বাতায়ন/প্রেমের
Rush-লীলা/ছোটগল্প/২য় বর্ষ/২৫তম সংখ্যা/০৬ই মাঘ, ১৪৩১
প্রেমের
Rush-লীলা | ছোটগল্প
ইন্দ্রজিৎ
রায়
দাদুর মোল্লা মেয়ে
"মহাশ্বেতা, দাদুর সেই মোল্লা মেয়ে, গলাটা বেশ হাস্কি হয়েছে তো তোর, ছাড়ো ছাড়ো, যত নছল্লা কথা তোমার, এসব তো বোধহয় সব মেয়েদেরই বলো, তাই না? একটু থেমে বলে, দেড়টা, ভুলে যেও না, আর..."
খুব সন্তর্পণে, ভেঙে ভেঙে, আলতো আঙুলে শিঙাড়া খেতো
মহাশ্বেতা, এই
সেই মহাশ্বেতা, দাদুর
মোল্লা মেয়ে। মানে দাদু বলতেন সেই ছোট থেকে এই মোল্লা মেয়ের প্রেমে পোড়ো-না যেন,
ক্যারম, লুডো, দাবা খেলছ
খেলো, নয়তো
শেষে আমার মতো অবস্থা হবে, দেখছ তো? ওইরকম হবে, বলে হাসত। রসরাজ ছিলেন
তিনি, একটা
ঘটনা মনে পড়ল, কী
একটা অনুষ্ঠান
হয়েছে যেন বাড়িতে,
তা দাদুর ইচ্ছে হয়েছে কিছু মানুষকে মাংসভাত খাওয়াবেন দুপুরবেলা। তা
আশেপাশের
কয়েকজন মানুষ আমন্ত্রিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে মহাশ্বেতাও, মামাবাড়ির
টানা বারান্দায়, পেয়ারা, বটের পাতার
চিকারি, দিদা, মামিমা
পরিবেশন করছেন, মাংসের
থেকে মাংসের ঝোলের বড় বড় আলুর আকর্ষণ অনেক বেশি ছিল, ভাগ্নে, দাদা, ভাগ্নিরা
সকলে বলছে, মামিমা
আলু দাও আরেকটা, তখনই
অসাধারণ সেই সংলাপ ডেলিভারি, আমার দাদুর। এই যে বেশি আলু খেইও না, আলুর দোষ
হয়ে যাবে। মামিমা মুখে কাপড় দিয়ে, হাসতে গিয়ে সরে গেলেন অন্যদিকে, দিদা এসবে অভ্যস্ত, নির্বিকার, আমি তখন বুঝিনি, মিষ্ট লোক
ছিলেন আমার মাতামহ শচীন্দ্রনাথ। এখন বেলগাছে থাকেন শুনেছি, আমার
প্রমাতামহ সারদাকান্ত রায়ও ওই গাছেই থাকেন। এই গাছটাই, আমার
ফেসবুকের পরিচয় ছবি,
যাক সেকথা অন্যদিন হবে।
যা বলছিলাম, শিঙাড়া ভেঙে ভেঙে খেতো, এখনও খায় দাদুর প্রিয় সেই মোল্লা
মেয়ে নিশ্চয়ই, দাদু
বলত তুই না এগোলে, আমিই
ভাবছি, মোল্লা
ধর্ম নিয়া এরে বিয়া করবো,
হি হি করে হাসত বাচ্চামেয়েটা, কেন যে মহাশ্বেতা নামটা দাদু দিয়েছিলেন, এটা আমার
আজও... মানে দিতেই পারেন,
হঠাৎ সেটা মহাশ্বেতা কেন এই ব্যাপারটা
জানা নেই, আজও।
একটা ঝাঁঝালো গন্ধ ছিল মহাশ্বেতার, ওর কাছে দাঁড়ালে পেতাম, ভারী গন্ধটা, পরে, যখন আমরা
বেশ ধাড়ি হয়েছি আর-কী,
তখন আরো, স্পষ্ট
হয়েছিল, ওই
অ্যারোমা, যাকে
