বাতায়ন/ডিভোর্স/ছোটগল্প/৩য় বর্ষ/১০ম সংখ্যা/৯ই শ্রাবণ, ১৪৩২
ডিভোর্স
| ছোটগল্প
দীপ্তি
নন্দন
অপরিণামদর্শিতা
"বলাকার জন্মের সম্ভাবনা টের পাওয়ার পর থেকেই এই অশান্তির সূত্রপাত। সুমিতা এখনই সন্তান নিয়ে সংসারের ঝামেলা ঘাড়ে নিতে তৈরি ছিল না মোটেই। সে চেয়েছিল তার সংগীতসাধনাকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে।"
ছোট্ট বলাকা সুরঞ্জনের হাত ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। তার কচি হাত দুটি একটু দূরে গম্ভীর মুখে দাঁড়ানো সুমিতার দিকে বাড়িয়ে। কচি গালের উপর দিয়ে অশ্রুধারা বয়ে চলেছে। কান্নার দমকে ছোট্ট শরীরটা ফুলে ফুলে উঠছে। মুখে তার আধো আধো 'মা, মা' ধ্বনি!
কিন্তু তার মা কঠিন মুখে
অন্যদিকে তাকিয়ে। সে মনস্থির করেই এসেছে আর সে বাচ্চার কোনো ঝক্কি পোহাবে না।
আর গম্ভীর মুখে মেয়ের হাত
শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে সুরঞ্জনও পণ করেছে যাই ঘটে যাক না কেন সে মেয়েকে কিছুতেই ওর
মায়ের কাস্টডিতে দেবে না। জজসাহেবকে অনুরোধ করবে ওই কঠিন হৃদয় মায়ের কাছে যেন
মেয়ের ভার না দেওয়া হয়।
ঘটনাটা বেশ কিছুদিনের। বলাকার
জন্মের সম্ভাবনা টের পাওয়ার পর থেকেই এই অশান্তির সূত্রপাত। সুমিতা এখনই সন্তান
নিয়ে সংসারের ঝামেলা ঘাড়ে নিতে তৈরি ছিল না মোটেই। সে চেয়েছিল তার সংগীতসাধনাকে
আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে।
কিন্তু রক্ষণশীল বাড়ির চাপে
সাততাড়াতাড়ি বিয়ে আর শ্বশুরবাড়ির চাপে সন্তান ধারণ, এই দুটোই তার সম্পূর্ণ
অনিচ্ছাকৃত ছিল। আর এইদুটো কারণে তার সংগীতসাধনা বাধাপ্রাপ্ত হওয়াটাকে
সে মনে মনে মেনে নিতে পারছিল না কিছুতেই। আর তাই তাদের সংসারে নিত্য অশান্তি লেগেই
ছিল।
গতকাল রাত্রে সেই অশান্তি
পৌঁছেছিল চরমে। সুরঞ্জন মেজাজ হারিয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিল,
-তুমি কী চাও, বলতো? মুক্তি তো?
-হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি মুক্তি চাই
এই সংসার, সন্তান এইসব ঝঞ্ঝাট ঝামেলার
হাত থেকে রেহাই পেতে চাই।
-তোমার কি এই ছোট্ট মেয়েটার প্রতিও কোনো মায়ামমতা নেই? এ তো তোমার নিজের সন্তান!
-না নেই। আমার ওর ওপর কোনো টান নেই। আমি কি চেয়েছিলাম ওকে? সেটা তো তোমার বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছিল, তাই ওর জন্ম হয়েছে। ব্যস, এখানেই আমার সব দায়িত্ব, কর্তব্য শেষ! এখন
বাচ্ছা যাঁরা চেয়েছিলেন, তাঁরাই ওর দায়িত্ব
নিক না!
সুমিতার ঝাঁঝাল গলার কথাগুলো
শুনে স্তম্ভিত সুরঞ্জন! শুধু নিজের শখ আর কেরিয়ার গড়ার জন্য, কোনো মা কি এরকম কথা বলতে পারে! মুখে শুধু বলে,
-বেশ, তুমি যা চাইছ, তাই হবে। কাল সকালেই আমরা একজন উকিলবাবুর কাছে যাব, আমাদের ডিভোর্স স্যুট ফাইল করার আবেদন নিয়ে, আর তারপর আদালতে।
পরদিন সকালে দম্পতিটি আদালতের
দরজায় অপেক্ষা করছিল তাদের ডিভোর্সের আবেদন নিয়ে। দুজনেই তাদের জেদ বজায় রাখতে
বদ্ধ পরিকর। আর পাশে দাঁড়িয়ে ছোট্ট দুধের শিশুটি কেঁদে আকুল হচ্ছিল। তার তো আর তার
বাবা, মায়ের এই মনোমালিন্যের কথা
জানার বা বোঝার বয়স হয়নি। তার যে মা আর বাবা দুজনকেই চাই! তার কী উপায় হবে
অনাগত ভবিষ্যৎ জীবনে? সে তো নির্দোষ!
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment