ভুল
করে গুণগুণ করে ফেলেছি, চা হয়ে গেছে।
এমনি করে
জীবনের প্রতিদিনের সকালবেলা পা রাখি প্রতিদিনের ঘেরাটোপে আবদ্ধ চৌকাঠে। একদিন
হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে জ্ঞান হারালাম,
কতক্ষণ যে অজ্ঞান ছিলাম জানি না। চোখ খুলে দেখলাম উদ্বিগ্ন
হয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আমার পতিদেবতা, পাশে ডাক্তার। বলে
গেলেন কঠিন অসুখ বাধিয়েছেন, এখন শুধু বিশ্রাম।
বিশ্রাম
শব্দটা ভুলেই গিয়েছিলাম, আজ মনে আহ্ সত্যি
একটা দিন অন্তত আমায় ঘরের চৌকাঠটা পাড় হতে হবে না। একটা দিন আমি আমার তারছেঁড়া তানপুরটায় ভৈরবীর সুর ভাঁজব, আমার সেই মরে যাওয়া কল্পজগতে, এই দিনটায় হয়তো ফিরে আসবে বহুদিন আগের দেখা সেই ভোরের স্বপ্নটা…
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment