বাতায়ন/মাসিক/রম্যরচনা/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক, ১৪৩১
চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | রম্যরচনা
প্রদীপ
কুমার দে
সবকিছু গায়ে মাখবে না
"হঠাৎই বৌদি এক ঝটিকায় হ্যাঁচকাকে টেনে নিয়ে, ওর মাথায় এক রদ্দা দিয়ে দিল।
এভাবে বউ স্বামীকে মারে আগের যুগে হত কিন্তু উল্টো হত। ব্যস হয়ে গেল, চোখ কপালে তুলে গোঁতগোঁত আওয়াজ তুলে ভূপাতিত হল হ্যাঁচকা, আর ততক্ষণে কলকল করে জলে ভেসে গেল তার নিন্মাঙ্গ।"
হ্যাঁচকা
সত্য একেবারে কান্নাকাটি করে একশেষ! আড্ডা ডকে! বন্ধুরা সব্বাই ঝাঁপিয়ে পড়ল,
-কী হল রে সত্যবান? কাঁদিস কেনে?
-নতুন বিয়া
কইরা কী ফ্যসাদেই না পড়লুম রে ভাই?
-সে কী কথা রে?
খুইলা ক' না?
-এ রাস্তায়
খোলন যাবে নি, উদোম
কেলান দিয়াছে রে?
-কী হল রে সত্যবান? কাঁদিস কেনে?
-কী বলতাছিস?
-আর কী কমু,
একবেরে নতুন বউ সাবি উদোম কইরা কেলান দিয়াছে। এ কথা
না আছে কহনের না আছে দেখানের!
হ্যাঁ আমরা
পুর্ব প্রজন্মের বয়স্করা এখন জেনে গেছি, এই প্রজন্মের স্বামী-স্ত্রীরা প্রথমত তুইতোকারি করে কথা সারতেই অভ্যস্থ। দ্বিতীয়ত স্ত্রীরা
স্বামীদের গায়ে হাত তোলে তৃতীয়ত মুখে পাড়ার রকবাজদের মতো
খিস্তি আওড়াতে তারা সিদ্ধহস্ত।
যাহোক এসব ব্যাখ্যার এখন সময় নয়। হ্যাঁচকাকে ঠান্ডা করিয়ে ওর উত্তেজনা কমাতে হবে। ওকে বসিয়ে ঠান্ডা জল দিলাম আমরা মানে ওর পাড়ার আড্ডাবাজ বন্ধুরা। আমরা ওর বন্ধুরা বেশ ভাল। কারোর বিপদ হলে সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ি। যেচে ঝামেলায় জড়াই অবশ্যই তাতে দুঃখ বা আপশোশ নাই। খবর পেলেই দৌড়ে যাই যদি কাউকে বাঁচাতে পারি। নিজেরা মরার ভয় করি না। আমাদের ক্লাবের নাম- ঝুটঝামেলা খেলাদল। আমাদের সদস্যকবি কবিতা লেখে তাই কাব্য করে নাম রেখেছে।
জল চা পিইয়ে বিড়িতে আগুন লাগিয়ে হ্যাঁচকার মুখে ধরলাম। ও খুব সুখের টান দিয়ে শান্ত হল। আমরা ওকে সাহস দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলাম। ও একটু চাঙ্গা হলে আমাদের বিপ্লবী সদস্য অনেক ভাষণ ঝারল। পুলিশের দাগি সদ্য জেলকাটা সদস্য ওকে নিয়ে ওর স্ত্রীর কাছে যেতে চাইল। সবাই একবাক্যে তথাস্তু। আমাদের ক্লাবের উদ্দেশ্য এটাই ঝামেলা হলে লড়ে খেলে যাও।
হ্যাঁচকা রাজি নয়, হেঁচকি তোলে,
-আরো বেশি
করে কেলন দেয় যদি?
-আমরা রইছি
না? খেলাদল? শুনিস নাই
আমাগো ডায়ালগ— খেলা হবে।
-সামাল দিতে
পারবি তোরা?
-হ্যাঁ রে
তোর কোন চিন্তা করনের দরকারই নাই।
বুক ফুলিয়ে আমরা ঝুটঝামেলা খেলাদল পিছনে আর অগ্রে হ্যাঁচকাকে নিয়ে ওর বাড়ির দরজায় হাজির হতেই,
ঠাঁই করে
একটা আধলা ইট সজোরে হ্যাঁচকার কপালের পাশ দিয়ে সোজা বেরিয়ে গেল লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েই। আমাদের অবস্থা বেশ জটিল, অবস্থান কী হবে,
থাকব না পালাব বোঝার আগেই হ্যাঁচকার স্ত্রী সাবির চিৎকার ভেসে এল,
-সবকটারেই ধর, একটা
ঢ্যামনাও যেন পালাতে না পারে, আজ ওদের খিচে নেব...
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি পিছনপানে সদরের বাইরে বেশ ষন্ডামার্কা প্রমীলাবাহিনী দাঁত কেলাচ্ছে।
-ভিতরমে চলিয়ে...