বলে। ছোটবেলায় ছিল না, মনে আছে, এটা মনে আছে
কারণ আমরা বলতে গেলে একসঙ্গে বড় হয়েছিলাম। স্কুলটা আলাদা ছিল, কিন্তু তখনও
খেলার মাঠ বলে, সেই
বিকেলবেলা একটা ব্যাপার ছিল, মাঠে আসত সবাই, খেলতে, নানান রকম গল্প করতে, গান গাইতে, যেটা বাড়িতে
হবে না আর-কী। তখনও ইন্টারনেট আসেনি। ভাই
মাঠে তো আমার প্রিয় খেলার সাথী ছিল আর খেলতে বেরোলেই, অথবা ঘরে
ক্যারম, বাণিজ্য, প্লাস্টিকের
ব্যাট বল দিয়ে ক্রিকেট খেললেও, দাদু বলতেন ওই কথা। কিন্তু মহাশ্বেতা
যাকে বলে, আমার দাদুরই
ন্যাওটা সেই ছোট থেকে,
সমস্ত জিনিসপত্র কোথায় কী থাকে, দাদুর থেকে
বেশি মহাশ্বেতা জানত। আমার দিদার ওইভাবে শিঙাড়ার খোসা ভেঙে ভেঙে,
ভেতরের আলুগুলো খেতো,
খোসাটা ফেলে দিত,
মহাশ্বেতাও ফেলে দেয়,
কেন আমি জানি না। তবে ছোটবেলায়, রসুলকে রসুন বলত মনে আছে, আমার কাছে
যদিও তখন রসুল আর রসুন এক সমান। বানান করে
লিখত রসুলুল্লাহ, পরবরদিগার
ইত্যাদি। বস্তুত রসুন ব্যপারটাও আমাকে ভাবায়নি যে তা নয়, রসুন চাষিদের কথা ভাবতাম, রাতের অন্ধকারে লরিতে করে পেঁয়াজ রসুন চালান হচ্ছে সারা
দেশে, the garlic
trail কথাটা, কী কাব্যিক যে লাগত, মানুষের জীবিকা হচ্ছে শুভ্র ওইসব
দানাদারে - অনেক
বছর পরে, একবার
দেখা হয়েছিল, কলেজ
শেষ তখন প্রায়, সেই
শেষ দেখা, সেই
দেখা হবার পর জিজ্ঞেস করেছিলাম, এখনও কি, রসুলকে রসুন বলিস! নাকটা ঘুরিয়ে বলেছিল যে না না, বলি না। এই
নাক ঘোরানো মূদ্রাটি আমাদের এক দিদার থেকে পাওয়া, তিনি মহাশ্বেতাকে জানি ছোট্টবেলায়
চিনতেন, ও
তো আসতোই সারাদিন, ওই
নোটন নোটন পায়রাগুলি বলতেন, এমনই নাক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে। এখন ডিল্যুশন আমরা সবাই ভালবাসি, আমি তো
বাসিই সারাদিন, নিজেকে
রাষ্ট্রনেতা শিল্পী,
কবি, দল ছুট
এসব ভাবি, ভাবতেই
থাকি, তাদের
নানান সংলাপ বলি এবং এই সুবিচিত্র অনুষ্ঠানে বেশ রস আছে অন্তত আমার মতো অনেকেরই কারো ক্ষতি না করে সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। প্রবাসী রিলেশনের
দীর্ঘ তালিকায় মহাশ্বেতা, কোথাও একটা ছিল, এবং মহাশ্বেতাকে চুম্বন করার একটি
বিরাট কী বলব মানে উচ্চ আশা তখন আমি পোষণ করতাম। অবশ্য কেন করতাম, এর কোনো
উত্তর আজ আমার কাছে নেই,
অথবা আজকে বা দশ বছর আগে এটা আমি আবার করতাম কিনা সেটা সন্দেহের বিষয় তো সেই
