প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

প্রথম ভালবাসা | অমল চ্যাটার্জী

বাতায়ন/ মাসিক / ছোটগল্প /২য় বর্ষ/২ ৮ তম সংখ্যা/ ২রা ফাল্গুন,   ১৪৩১ অমরেন্দ্র চক্রবর্তী সংখ্যা | ছোটগল্প অমল চ্যাটার্জী   প্রথম ভালবাসা ...

Wednesday, January 22, 2025

শেষ থেকে শুরু [পর্ব – ১১] | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/প্রেমের Rush-লীলা/ধারাবাহিক উপন্যাস/২য় বর্ষ/২তম সংখ্যা/০৬ই মাঘ, ১৪৩১

প্রেমের Rush-লীলা | ধারাবাহিক উপন্যাস

পারমিতা চ্যাটার্জি

শেষ থেকে শুরু

[পর্ব – ১১]

"মনকলিবহুদিনের কথা আর মনেও নেইমনে রাখার চেষ্টাও করি না। আমার সামনে এখন নতুন জীবনের হাতছানি তাই নিয়েই আমি ব্যস্ত। কবে কখন কে আমাকে কী বলেছিল তা আর আমার ভাববার সময় নেই। নদী দিয়ে জল অনেক বয়ে গেছে।"


পূর্বানুবৃত্তি হঠাৎ সুচরিতা চমকে গেল রাহুলকে  ঠিক ওর পেছনেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। রাহুল ওর দুকাঁধ ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে থুতনিটা হাত দিয়ে তুলে ধরে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি এখনই গোপাল চাও? এমন সময় বউয়াদা বউয়াদা বলে ডাকতে ডাকতে ভেতরে চলে এল, বউয়া ওকে একেবারে ঘরে চলে আসতে দেখে চমকে গেল! তারপর…
 
তবে বসো একটু চা বিস্কুট খেয়ে যাও, সুচরিতা লাফিয়ে উঠে বলল, মনকলি আমার হাতের খিচুড়ি খেতে ভালবাসে, আমার রান্না তো হয়ে গেছেমনকলি বলল, হ্যাঁ তা খেতে পারি আমি তো খিচুড়ি খেতে খুব ভালবাসি। সুচরিতা মনকলিকে জড়িয়ে ধরে বলল, আয় আগে একটু চা খাই মনটা চা চা করছে। এমন সময় লাখিয়া এসে উপস্থিত হল দুনিয়ায় বাজার চাল ডাল মশলাপাতি সব নিয়ে। গুছিয়ে রাখবে বলে রান্নাঘরে ঢুকেই খিচুড়ির সুঘ্রাণে লাখিয়া বলে উঠল, কী সোন্দর বাস ছাড়িছে গো। মোর মায়ের হাতের রান্নাটা অছি তো তাই এতো বাস। মুই শিখে লিব। তুমরা ঘরে গিয়ে বস অহন মুই চা করি আনতেছি।
 
