বাতায়ন/দহন/রম্যরচনা/৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
দহন | রম্যরচনা
পম্পা ঘোষ
জব্দ
"মা ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। বাবা কি সত্যিই বিয়ে করতে গেছেন! ঘটনা তো আসলে সত্যি। বাবা তো সত্যিই বিয়ে করতে গেছে। মা'র কপাল তো আসলেই পুড়ছে, শেষমেষ মাকে কি ডিভোর্স দেবে!"
মা কাঁদো কাঁদো হয়ে আমার ঘরে এসে, জোরে জোরে কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন। আমি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। মা'কে এইভাবে আগে কাঁদতে দেখিনি কখনো। বরং মায়ের রাগারাগিতে বাবাকে গোমড়ামুখ করে বসে থাকতে দেখেছি। মায়ের রাগারাগির জন্য বেচারা সহজসরল বাবার জীবন ঝালাফালা। মাও ভীষণ ভালো মনের। বাবাকে খুব
ভালোবাসেন বলেই, খুব যত্নও করেন। বাবার এটা অপছন্দ,
খুব
বাড়াবাড়ি মনে করেন। বাবাও মাকে ভীষণ ভালোবাসেন। ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে দুজনের
মধ্যে সারাদিন লেগেই থাকে। কখনো হয়তো বাবা বললেন অন্ধকারে কেন কাজ করো। মা বললেন,
-তোমার
প্রয়োজন হয় আলো জ্বালাও।
ব্যস দুজনের মধ্যে ঝামেলা
লেগে গেল।
আমি সাধারণ ভাবে বললাম,
-কী হয়েছে
কান্নাকাটি করছ কেন?
মা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
-সব শেষ আমার।
-সব শেষ মানে? কী হলো!
মা বলল,
-তোর বাবার কথা শুনেছিস?
আমি বললাম,
-কেন, বাবা কি তোমায়
ডিভোর্স দেবে বলছে নাকি?
মা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
-সকালে একটু উল্টাপাল্টা বলেছি, আর সে রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গেছে। যাবার সময় বলে গেছে, বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে আসবে। এখন যদি সত্যি সত্যি বিয়ে করে
নিয়ে আসে, তাহলে আমার কী হবে।
আমি হেসে বলে উঠি,
-বাবার তো বেশ
উন্নতি হয়েছে। এত সাহস পেলেন কোথা থেকে বাবা? তুমি যা সারাদিন করো বাবা ঠিকই করছেন। যাক আমারও খুব ভালো
হবে। নতুন মায়ের কাছে আদর খাব। বাবা বিয়ে করলে তো তোমারই বেশি লাভ। তুমি সবসময়
বলো, একা একা এই সংসারের কাজ করতে
করতে তোমার জীবন শেষ। এখন থেকে দুজনে মিলে কাজ করবে, সুখে থাকবে। কষ্ট কমে যাবে।
মা রেগে গিয়ে বলল,
-ফাজিল। আমার
ছেলে হয়ে, আমাকে সতীনের ঘর করতে
বলে। বাপের মতো বজ্জাত হয়েছে।
মা হনহন করে ঘর থেকে বের
হচ্ছিল। আমি পেছন থেকে মাকে ডাক দিয়ে বললাম,
-আচ্ছা মা, বাবা যদি সত্যি সত্যি বিয়ে করেন তাহলে, তাঁকে কী ছোট-মা বলব, নাকি নতুন-মা বলব?
মা ভীষণ রেগে বললেন,
-এই বাড়িতে
আগুন ধরিয়ে দেবো, তবুও সতীনের সংসার
করব না।
আমি আস্তে করে বললাম,
-বাড়িতে আগুন না ধরিয়ে আত্মীয়স্বজন আসবে, তাদের খাবারের ব্যবস্থা করো।
মা ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। বাবা কি
সত্যিই বিয়ে করতে গেছেন! ঘটনা তো আসলে সত্যি। বাবা তো সত্যিই
বিয়ে করতে গেছে। মা'র কপাল তো আসলেই
পুড়ছে, শেষমেষ মাকে কি ডিভোর্স দেবে!
আমার কয়েক বন্ধুদের আসতে
বললাম, বাসরঘর সাজানোর জন্য। শত হলেও
বাবার বিয়ে। এমন ভাগ্য ক’জনের হয়, বাবার বিয়ের বাসরঘর
সাজানোর। বন্ধুরা মিলে, বাসরঘর সাজাচ্ছি। মা উঁকি দিয়ে
দেখছিলেন। মাকে ভেতরে আসতে বললাম। মা বলে উঠলেন,
-তোর জন্য আমি
কত কী করলাম?
তোর
জন্যই তো কত ঝগড়া। তুই ঠিক করে পড়াশুনা করলে, দুজনের কথা শুনলে। কত সুন্দর সংসার হতো আমাদের। তুই তো যত নষ্টের মূল। যাদের
জন্য জীবনের সবকিছু দিয়ে দিলাম উজাড় করে। তারা এখন আমাকে পছন্দ করে না।
মা ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।
বারবার বাবাকে মা ফোন করতে লাগলেন, বাবা ফোন তুললেন না।
সুইচ অফ করে রেখেছেন।
গেটের সামনে ট্যাক্সির হর্নে দৌড়ে
গেলাম। গিয়ে দেখি, বাবা ফুল সাজানো
ট্যাক্সিতে বসা আর পাশেই ঘোমটা দিয়ে বসে আছে নতুন মা। বাবা জোর গলায় বললেন, মাকে ডেকে দিতে। আমি বাড়ির ভেতর গিয়ে বললাম,
-মা, বাবা আসছে নতুন-মা নিয়ে।
বাইরে চলো, ছোট-মাকে বরণ
করবে।
মা হন্তদন্ত হয়ে গেটের সামনে
গিয়েই, বাবার পাশে নতুন-মাকে
ট্যাক্সিতে বসা দেখেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। সবাই মিলে ধরাধরি করে মায়ের মাথায় জল
ঢালতে লাগলাম। মা চোখ খুলে বাবাকে বলল,
-তুমি সত্যিই বিয়ে করেছ?
বাবা মুচকি হেসে বলল,
-এরপর এমন করলে সত্যিই করব। আপাতত ছেলের বিয়ে দিলাম। আমাদের
বাবুজি ছেলে, পার্বতী নামের এক মেয়েকে
ভালোবাসে। মেয়েটির বাবা-মা অন্যত্র বিয়ে ঠিক করেছিল। ওকে বিয়ের পিঁড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসেছি তোমার ছেলের জন্য। যাও গিয়ে বরণ করো।
হায় হায় এটা কী হলো! আমি
উঠে ঘোমটা সরাতেই, পার্বতী হেসে উঠল
নিজের হাতে সাজানো বাসরঘরে, নিজের বাসর। হা হা হা…
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment