রম্যরচনা
প্রদীপ কুমার দে
সমাপ্তিকরণ
ঝিঙাফুল
সিরিজ-২০ (অন্তিম পর্ব)
"ফুলঝুরি দৌড়ে এল, এসেই লাজলজ্জার মাথা খেয়ে আনন্দে আমাকে জড়িয়ে ধরল,"
আর কিছু করার ছিল না। যদিও পুরুষ মানুষ তবুও… সঙ্গে একটা যুবতী বউ আছে না? তার কথা না মানলেই, 'নাচ উঠে সংসার' মানলে সোনায় সোহাগা, ঘরজামাই আপাতত, পরে ভাত দেবে, না লাথ দেবে, অতশত জানি না। আমার দুকূলে কোথাও কেউ নাই তাই বউয়ের কথায় আমি ঘরজামাই।
তবে একটা
কথা ঠিকই এটা শহর নয়,
গ্রাম। শহরের লোক দেখানো আদিখ্যেতা এখানে নেই। কিন্তু একটা আলাদা ভালোবাসা
আছে— যদিও দিন দিন তাও হারাচ্ছে সর্বত্রই। তবুও আমার ভালোবাসা তো আপাতত আমার
সঙ্গেই আছে, সে
আমার ঠকে শেখা একটিমাত্র বউ ঝিঙাফুল!
বাড়িতে
চিৎকার চেঁচামেচি, পাখিরা
পর্যন্ত ভীত। কী না আমরা তিনজনে একসাথে সেখানে গেছি। আমি
প্রথমটা একটু লজ্জায় ছিলাম কিন্তু আমার
শ্যালজ বউ একছুটে আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে ওর সব পাড়াতুতো বউদের নিয়ে এমন আদরযত্ন
শুরু করে দিল যেন আমি কোন দেবতা স্বর্গ থেকে খসে পড়েছি।
শালা কাম
বন্ধু পুস্পেন্দু আমায় ভালোবাসে। শাশুড়িমাকে ডেকে
ভালো সমাধান করে দিল।
-মা, জামাইবাবুকে
রাস্তার ধারের জমিটা লিখে দাও। ও ভালো টাকা পেয়েছে, তাই দিয়ে ঘরবাড়ি বানিয়ে নিক। চাষাবাদ
সরাসরি না করে দেখাশোনা করুক, আপাতত খাওয়াদাওয়া একসঙ্গে করুক, এখন যখন
দিদির এই অবস্থা।
ফুলঝুরি
একেবারে লাফিয়ে,
-না না
জামাইবাবুকে আমি রেখে দেব।
পুস্পেন্দু
মহাশয়তান,
-দাঁড়াও ও
এখন একটা করেই কেলিয়ে আছে।
ফুলঝুরি
চেঁচায়,
-তুমি তো তাও
পারোনি এখনও, তাতেই
কেলিয়ে।
শাশুড়িমা কেটে পড়ে। বউগুলো সব আমার উপর হামলে পড়ে কারণ আমি নাকি করিতকর্মা এমনই এক পুরুষ, যা তাদের স্বামীরা নয়। এইজন্য
ঝিঙাফুল এত খুশি। গ্রামের শ্রেষ্ঠ জামাই! সবার লোভনীয় তাই—
এরকমভাবে
আমার সময় কাটছে। লজ্জায় ঝিঙাফুলের কাছে যাই না। রাতে ওর পেটে হাত বুলিয়ে অনুভব
করার চেষ্টায় থাকি,
নতুন প্রজন্মের খবরাখবর কী? নিজের বাড়িতে এসে ঝিঙা আমার উপর ওর
খবরদারি বাড়িয়ে দিয়েছে,
ওর সব দুষ্টুমি মেনে নিতে হচ্ছে।
-কেমন লাগছে? বেশ মজায় তো
আছো?
-এখন উত্তর
দেবো না। তবে উত্তর পাবে।
আমার কথায়
ঝিঙাফুল ভয় পায়। আমাকে চেপে ধরে,
-পালিয়ে
যাবে না কি? পালিয়ে
গেলে বলো আমিও তোমার সাথেই যাবো।
সুযোগ পেলে
আমিও ছাড়ি না। ঝিঙাফুলকে বুঝিয়ে দিই আমার পৌরুষত্ব আমার ক্ষমতা, তাতে ও
আমাকে আরো জড়িয়ে ধরে চোখ বোঁজে, আদর খেতে খেতে কানটা আমার কানের কাছে এনে অস্ফুটে বলে,
-সাবধানে
কিন্তু, বাচ্চা
আছে পেটে...
মানসিক
প্রস্তুতি নিয়ে দুইমাসের মধ্যে সব কাজ শেষ করি।
-কী কাজ?
অফিসের টাকা, ফ্ল্যাট
বিক্রির টাকা, সঞ্চিত
টাকা মিলিয়ে কম ছিল না। শাশুড়িমাকে জোর করে টাকা দিয়ে জমি নিই।
পুস্পেন্দু আর ফুলঝুরি খুব ভালো। ওরা সব বুঝে আমাকে খুব সাহায্য করে যাতে আমি মাথা
তুলে বাঁচতে পারি। নিজের কাছে, প্রতিবেশীদের কাছে যাতে ছোট না হই
তার জন্য ওরা খুব ভাল বন্ধুর মতো উপকার করেছে শুধু একটাই স্বার্থে, তা হল এক
সাথে পাশাপাশি থাকার পাকাপোক্ত একটা ব্যবস্থা করে ফেলা। মানুষ কতরকম হয়! ভালো
মানুষ এখনও আছে। আমি ওদের কাছে কৃতজ্ঞ। ঝিঙাফুল খুব খুশি।
গৃহ
প্রবেশের পর থেকে সবাই এখানেই থাকে। ঝিঙাফুল যে এখানেই মা হবে... সুন্দর বাড়ি তাই
কষ্ট করেও ঝিঙাফুল সাজায়। সবাই ওকে সামলে রাখে।
আমি আমার
জন্য কাজের ব্যবস্থাও করে ফেলি। চাষাবাদ দেখি আর বাড়ির নীচে বড় গোডাউনসহ চাষকৃত
সারের দোকান দিই। পাকাপোক্তভাবে নিজেকে গুছাই এই ভেবেই যে জীবনটা শুধুই মজার নয়
কাজেরও। তবে কাজের মধ্যে রম্যতা না থাকলে জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।
সময় আসীন
হয়। বাড়ি ভর্তি জনসমাগম। ঝিঙাফুলে প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছে। আমারও কষ্ট হচ্ছে।
চিৎকার, চেঁচামেচি
আর তার মধ্যেই শিশুর ক্রন্দনধ্বনি কানে এল। উলুধ্বনি আর শাঁখের আওয়াজে রোমাঞ্চিত হলাম।
ফুলঝুরি
দৌড়ে এল, এসেই
লাজলজ্জার মাথা খেয়ে আনন্দে আমাকে জড়িয়ে ধরল,
-মা হওয়া কী মুখের কথা?
তবে জামাইবাবু আপনার ক্ষমতা আছে বলতেই হবে, এক্কেবারে যমজ? দু দুটো? তাও একটি
ছেলে আর অন্যটি মেয়ে?
কী করে পারলেন?
উত্তর দিতে
অক্ষম ছিল জামাই রতনচাঁদ।
সিরিজ সমাপন
অনেক আনন্দ দিলেন। সম্পাদকের সুস্থতা কামনাই এখন আমার একমাত্র চাহিদা। ভাল থাকুন, ভাল কাজ করুন।
ReplyDelete❤️🌿🌹❤️🌿🌹❤️