মনকলিকে নিয়ে সুচরিতা সামনের একটু বসার জায়গা আছে, সেই জায়গাটা রাহুল বেতের সোফা-সেট সেন্টার-টেবিল, একটা বুক-শেল্ফ, একটা শো-কেসে পুরুলিয়ার কিছু শিল্পীর হাতের কাজ দিয়ে সাজানো তারপর দেওয়ালের একটা বাঁক দিয়ে আড়াল করার মতন জায়গা সেখানে খাবার টেবিল চেয়ার পাতা তাও বেতের। ছোট কর্ণার সেট সেখানে টমেটো সস, আচার কয়েকরকম ইত্যাদি রাখা আর জলের বোতল। সাথে লাগোয়া রান্নার জায়গা। রাহুলের কিছু কাজ আছে সে সুচিকে বলল, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি আসতে একটু দেরি হবে।
মনকলি তখন বলল, বউয়াদা আমি তোমার কাছেই এসেছিলাম একটু দরকারী কথা ছিল, সুচরিতা স্বপ্রশ্ন চোখে রাহুলের দিকে তাকাল, রাহুল বলল, এখন আর আমার সাথে তোমার কী কথা?
-কার সাথে কখন কী দরকার হয় তা কি বলা যায়?
রাহুল বসে পরে বলল, তোমার দরকারি কথা শুনেই যাইমনকলি তখন আসতে আসতে  বলল, বউয়াদা সেদিন তোমাকে যে নিষ্ঠুর অপমান করেছিলাম সে অপরাধ মাপ কর আর
-আর?
-আগে বলো, আমাকে ক্ষমা করেছ কি না?
-দেখ মনকলি, বহুদিনের কথা আর মনেও নেই, মনে রাখার চেষ্টাও করি না। আমার সামনে এখন নতুন জীবনের হাতছানি তাই নিয়েই আমি ব্যস্ত। কবে কখন কে আমাকে কী বলেছিল তা আর আমার ভাববার সময় নেই। নদী দিয়ে জল অনেক বয়ে গেছে। আমিও বিদেশের ইউনিভার্সিটিতে ডিগ্রি নিয়ে দীর্ঘদিন পড়িয়েছিলাম। কিন্তু থাকতে পারলাম কই? ফিরে এলাম শান্তিনিকেতনে রাঙামাটির টানে জয়েন করলাম বিশ্বভারতীতে। এসে যেন বাঁচলাম। আমি মাটির ছেলে মাটিই আমার। বিশ্বভারতীতে পড়ানোকালীন সুচি এসে জয়েন করল। খুব খুশি হলাম ওকে দেখে, ছোট থেকে বড় হয়েছি তোদের সাথে।
-আরে, তুমি তো নিজের মনে কথা বলেই যাচ্ছ, ওর কথাটা শোন
-কী কথা? ও বলল তো
-না বউয়াদা আরও কিছু কথা বলার ছিল তোমাকে
-আরও কথা! কী কথা বল শুনি
সুচরিতা ভয় ভয় গিয়ে রাহুলের পাশে বসল, রাহুল ওকে কাছে টেনে নিল, বুঝতে পারল, সুচি একটা অমূলক ভয় পাচ্ছে
মনকলি তখন বলল, কী ভাবে আরম্ভ করব?
-আরে, যা বলবার তাড়াতাড়ি বল, আমাকে বেরোতে হবে, অনেকগুলো কাজ আছে
-হ্যাঁ বউয়াদা তাড়াতাড়ি বলছি। আমি এখানে ছ মাসের জন্য এসেছি, ছ মাস পর মুম্বাই চলে যাব।
-কেন মুম্বাইতে কোন নতুন অফার আছে না কি?
-না না সে সব কিছু না। আমাকে টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে ভর্তি হতে হবে
-কেন? লাফিয়ে উঠল সুচরিতা, কী হয়েছে তোর?
-কী হয়েছে দেখবি? মাথায় হাত দিয়ে চুলটা হাতে নিয়ে এল এটা ফলস চুল রে, কেমো নিতে নিতে সব চুল পড়ে গেছে। মনকলি হু হু করে আকুল কান্নায় ভেঙে পড়ল।
সুচরিতাও ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। রাহুলের পুরুষ চোখও শুকনো থাকল না, সে উঠে দাঁড়িয়ে সুচরিতাকে কাছে টেনে নিয়ে মনকলিকে বলল, চুলটা পড়ে নাও। তোমার এ চেহারা আমরা সহ্য করতে পারছি না, তুমি কি একলা বম্বে যাচ্ছ না কি?
