প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

দহন | মানুষকে মানুষের মূল্য দিন

বাতায়ন/দহন / কবিতা / ৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ ,   ১৪৩২ দহন   | সম্পাদকীয় "এর মধ্যেই আছে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা, সে-কোন সন্ত্রাসবাদীই হ...

Monday, May 19, 2025

আয় বৃষ্টি ঝেঁপে | মৌসুমী চক্রবর্তী

বাতায়ন/দহন/ছোটগল্প/৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
দহন | ছোটগল্প
মৌসুমী চক্রবর্তী
 
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে

"আজ দুপুর থেকেই খুউব বৃষ্টি হচ্ছেঅকাল বর্ষণ। শবনম বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছে। ভিজে যাচ্ছে ওর কাপড়। ফুলের টবগুলো থেকে ভেজা মাটির মিষ্টি গন্ধ বেরোচ্ছে। প্রাণভরে বৃষ্টি মাখছে শবনম।"


চিনে মাটির টবগুলো সব পাল্টে ফেলতে হবে। বড্ড গরম হয়ে যায় রোদে। গাছগুলোর ক্ষতি হচ্ছে। সেদিন পাশের বাড়ির যূথীকা বৌদি বলছিল,
-শবনম তোমার গাছগুলোকে মাটির টবে সরিয়ে দাও, কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে বেচারারা। মাটি খুউব সহিষ্ণু। বাড়তি তাপ শুষে নিয়ে দেখবে তোমার গাছগুলোকে কেমন সতেজ করে তুলেছে।
শবনম ভাবল তাপ কী কেবল প্রকৃতির বেড়েছে, মানুষের মাথা থেকে নিয়ে জিভ সব যেন আজকাল গরম চাটু। এত দহন কীসের?


ভাবতে ভাবতেই দরজায় ঘন্টি বেজে উঠল। মেয়ে ফিরল স্কুল থেকে। উফফ মেয়েটার কাণ্ড দেখো কেমন পাগলের মতো ঘন্টি বাজিয়েই চলেছে।

-খুলছি খুলছি। কী-রে হেঁটে আসতে দিবি তো! কী হয়েছে রে? এত শুকনো দেখাচ্ছে কেন তোকে?
জারিন কোন উত্তর দিলো না। বড় বড় দুটো টিফিনবক্স সিংকে নামিয়ে রেখে ঘরে গিয়ে সটান শুয়ে পড়ল। শবনম টিফিনবক্সগুলো খুলে দেখে লাচ্চা সিমাই পুরোটাই পড়ে রয়েছে। তাড়াতাড়ি ঘরে গিয়ে মেয়েকে জিজ্ঞেস করল,
-খায়নি বন্ধুরা? এত শখ করে নিয়ে গেলি? বলিসনি আমি বানিয়ে দিয়েছি, শুধু ওদের জন্যই।
-বলেছি আম্মা কিন্তু ওরা কেউ খেতে চায়নি, ওদের কারুর শিবপুজোর উপোস, কারুর পেট খারাপ আর কেউ কেউ ডায়েট করছে।
মা মেয়ে দুজনেই চুপ, কারুর মুখে কোন কথা নেই। শুধু ওদের চোখের ভাষায় একটাই প্রশ্ন – আমরা কী করেছি, আমাদের কী দোষ? নিস্তব্ধতা ভেদ করে শবনম মেয়েকে বলল,
-তোর আব্বুকে একটা ফোন কর তো, এখনো ফিরল না কেন লোকটা?
জারিন আব্বুর নম্বরটা মেলালো। ওপার থেকে রিয়াদ হোসেনের গলা শোনা গেলো।
-অফিসের শাটলটা আজ থেকে আর আমাকে নেবে না রে মামনি। বড্ড ঘেঁষাঘেষি হয়ে যাচ্ছিল বলে ওরা আমাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আম্মিকে বলে দে একটু দেরি হবে ফিরতে।
-ও মা! আজ কতগুলো জবা ফুটেছে গাছে।
শবনম চটপট হলুদ, লাল, সাদা সব রঙের কয়েকটা ফুল তুলে যূথিকা বৌদির বাড়ির বেল বাজাল। দরজা খুলে  বৌদি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে, ঢোক গিলে বলল,
-লাগবে না শবনম, পুজো দেওয়া হয়ে গেছে।
শবনম শুনল ঘরের ভেতর উচ্চস্বরে টিভি চলছে। সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদের ঘটনাটা নিয়ে কাটাছেঁড়া করছে বিশেষজ্ঞমণ্ডলী। টিভির আওয়াজ ছাপিয়ে যূথিকা বৌদির স্বামীর কণ্ঠস্বর শোনা গেলো,
-দরজাটা বন্ধ করে ভেতরে এসো। অফিসে যাওয়ার সময় এখন গল্প করতে এসেছে।
 
