বাতায়ন/প্রেমের
Rush-লীলা/ছোটগল্প/২য় বর্ষ/২৫তম সংখ্যা/০৬ই মাঘ, ১৪৩১
প্রেমের
Rush-লীলা | ছোটগল্প
রিয়া
পোদ্দার
মনখাঁচা
"দোলাচল মনের মধ্যে। ছেলেটা যে তার মন চুরি করেছে নিশ্চুপে তা সে নিজেও বুঝতে পারেনি। রাতে ঘরের লাইটটা জ্বালিয়েছিল সে সম্মতিসূচকভাবে। কিন্তু বিধি বাম সেদিন কারেন্ট অফ।"
সেই দিনটা
পূর্ণিমা লক্ষ্মী
পূর্ণিমা, পরের পূর্ণিমা লোকে বলে রাস পূর্ণিমা। সেই দিন নাকি
রাধাকৃষ্ণের যুগল মিলন রাত। চিত্রলেখার অবশ্য অত কিছু ভাবার সময় নেই আজ। সামনে জয়েন্ট উচ্চ মাধ্যমিক দম ফেলার সময় নেই, যদিও
টেষ্টের পর ব্যাচ আর স্কুল ছুটি। দু-তিন দফা রিভিশন হয়ে
গেছে, এখন
ঠিকঠাক মতো পরীক্ষা হলে হলো। কিন্তু আজ একবার
শেষবারের মতো অসীম স্যারের বাড়ি
ফিজিক্স সাজেশন পেপার নিতে যেতে হবে। সন্ধ্যার রাস্তায় আলোর ঢল নেমেছে, সাইকেল
নিয়ে যেতে যেতে রাতের আলো গায়ে মাখছে সে। হঠাৎ সাইকেলের রিং, নীল। স্যারের
বাড়ি যাচ্ছিস তো চল একসাথে যাই। আমি জানতাম তোর সঙ্গে দেখা হবে স্যারের বাড়ি
গেলে, ভেবেছিলাম ফেরার পথে বলব এখন যখন। কী
বলবি রে কিছু সাজেশন। নীল একগাল হেসে সাজেশনই বটে তবে নিজের জীবনের। কী জীবনের সাজেশন! হ্যাঁ কদিন ধরে তোকে বলব ভাবছিলাম কিন্তু পড়াশোনার চাপে বলে ওঠা সম্ভব হয়নি।
-বল।
-পরবর্তী জীবনে আমি কি তোকে পাশে পেতে পারি, সারাজীবন ধরে। ভাবছিস কী ভুলভাল কথা বলছি। মাথা ঠিক আছে কিনা, সব ঠিক আছে। আমি তোকে জোর করব না তবে ভেবে দেখতে বলব কথাটা। তুই যদি রাজি থাকিস তাহলে তোর ঘরে আজ রাতে লাইটটা জ্বেলে রাখিস। তোর ফ্ল্যাটের থেকে আমার বাড়ির আলো দেখা যায় সেটা তুই জানিস। ম্যাডাম মন দিয়ে ফেলেছি যে অনেক কিছু জানতে হয়।
এরপর
স্যারের বাড়ি থেকে এক বুক অনুভূতি নিয়ে বাড়ি ফেরা চিত্রলেখার। দোলাচল মনের মধ্যে। ছেলেটা যে তার মন চুরি করেছে নিশ্চুপে তা সে নিজেও বুঝতে পারেনি। রাতে ঘরের লাইটটা জ্বালিয়েছিল সে সম্মতিসূচকভাবে। কিন্তু বিধি বাম সেদিন কারেন্ট অফ। এরপর কারো সঙ্গে কারো দেখা হয়নি, যে যার মতো
জীবনযাপন করতে পড়াশোনা সূত্রে পাড়ি দিয়েছিল সুদূরে।
মাঝে ২০টা
বছর পার হয়ে গেছে। হঠাৎ চিত্রলেখার নিজের দেশে ফেরা, এখন সে
বিখ্যাত অধ্যাপিকা চিত্রলেখা গুহ। আর নীলাভ বন্দ্যোপাধ্যায় নামক ছেলেটার খবর
নেওয়ার সুযোগ, সময় হয়নি। আজ স্যারের বাড়ি, স্যারের
স্মরণসভায় হাজির হঠাৎ করে দুজনে। বিখ্যাত ডাক্তার আর অধ্যাপক মুখোমুখি এত বছর পর।
কোন এক ফাঁকে দুজনে এক কোণে,
-কেমন আছিস?
-তুই?
-পরিবার কেমন আছে তোর?
-বাবা-মা ভাল আছেন।
-স্ত্রী সন্তান?
-কেউ একজন পূর্ণিমা রাতে নিজের মনের দরজা খুলে দেয়নি বলে সে পথে আর পা বাড়াইনি ম্যাডাম। তোর কী খবর, বর সন্তান?
-একজনকে সেই
পূর্ণিমা রাতে মন দিয়ে ফেলেছিলাম, এক বার মন চুরি হলে ফেরত পাওয়া
সম্ভব কি? না
মন যখন যাকে খুশি দেওয়া যায়?
-কী তুই আমার জন্য…!
-থাক।
-তাহলে সেদিন লাইট জ্বালানো ছিল না কেন তোর ঘরে, আমি সারা রাত অপেক্ষা করেছিলাম।
-সেদিন আমাদের কারেন্টের ফিউজ উড়ে গিয়েছিল কিন্তু সকালের আগে ঠিক করা হয়নি। তুই তো আর কোন খবর নিসনি আমার।
-সত্যি বড় ভুল হয়ে গেছিল সেদিন, আমি ভাবতে পারিনি, ভেবেছিলাম তোর সম্মতি নেই, তাই অহেতুক তোকে বিরক্ত করতে মন চায়নি, নিজের ভালবাসা এক তরফা যত্ন করে তুলে রেখেছিলাম একান্তে।
-এতদিন আমার ভালবাসাকে আমিও যত্ন করে রেখেছিলাম মন দেরাজে। তবে এখন একসাথে পথ চলা কি সম্ভব এতদিন পর এত বয়সে।
-তুই চাইলে সব অসম্ভব সম্ভব। চল দুজনে একসাথে নীড় বাঁধি।
আজ দুজনে
একসাথে জ্যোৎস্না রাতে সেই রাস পূর্ণিমা তিথিতে তবে এই গল্পটা বিরহ থেকে মিলনের, আর কৃষ্ণের রাধারানী মিলন থেকে বিরহ সবটা। তবে আলোক বেলায়
কেউ তো পেলো নিজের জনকে নিজের মনখাঁচায়।
-বল।
-পরবর্তী জীবনে আমি কি তোকে পাশে পেতে পারি, সারাজীবন ধরে। ভাবছিস কী ভুলভাল কথা বলছি। মাথা ঠিক আছে কিনা, সব ঠিক আছে। আমি তোকে জোর করব না তবে ভেবে দেখতে বলব কথাটা। তুই যদি রাজি থাকিস তাহলে তোর ঘরে আজ রাতে লাইটটা জ্বেলে রাখিস। তোর ফ্ল্যাটের থেকে আমার বাড়ির আলো দেখা যায় সেটা তুই জানিস। ম্যাডাম মন দিয়ে ফেলেছি যে অনেক কিছু জানতে হয়।
-স্ত্রী সন্তান?
-কেউ একজন পূর্ণিমা রাতে নিজের মনের দরজা খুলে দেয়নি বলে সে পথে আর পা বাড়াইনি ম্যাডাম। তোর কী খবর, বর সন্তান?
-থাক।
-তাহলে সেদিন লাইট জ্বালানো ছিল না কেন তোর ঘরে, আমি সারা রাত অপেক্ষা করেছিলাম।
-সেদিন আমাদের কারেন্টের ফিউজ উড়ে গিয়েছিল কিন্তু সকালের আগে ঠিক করা হয়নি। তুই তো আর কোন খবর নিসনি আমার।
-সত্যি বড় ভুল হয়ে গেছিল সেদিন, আমি ভাবতে পারিনি, ভেবেছিলাম তোর সম্মতি নেই, তাই অহেতুক তোকে বিরক্ত করতে মন চায়নি, নিজের ভালবাসা এক তরফা যত্ন করে তুলে রেখেছিলাম একান্তে।
-এতদিন আমার ভালবাসাকে আমিও যত্ন করে রেখেছিলাম মন দেরাজে। তবে এখন একসাথে পথ চলা কি সম্ভব এতদিন পর এত বয়সে।
-তুই চাইলে সব অসম্ভব সম্ভব। চল দুজনে একসাথে নীড় বাঁধি।
সমাপ্ত
সুন্দর
ReplyDeleteসুন্দর
ReplyDelete