জীবনের পথ যতটুকু বাকি আছে সেটুকু একলাই হাঁটব ঠিক করে নিয়েছি, বলে তার সুমধুর কণ্ঠস্বরে গেয়ে উঠল, 'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে'
রাহুল বলল, আমাদের কাছে এসেই যখন পড়েছ তখন একলা তোমায় ছেড়ে দেব, অতটাও স্বার্থসর্বস্ব মানুষ আমি নই
-তুমি সত্যি যাবে বউয়াদা?
-হ্যাঁ কী করে তোমাকে এই শরীরে একলা ছেড়ে দেব?
-কিন্তু তোমাদের নতুন বিয়ে, সুচিকে ছেড়ে চলে যাবে?
-সুচিকে ছেড়ে যাব কেন, ওকে সাথে নিয়েই যাব।
-না আমি যাব না
সুচরিতার দৃঢ কণ্ঠস্বরে চমকে উঠল রাহুল! অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
-কেন?
-এটা তো কোন বেড়ানোর জায়গা নয় যে দলবেঁধে যেতে হবে, তুমি যাবে তো ওকে পৌঁছে দিতে, আমি আমার কথা বলেছি
রাহুল এগিয়ে এসে সুচরিতার মুখটা দুহাত দিয়ে তুলে ধরল, দেখল তার কালো কাজল চোখ দুখানি জলে টলটল করছে, বুঝল সুচরিতার তাকে হারাবার ভয় প্রবল, সেই শৈশব থেকে যাকে ভালবেসে এসেছে সে এতদিনে তার কাছে এসেছে, সামনে তাদের বিয়ে এসময় মনকলিকে নিয়ে  বউয়াদা বাইরে যাচ্ছে আবার যদি মন পাল্টে যায়! যেতেই তো পারে মানুষের মনের কথা কি বলা যায়? সেই ছোট্টবেলা থেকে বউয়াদাকে সে যেমন ভালবেসে এসেছে বউয়াদাও তো তেমনি মনকলিকে বুকের মধ্যে রেখে দিয়ে এতটা কাল সন্নাসীর জীবন কাটিয়েছে সেই মনকলি এখন নিজে থেকে এসেছে।
-খুব কী প্রয়োজন ছিল এখন এই কথাটা বলা?
বউয়ারও মনে হল এখন এই কথাটা না বলে বিয়েটা হয়ে গেলে বলতে পারত। যাই বিয়ের আনন্দে একটু তো ভাটা পড়ল তাতে কোন সন্দেহ নেই। যদিও রাহুল সম্পূর্ণ মানবিকতার খাতিরে বলছে,
-এখানে মনকলির জায়গায় অন্য কেউ থাকলে সে একই কাজ করত
সুচরিতার মতন উদার মনের মেয়েরও তাকে হারাবার কত ভয়!  আসলে সুচরিতা নিজের সবটুকু দিয়ে তাকে ভালবাসে আর মনকলির ভালবাসা নেই। সে তার ক্ষমা চাইতে এসেছিল। এই অবধি বলে ঠিক থাকলে হত তারপর না হয় নিজের অসুখের কথাটা বিয়েটা হয়ে গেলেই বললে পারত; এখনও তো বলতে পারত যে না বউয়াদা তোমাকে যেতে হবে না।
 
রাহুল সুচরিতাকে নিয়ে ভেতরের ঘরে গিয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, এই!
-এই যে বোকা মেয়ে মুখ তোল, মুখ তোল বলছি,
সুচরিতা তার স্নিগ্ধ সুন্দর মুখটা তুলে ধরল, তার বড় বড় চোখ দুটো মেলে চেয়ে রইল। রাহুল বলল,
-পৃথিবীতে আর এমন কোন শক্তি নেই যে তোমার কাছ থেকে আমাকে সরিয়ে নিতে পারবে। আমি মানুষ চিনতে একবার ভুল করেছি তা বলে কি বার বার করব?
-তুমি না চাইলে আমি কোথাও যাব না। ওকে বলব যে ও যেন ওর দাদাকে ডেকে নেয়।
 
 
ক্রমশ
 
 

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)