রিলেশনে মহাশ্বেতা রসুন মানে, মানে রসুল, মানে ছোটবেলায় উচ্চারণ করতে পারত না
ইত্যাদি। ওদের তো
ধর্ম, ধর্মের
নানান দিক নিয়ে খুব আলোচনা হয়, তা আমাদের সেই প্রথম, অপটু চুম্বনের
পর, আমাকে
প্রশ্ন করেছিল, রসুন
খেয়েছ নিশ্চয়ই, না? বলেছিলাম হয়তো, মনে নেই।
মহাশ্বেতা বলে যে সেটা বলি না, মানে রসুন আর রসুল তবে ভাল মনে করিয়েছিস, এমনটা বলত।
আজ অনেকগুলো
বছর, সত্যি
বলতে কী প্রায় আঠাশ বছর পর, হঠাৎ মেসেঞ্জারে একটা টুং, কলকাতায়
নামব রাত দেড়টা, দেখা
হবে? মানে
করবে কি, দেখা? নম্বর পেলি
কোথায়? আম
খাও-না, কার জমি, কে সার দেয়, তা জেনে... এটা মহাশ্বেতার কথা না, আমার দাদু
বলতেন। বুঝলাম, সোমনাথ, অভীক অথবা
বিশ্বজিত সিংমুড়া, যে
কেউই আমার নম্বরটা দিয়ে থাকতে পারে। বেশ, যাবো, এয়ারপোর্টের সঙ্গে আমার যোগাযোগ তো
কম, ঠিক
আছে, পৌঁছে
যাবো। থাকবি কোথায়? আবার
সেই হাসি, কেন
তোমার বাড়ি গেলে কি ঝামেলা হবে? আমার
উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলে, চিন্তা কোরো না, গেস্ট হাউস দিয়েছে আমার কোম্পানি, এখন দেখতে হবে, কেমন, নয়তো
বেলেঘাটায় পিসির বাড়িটা এখনও জিন্দাবাদ। বলো, অনর্গল কথা বলে থামে মহাশ্বেতা, দাদুর সেই
মোল্লা মেয়ে, গলাটা
বেশ হাস্কি হয়েছে তো তোর,
ছাড়ো ছাড়ো, যত
নছল্লা কথা
তোমার, এসব
তো বোধহয় সব মেয়েদেরই বলো,
তাই না? একটু
থেমে বলে, দেড়টা, ভুলে যেও না, আর...
-আর? আমি জিজ্ঞেস করি, না, মানে
-যদি চুমু খাবার কোনো সম্ভাবনা থাকে সেদিন, তাহলে রসুনটা খেও-না, সেই যে রসুন আর রসুল, অট্টহাসিতে বাতাস নাড়িয়ে হাসে মহাশ্বেতা। আমার হরর ছবি মনে পড়ে হঠাৎ, করাল হাসি শব্দটাও মনে পড়ে, সাধুসঙ্গ, গজর খেপা, চোখটা চেপে বন্ধ করি, মহাশ্বেতা, সেই বয়ঃসন্ধির মহাশ্বেতাকে মনে করার চেষ্টা করি, ওর শরীরের সেই ঝাঁঝালো গন্ধ, যা কাছে দাঁড়ালে পেতাম। মাথাটা টাল খায় হঠাৎ, মনে পড়ে, দুধ দিয়ে কফি খেয়েছিলাম, নির্ঘাত অ্যসাডিটি হয়েছে। এটা যথারীতি অনেক পরে বুঝেছিলাম, যে মহাশ্বেতার হাসিটা হরর ছিল বেশি, এই ধরনের বেশির ভাগ প্রস্তাবও হাসিই হয়তো হরর, আতঙ্ক, আমি কাম ভেবে ভুল করি। ও হ্যাঁ, এয়ারপোর্টের ট্যাক্সিতে ওঠার আগে, একমুঠো মাউথ ফ্রেশনার কিনে পকেটে ঢোকাই, কে জানে, কী যে হবে, বলা তো যায় না। ভিআইপি রোড দিয়ে, গাড়িটা ছুটতে থাকে অন্ধকারে, দাদুকে, এত বেশি মনে পড়ে, চোখটা বন্ধ করি চেপে, তাও বুঝতে পারি, কাল যেন আলোর সম্ভার ঘষে দিচ্ছে, ভেজা চোখের ওপর দিয়েই, অবিরত, সশব্দে।