মহা বিপদ। ঝামেলা আসন্ন। খেলাঘর বিপন্ন। কিছু করার নাই। গুটিগুটি পায়ে সামনে এগাই। হ্যাঁচকা সবার মাঝে। পিছনের মহিলারা প্রায় আমাদের ঘাড়ে শ্বাস ফেলছে।
হঠাৎই বৌদি এক ঝটিকায় হ্যাঁচকাকে টেনে নিয়ে, ওর মাথায় এক রদ্দা দিয়ে দিল।
এভাবে বউ স্বামীকে মারে আগের যুগে হত কিন্তু উল্টো হত, তবে কি বদলের যুগ বদলা হয়ে এল।
ব্যস হয়ে গেল, চোখ কপালে তুলে গোঁতগোঁত আওয়াজ তুলে ভূপাতিত হল হ্যাঁচকা, আর ততক্ষণে কলকল করে জলে ভেসে গেল তার নিন্মাঙ্গ। কেলিয়ে পড়ে রইল অচৈতন্য অবস্থায় সে।
খেলাঘরের রাজনৈতিক সদস্য তখনও দাঁত কেলিয়ে,
-বৌদি আমাদের
ভুল বুঝবেন না প্লিজ! আমরা আপনার দলেই।
-তাই নাকি?
-সত্যি তাই
বৌদি।
-তাহলে অত লেকচার দিচ্ছিলেন যে?
-সব কিছু
গায়ে মাখবেন না বৌদি...
-তাহলে?
-এই যে এনেছি
সঙ্গে করে,
বলেই
প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বার করে আনে একটি ব্রান্ডেড কোম্পানির বডি অয়েল।
বৌদি বডি অয়েলের শিশিটি দেখেই লাফ দিয়ে ওঠেন,
-এইতো এটাই
চেয়েছিলাম তাই এত ঝামেলা। মিনসে বলে আনবে না। তা তুমি কী করে জানলে?
-মেট্রো
রেলের গায়ে বিজ্ঞাপন দেখে...
-তুমি কী ভাল। তুমি এটা লাগানোর দায়িত্ব নাও। এসো এসো পাশের ঘরে যাই, তুমিই লাগিয়ে দাও আমার গায়ে। হ্যাঁচকা পড়ে থাক।
আপনারা সবাই বাড়ি ফিরে যান। সব কিছু গায়ে মাখার দরকার নেই।
যাহোক এসব ব্যাখ্যার এখন সময় নয়। হ্যাঁচকাকে ঠান্ডা করিয়ে ওর উত্তেজনা কমাতে হবে। ওকে বসিয়ে ঠান্ডা জল দিলাম আমরা মানে ওর পাড়ার আড্ডাবাজ বন্ধুরা। আমরা ওর বন্ধুরা বেশ ভাল। কারোর বিপদ হলে সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ি। যেচে ঝামেলায় জড়াই অবশ্যই তাতে দুঃখ বা আপশোশ নাই। খবর পেলেই দৌড়ে যাই যদি কাউকে বাঁচাতে পারি। নিজেরা মরার ভয় করি না। আমাদের ক্লাবের নাম- ঝুটঝামেলা খেলাদল। আমাদের সদস্যকবি কবিতা লেখে তাই কাব্য করে নাম রেখেছে।
জল চা পিইয়ে বিড়িতে আগুন লাগিয়ে হ্যাঁচকার মুখে ধরলাম। ও খুব সুখের টান দিয়ে শান্ত হল। আমরা ওকে সাহস দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলাম। ও একটু চাঙ্গা হলে আমাদের বিপ্লবী সদস্য অনেক ভাষণ ঝারল। পুলিশের দাগি সদ্য জেলকাটা সদস্য ওকে নিয়ে ওর স্ত্রীর কাছে যেতে চাইল। সবাই একবাক্যে তথাস্তু। আমাদের ক্লাবের উদ্দেশ্য এটাই ঝামেলা হলে লড়ে খেলে যাও।
হ্যাঁচকা রাজি নয়, হেঁচকি তোলে,
বুক ফুলিয়ে আমরা ঝুটঝামেলা খেলাদল পিছনে আর অগ্রে হ্যাঁচকাকে নিয়ে ওর বাড়ির দরজায় হাজির হতেই,
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি পিছনপানে সদরের বাইরে বেশ ষন্ডামার্কা প্রমীলাবাহিনী দাঁত কেলাচ্ছে।
-ভিতরমে চলিয়ে...
মহা বিপদ। ঝামেলা আসন্ন। খেলাঘর বিপন্ন। কিছু করার নাই। গুটিগুটি পায়ে সামনে এগাই। হ্যাঁচকা সবার মাঝে। পিছনের মহিলারা প্রায় আমাদের ঘাড়ে শ্বাস ফেলছে।
হঠাৎই বৌদি এক ঝটিকায় হ্যাঁচকাকে টেনে নিয়ে, ওর মাথায় এক রদ্দা দিয়ে দিল।
এভাবে বউ স্বামীকে মারে আগের যুগে হত কিন্তু উল্টো হত, তবে কি বদলের যুগ বদলা হয়ে এল।
ব্যস হয়ে গেল, চোখ কপালে তুলে গোঁতগোঁত আওয়াজ তুলে ভূপাতিত হল হ্যাঁচকা, আর ততক্ষণে কলকল করে জলে ভেসে গেল তার নিন্মাঙ্গ। কেলিয়ে পড়ে রইল অচৈতন্য অবস্থায় সে।
খেলাঘরের রাজনৈতিক সদস্য তখনও দাঁত কেলিয়ে,
-তাই নাকি?
-তাহলে অত লেকচার দিচ্ছিলেন যে?
-তাহলে?
বৌদি বডি অয়েলের শিশিটি দেখেই লাফ দিয়ে ওঠেন,
-তুমি কী ভাল। তুমি এটা লাগানোর দায়িত্ব নাও। এসো এসো পাশের ঘরে যাই, তুমিই লাগিয়ে দাও আমার গায়ে। হ্যাঁচকা পড়ে থাক।
আপনারা সবাই বাড়ি ফিরে যান। সব কিছু গায়ে মাখার দরকার নেই।
সমাপ্ত
ধন্যবাদান্তে 🌹🌹🌹
ReplyDelete