
বাতায়ন/দহন/যুগলবন্দি/৩য়
বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
দহন | যুগলবন্দি | অজয় দেবনাথ ও সুচরিতা চক্রবর্তী
অজয় দেবনাথ
পর্ণাকে চিরসখা
"ব্রতপালনের মতো শুধুই জীবনধারণ। বেশ আধুনিক জীবন বটে! যাবে না খবর, শুধু অসুস্থতা নয় মৃত্যুর খবরও যাবে না। যোগাযোগ না রাখলেই ল্যাঠা চুকে যায়।"
"কলেজ ইউনিয়নের তোমার পাশাপাশি কী যেন নাম মেয়েটার পাপিয়া না পাপড়ি সে যখন তোমার পাশাপাশি মিছিলে হাঁটত তোমাকে জল, খাবার এগিয়ে দিত, সবসময় বিজিতদা বিজিতদা বিজিতদা।"
পর্ণা,
তোমার দেরি দেখে ভেবেছিলাম এটাই বুঝি জীবন, এই-ই বুঝি
মানুষের ধর্ম! বুঝি-বা এবার সত্যি-সত্যিই মুক্তি নিলে! আমার মতো ক্যাবলা ভ্যাগাবন্ডকে
এ জগতে কার আর প্রয়োজন বলো? নইলে কে আর এভাবে জীবন কাটায়!
যাইহোক, তুমি শেষপর্যন্ত চিঠি লেখো বটে তবে ইদানীং তোমার
লেখাতেও যেন দায়সারাভাব প্রকাশ পাচ্ছে। আগের সেই আবেগ আর নেই, শুধু আছে অলিখিত নিয়মরক্ষা।
মেয়েদের ব্রতপালনও বলতে পারো।
হুঁ! নইলে সেইসময় আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে কি সত্যিই
পারতে না? বিশেষত তোমার মতো একজন শিক্ষিতা ভদ্রমহিলার পক্ষে। অবশ্য অপেক্ষা করলে রাজরানি
হওয়া, রাজ-ঐশ্বর্যের অধিকার হারাতে। তার থেকে বিজীতের হারিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
সেভাবে ভেবে দেখলে সত্যিই আমি হারিয়ে গেছি পর্ণা। এভাবে
বেঁচে থাকার নাম জীবন নাকি! ওই ব্রতপালনের মতো শুধুই জীবনধারণ। বেশ আধুনিক জীবন বটে!
যাবে না খবর, শুধু অসুস্থতা নয় মৃত্যুর খবরও যাবে না। যোগাযোগ না রাখলেই ল্যাঠা চুকে
যায়।
যাকগে তুমি ভালো থেকো, পরম সুখে থেকো।
বিজীত
যুগলবন্দি | সুচরিতা চক্রবর্তী ও অজয় দেবনাথ
সুচরিতা
চক্রবর্তী
চির সখা
কেমন আছো এ কথা বোধহয় আমার
জানতে চাওয়া শোভা পায় না। ঠিক বাইরে যেমন বৈশাখের আগুনপানা রূপ তোমার চিঠিরও তাই।
যেন শ্যেনদৃষ্টি দিয়ে দেখে বোঝার চেষ্টা করছে আমি কতটা ভালো আর সুখে আছি। দিন দিন
তুমি আরো বেশি করে ভালোবাসছ আমাকে আর তাই নিজেকে যত পাচ্ছ উলটো-পালটা বিশেষণে
ভূষিত করছ বিজিত। যে কথাগুলো লিখছ সে ধরনের উক্তি আমি কি কোনোদিন করেছি? আমাদের অতীতের কথা ভেবে আমি তো নিজের দিকেই তীর তাক করে
রেখেছি। আসলে সময় বুঝলে বিজিত সব সময়ের খেলা আর ভবিতব্য। না হলে আমি তো সত্যিই
পারতাম আর কিছু অপেক্ষা করতে। ভেবেছিলাম তুমি গুরুত্ব দাও না আমাকে আর তাই
সর্বক্ষণ মিটিং মিছিলে ব্যস্ত। কলেজ ইউনিয়নের তোমার পাশাপাশি কী যেন নাম
মেয়েটার পাপিয়া না পাপড়ি সে যখন তোমার পাশাপাশি মিছিলে হাঁটত তোমাকে জল, খাবার এগিয়ে দিত,
সবসময়
বিজিতদা বিজিতদা বিজিতদা। আর তুমি তাকে পাশে রেখে এগোচ্ছ তোমার লক্ষ্যে। মাস্টার্সের থার্ড ইয়ারে এই নিয়ে একবার তোমার সাথে ঝামেলাও হলো আমার। মনে পড়ে? বিশ্বাস করো সেই ছেলেমানুষি মন আমার হিংসে রাগে টগবগ করে ফুটত
অথচ আমি ভাবতেই পারিনি তোমার মনে কেবলমাত্র আমি ছিলাম আমি পর্ণা। এসব ভাবলে মনে হয়
কী করলাম আমি। কেন এমন হলো… যে
মানুষটাকে এত ভালোবেসেছি তাকে ছেড়ে কিনা আরেকটা মানুষের ঘরনি! আচ্ছা বিজিত আজ একটা
সত্যি কথা ভাবো তো সব দোষ কি আমারই ছিলো? তাই যদি হবে তাহলে এখনো, এখনো আমি তোমার সাথে
লুকিয়ে যোগাযোগ রেখে যাচ্ছি কেন? কী করব তুমি বলে দাও, এবার অন্তত
বলো আমার কী করা উচিৎ? তোমার কাছে চলে যাবো? গ্রহণ করবে আমাকে?
ঠিক এখনই একটা হলদে পাখি এসে
বসেছে আমার সামনের সবেদা গাছটায়৷ হলদে পাখি দেখলে এখনো মন উড়ু-উড়ু করে। আর
আমার মন! তার কি কোনো মান আছে তোমার কাছে? তুমি কেবলই ভাবো আমি হ্যাঁ আমার জন্য সব কিছু উলটে-পালটে গেছে।
শুধু তোমাকে আমার মধ্যে বাঁচিয়ে রাখবো বলে মেয়ের নাম রেখেছি বর্না। এই ব অক্ষর যেন
আমৃত্যু থাকে আমার সাথে।
আজকাল স্লিপিং পিল না খেলে
ঘুম আসতে চায় না, মেয়েটাও পায়ে পায়ে
অনেকটা বড়ো হয়ে গেছে। আমার বাড়ির কেউ বুঝতেই পারে না যে আমি এই জীবনটাকে টেনে টেনে
নিয়ে যাচ্ছি কোনোমতে।
যতটা ভালো থাকা যায় তার বেশি
ভালো থেকো এই কামনায়
তোমার পর্ণা।
No comments:
Post a Comment