-আর? আমি জিজ্ঞেস করি, না, মানে
-যদি চুমু খাবার কোনো সম্ভাবনা থাকে সেদিন, তাহলে রসুনটা খেও-না, সেই যে রসুন আর রসুল, অট্টহাসিতে বাতাস নাড়িয়ে হাসে মহাশ্বেতা। আমার হরর ছবি মনে পড়ে হঠাৎ, করাল হাসি শব্দটাও মনে পড়ে, সাধুসঙ্গ, গজর খেপা, চোখটা চেপে বন্ধ করি, মহাশ্বেতা, সেই বয়ঃসন্ধির মহাশ্বেতাকে মনে করার চেষ্টা করি, ওর শরীরের সেই ঝাঁঝালো গন্ধ, যা কাছে দাঁড়ালে পেতাম। মাথাটা টাল খায় হঠাৎ, মনে পড়ে, দুধ দিয়ে কফি খেয়েছিলাম, নির্ঘাত অ্যসাডিটি হয়েছে। এটা যথারীতি অনেক পরে বুঝেছিলাম, যে মহাশ্বেতার হাসিটা হরর ছিল বেশি, এই ধরনের বেশির ভাগ প্রস্তাবও হাসিই হয়তো হরর, আতঙ্ক, আমি কাম ভেবে ভুল করি। ও হ্যাঁ, এয়ারপোর্টের ট্যাক্সিতে ওঠার আগে, একমুঠো মাউথ ফ্রেশনার কিনে পকেটে ঢোকাই, কে জানে, কী যে হবে, বলা তো যায় না। ভিআইপি রোড দিয়ে, গাড়িটা ছুটতে থাকে অন্ধকারে, দাদুকে, এত বেশি মনে পড়ে, চোখটা বন্ধ করি চেপে, তাও বুঝতে পারি, কাল যেন আলোর সম্ভার ঘষে দিচ্ছে, ভেজা চোখের ওপর দিয়েই, অবিরত, সশব্দে।
সমাপ্ত
প্রথমত বলি বাতায়ন ই- ম্যাগ একটি অত্যন্ত সুন্দর ই-কাগজ।যারাই এখানে লেখেন তাদের সর্বোত্তম লেখাটিই দেন বলে আমার মনে হয়। ইন্দ্রজিৎ আপনার লেখাটি অন্তত দু-বার পড়লে সম্পূর্ণ আস্বাদ পাওয়া যাবে। খুবই উচ্চতা বহন করছে লেখাটি। লেখাটি অসাধারণ হয়েছে। আন্তরিক শুভেচ্ছা রইলো।
ReplyDeleteধন্য হলাম
ReplyDeleteBesh shundor.
ReplyDeleteআহা, রসুন-রসুল আর হরর-কামের খেয়োখেয়িতেই মিলনের প্রতীক আরও সপ্রতিভ হয়ে গেলো। নাজুক, নাজুক।
ReplyDeleteধন্যবাদ
Deleteসৌরিন্দ্র বলছেন" যেমন লাগার কথা, তেমনই লাগলো। 🙏🏼
ReplyDeleteবরং তোমার অন্যান্য লেখার চেয়ে অনেক বেশ নরম আর স্পর্শকাতর মনে হলো, সদ্যাবিষ্কৃত যৌবনের গন্ধ ভালোই পেলাম।
Comment করে দিলাম তো বটে, কিন্তু মোল্লা মেয়েকে নিয়ে বেশ কয়েকটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা বাকি রইলো। "