রম্যরচনা
প্রদীপ কুমার
দে
শিরে সংক্রান্তি
ঝিঙাফুল
সিরিজ— ৫
"রসগোল্লার হাঁড়ি হাতেই আমি এগিয়ে গিয়েই ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ছটফট করে উঠল সে, মুচকি হেসে চেঁচাল, -আরে আমাদের জামাই এসেছে যে... তাড়াতাড়ি আলো আনো... আমার লজ্জায় মাথা হেঁট। ছি! ছি! বাড়িতে ঢুকেই বিপত্তির একশেষ। ও তো ঝিঙা ছিল না, ছিল ওর ছোট বউদি।"
ঝিঙাফুল তার গ্রামের বাড়িতে গেছে মাস খানেক হল। কোন যোগাযোগ নেই। ও আবার ফোন ব্যবহার করে না। ওর দাদার সঙ্গে মাঝেমধ্যে ফোনে কথা হয়। প্রয়োজনীয় বিষয় এভাবেই আদানপ্রদান হয়।
একদিন ওর দাদা পুস্পেন্দু আমার মোবাইলে ফোন করে জানাল,
-আচ্ছা দেখছি…
ওর শুচিবাই পীড়া দিলেও ওর সহজ সরলতা বেশ ভাল লাগে। অনেকদিন হয়ে গেছে ও নেই তাই ওর আসার খবরে ভাল লাগল। সামনের শনিবার যাওয়া যাবে না কাজ আছে। পরের শনিবার যাওয়ার ইচ্ছে রাখলাম। কিছুই জানালাম না কারণ জানিয়ে গেলে ওরা গ্রাম্যজন ভীষণ আয়োজন করে রাখে আর আমি লজ্জায় পড়ি। না জানিয়ে গেলে তার মজাই আলাদা। চমক দেব ঝিঙাকেই।
অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলাম। এক আধুনিক সেলুনে ঢুকে ফ্রেশ হতে সময় লাগল। প্রথমে হাওড়া স্টেশন তারপর ট্রেন। যাচ্ছি তো যাচ্ছি। বর্ধমান। মিষ্টির দোকানে ঢুকে বড় হাঁড়িতে রসগোল্লা কিনে নিলাম, আবার ছোট ট্রেন। নেমেই অন্ধকারে পড়লাম। যাক কপাল ভাল একটা ভ্যানে পাছা ঠেকাবার সুযোগ ঘটে গেল কারণ সেটাই ছিল শেষ ভ্যান আজকের জন্য।
নেমে হাঁটা মেঠোপথ। আধঘণ্টা হেঁটেই পৌঁছে গেলাম বড় আহ্লাদের শ্বশুরবাড়ি। অন্ধকারে দেখে নিলাম গেটে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখে অবাক চোখে ঝিঙাফুল। রসগোল্লার হাঁড়ি হাতেই আমি এগিয়ে গিয়েই ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ছটফট করে উঠল সে, মুচকি হেসে চেঁচাল,
আমার লজ্জায় মাথা হেঁট। ছি! ছি! বাড়িতে ঢুকেই বিপত্তির একশেষ। ও তো ঝিঙা ছিল না, ছিল ওর ছোট বউদি। যা! প্রথমেই পেস্টিজ পাংচার! ঝিঙাফুল জানলেই দুঃখে কাঁদবে নিশ্চিত! ছি! ছি! গ্রামের মেয়েরা কী সব একই দেখতে? না মানে একটা সাধারণ শাড়িতে সবাই যেন একই। লজ্জার মাথা খেয়ে সামনে যাকে পেলাম তার হাতেই রসগোল্লার হাঁড়ি ধরিয়ে দিয়ে মুখ লুকালাম। গ্রাম্য বাড়িতে যেন উৎসব লেগে গেল। হ্যারিকেন, লন্ঠন নিয়ে সবাই হাজির। আশেপাশের বাড়িগুলো থেকে আলোর উঁকিঝুঁকি আসছে, বোঝা গেল উৎসুক চোখ জামাই মানে আমাকেই খুঁজছে।
আদর ভালবাসা খাওয়াদাওয়া বেশ হল। পুস্পেন্দু অনেক রাগে আমাকে কথা শোনাল কেন ওকে আমি আগে জানাইনি, ও স্টেশন থেকে নিয়ে আসত ওর স্কুটিতে। শাশুড়ি থেকে বৌদি শালি সব অভিমান দেখাল, আমি কেন জানাইনি। কাকা-কাকিমা এল ভাল কথা বলল। দেখে ঝিঙাফুলের কথা মনে পড়ল। সব ইচ্ছা পূরণ হয় না করতেও নেই। পুস্পেন্দুর বউ একটা খারাপ ইঙ্গিত করে পাশের ঘরে ঢুকিয়ে দিল। আমি ঢুকেও ঢুকতে পারলাম না, ভীষণ অন্ধকার। কে যে তার নরম হাত দিয়ে টান মারল, ভয়ে ভয়ে সিঁটিয়ে রইলাম, আবার যদি ভুল হয়!
-নিজের বউয়ের শরীর চেনো না? আর অন্যর বউয়ের বুকে ঢলে পড়ো?
-জানিয়ে এসেছ? যে আমি তোমার জন্য উপোসি হয়ে গেটে দাঁড়িয়ে ঢলাবো?
-তারপর?
-এমা! ছি! ছি! কী কাণ্ড করে বসলাম সব?
আমরা শয়নে গেলাম। বাইরে হাসির হুল্লোড় উঠল। ভয়ে আমি ওকে ছেড়ে দিতে গেলাম। ও রেগে চেপে ধরল,
-কেন কাল রবিবার তো আমরা দুজনেই বাড়ি ফিরব?
সমাপ্ত
আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল সম্পাদক মহাশয়ের জন্য। সকল গুনীজনে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
ReplyDeleteখুব সুন্দর মজার গল্প
ReplyDelete