ভীষণ গুমোট ভাব। এই দহন আর সহ্য করা যাচ্ছে না। একটু বৃষ্টির খুউব দরকার। দিনের মধ্যে অনেকবার শবনম আকাশের দিকে তাকাল। আকাশের মুখ ভার। মেয়েটাও ঘরে মুখ ভার করে বসে আছে কদিন ধরে। কোন বন্ধুর ফোন আসে না ওর। ঠিক তখনই শবনমের ফোনটা বেজে উঠল। ফোন রেখেই মা-মেয়ে পাগলের মতো ছুট লাগলো। উদভ্রান্তের মতো দেখাচ্ছে দুজনকে। দিগ্‌বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল মা-মেয়ে। আর একটু হলেই যূথিকাদের গাড়িতে ধাক্কা লাগত। যুথিকার স্বামী গাড়ি থেকে নেমে চিৎকার করে উঠল,
-আত্মহত্যা করার শখ হয়েছে নাকি ভাবী?
-আসলে জারিনের বাবার হার্টঅ্যাটাক হয়েছে। অফিস থেকে ফোন এসেছিল।
-সে কী? গাড়িতে উঠুন তাড়াতাড়ি।
যূথিকা কাকে যেন ফোন করে বলে দিলো,
-আজ আসতে পারছি না, আমাদের প্রতিবেশী অসুস্থ। একা ফেলে যেতে পারব না।
জারিনের মনে পড়ল ওর বন্ধু মোনালিসার বাবা হার্ট সার্জন। টেক্সট করল মোনাকে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই মোনালিসার ফোন এলো।
 
বিশ্রামের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আজ থেকে রিয়াদ আবার অফিসে যাবে। অরুণ আঙ্কল ঠিকসময়ে অপারেশনটা না করলে আব্বুকে বাঁচানো যেত না। অফিসের শাটল গাড়িটা রিয়াদকে নিতে সময়ের একটু আগেই এসে গেছে। বাকিরা আজ ঘেঁষাঘেষি করে বসে রিয়াদের জন্য বেশি জায়গা রেখেছে। সদ্য সেরে উঠেছে বেচারা।
 
আজ দুপুর থেকেই খুউব বৃষ্টি হচ্ছে, অকাল বর্ষণ। শবনম বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছে। ভিজে যাচ্ছে ওর কাপড়। ফুলের টবগুলো থেকে ভেজা মাটির মিষ্টি গন্ধ বেরোচ্ছে। প্রাণভরে বৃষ্টি মাখছে শবনম। দহন জ্বালা নিভিয়ে দিতে, বৃষ্টি নামুক প্রাণের মাঝে।
 
সমাপ্ত

10 comments:

  1. Lekha ta khub sundor.. Chotto ei galpo ta onek kichu monekorie dilo..

    ReplyDelete
  2. Khub bhalo laglo Mousumi. Patience is very important. Seitai jeno Kothay hariye jacche manusher modhye.

    ReplyDelete
    Replies
    1. Anek dhanyabad। Naam jante parle bhalo lagto।

      Delete
  3. Khub shundor aekta anubhuti te mon chuye gaelo … opurbo lekha

    ReplyDelete
  4. অপূর্ব লিখেছো মৌসুমী দি 👌👌
    কী প্রাসঙ্গিক ❤️❤️

    ReplyDelete
  5. Khub sundor lekha........... poristhiti jai hok............ sohanubhuti o valobasha thakle manush er modhye somosto bibhed muchhe jai........golpo ta theke ai msg ta paowa galo

    ReplyDelete
  6. দারুণ আবেদনশীল গল্প! --জাকিয়া রহমান

    ReplyDelete

জাল— মাছ কাটতে না জানলেও কিছু মানুষ জানে


Popular Top 10 (Last 7 days)